সিরিজঃ Pre-treatment of Wet Process
পর্বঃ-৩ঃ ডিসাইজিং (DESIZING)
সুতা তৈরী করার সময় সুতার শক্তি বৃদ্ধিকরণের জন্য কিছু সাইজ এজেন্ট যুক্ত করা হয়। এই সাইজ এজেন্টসমূহ সুতার গায়ে প্রলেপ দেওয়া হয়। সুতা দিয়ে যখন কাপড় বোনা হয় তখন ফ্যাব্রিকের পৃষ্ঠে সেই সাইজ এজেন্টসমূহ থেকে যায় যা পরবর্তীতে ডাইং এবং প্রিন্টিং এ মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করে। এর ফলে অনেক সময় ফ্যাব্রিকসমূহ বাতিল হয়ে যেতে পারে। তাই ফ্যাব্রিক থেকে সাইজ এজেন্টসমূহ অপসারণ করা খুবই জরূরী।
যে প্রক্রিয়ায় ফ্যাব্রিক হতে সাইজ এজেন্ট যেমন স্টার্চ, সেলুলোজ, প্রোটিন , পলিএস্টার ,স্টাইরিন ইত্যাদি জাতীয় অপদ্রব্য অপসারণ করা হয়ে সেটিই ডিসাইজিং নামে পরিচিত। ডিসাইজিং এজেন্ট বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
প্রাকৃতিক সাইজিং এজেন্টঃ
১) স্টার্চ এবং স্টার্চ এর ডেরিভেটিভ
২) সেলুলোজ
৩) প্রোটিন জাতীইয় স্টার্চ ।
সিন্থেটিক সাইজিং এজেন্টঃ
১) পলিএক্রাইলিক (Polyacrylic)
২) পলিএস্টার (Polyester)
৩) পলিভিনাইল এলকোহল (Polyvinyl Alcohol)
৪) স্টাইরিন (Styrene)
☑ ডিসাইজিং এর উদ্দেশ্যঃ
১) ফেব্রিক থেকে স্টার্চ জাতীয় উপাদান অপসারণ করে।
২) ফ্যাব্রিক হতে বিভিন্ন সাইজিং উপাদান দূর করে।
৩) ফ্যাব্রিক এর শোষণ শক্তি বৃদ্ধি করে।
৪) ফ্যাব্রিকের উজ্জলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
৫) ফ্যাব্রিকের প্রতি ডাইং ক্যামিকেলসমূহের আকর্ষন বৃদ্ধি করে।
৬) ফ্যাব্রিকসমূহকে পরবর্তী ধাপের জন্য প্রস্তুত করে ।
☑ ডিসাইজিং এর প্রকারভেদঃ
১) হাইড্রোলাইটিক ডিসাইজিং (Hydrolytic Desizing).
২) অক্সিডেটিভ ডিসাইজিং (Oxidative Desizing).
☑ হাইড্রোলাইটিক ডিসাইজিং চারটি উপায়ে করা যেতে পারেঃ
ক) রট স্টিপিং প্রক্রিয়া (Rot Steeping Method)
এটি খুব পুরাতন এবং সস্তা পদ্ধতি কারণ এখানে কোনপ্রকার ক্যামিকেল ব্যাবহার করা হয় না । এই প্রক্রিয়া ফ্যাব্রিকসমূহকে ৪০-৬০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় পানিতে ভিজিয়ে রেখে দেওয়া হয় । ফ্যাব্রিকে বিদ্যমান স্টার্চসমূহ পানিতে পচে ফ্যাব্রিক হতে আলাদা হয়ে যায় । এই প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক ক্রিয়া বিক্রিয়ার মাধ্যমে ফ্যাব্রিক হতে অপদ্রব্য অপসারণ করা হয় ।
সুবিধাঃ
১) সস্তা পদ্ধতি।
২) কোন এনজাইম কিংবা ক্যামিকেল ব্যাবহার করতে হয় না।
৩) কম ওজন হ্রাস পায়।
অসুবিধাঃ
১) দীর্ঘ সময় এর প্রয়োজন হয়।
২) তাপমাত্রা কমবেশি হলে ফ্যাব্রিকের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।
খ) অ্যালকালি স্টিপিং প্রক্রিয়া (Alkali Steeping Method)
এই প্রক্রিয়ায় ক্ষারীয় হাইড্রোলাইসিস এর মাধ্যমে অপদ্রব্য অপসারণ করা হয়ে থাকে । এই প্রক্রিয়ায় ০.৪-০.৬% সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড এর দ্রবণে ৮-১০ ঘন্টা সময় ধরে ফ্যাব্রিকসমূহকে রাখা হয় । দ্রবনের তাপমাত্রা হয় ৬০-৭০ সেন্টিগ্রেড । ফলে ফ্যাব্রিকের পৃষ্ঠ হতে স্টার্চ জাতীয় অপদ্রব্য দূরীভূত হয় ।
সুবিধাঃ
১) অপেক্ষাকৃত কম সময় প্রয়োজন।
২) সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড দ্বারা সহজেই কাজটি করা যায়।
অসুবিধাঃ
১) স্টিপিং চলাকালীন ফ্যাব্রিক শুকিয়ে গেলে সমস্যা হয়।
২) বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় ।
৩) এসিড স্টিপিং প্রক্রিয়া (Acid Steeping Method)
গ) এসিড স্টিপিং প্রক্রিয়াঃ (Acid Steeping Method)
এসিড স্টিপিং প্রক্রিয়া বর্তমানে বহুল ব্যাবহৃত একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় লঘু সালফিউরিক এসিড ব্যাবহার করা হয়। লঘু সালফিউরিক এসিড মিশ্রিত দ্রবণে ৩০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ৮-১২ ঘন্টা ফ্যাব্রিকসমূহকে রেখে দেওয়া হয়। ফলে ফ্যাব্রিকে দ্রবীভূত স্টার্চসমূহ তরল হয়ে বের হয়ে আসে এবং ডিসাইজিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
সুবিধাঃ
১) চমৎকার ডিসাইজিং পাওয়া সম্ভব।
২) কম জায়গার প্রয়োজন হয়।
৩) সময় কম প্রয়োজন হয় ।
অসুবিধাঃ
১) অতিরিক্ত ওজন হ্রাস পায়।
২) অপেক্ষাকৃত ব্যায়বহুল প্রক্রিয়া।
৩) পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক ।
ঘ) এনজাইম ডিসাইজিং প্রক্রিয়া (Enzymatic Desizing Method)
এটি সর্বাধিক জনপ্রিয় এবং ব্যাবহৃত প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন প্রকারের এনজাইম ব্যাবহার করা স্টার্চজাতীয় পদার্থ অপসারণের জন্য। এনজাইমসমূহ জটিল জৈব যৌগ, দ্রবণীয় জৈব-অনুঘটক, যা জীবিত প্রাণীর দ্বারা গঠিত জৈবিক প্রক্রিয়াগুলিতে রাসায়নিক বিক্রিয়ার অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। এনজাইমসমূহ কোনও নির্দিষ্ট পদার্থের উপর তাদের ক্রিয়াতে অল্প পরিমাণে এনজাইম বড় পলিমার অণুকে পচে যেতে বাধ্য করে ।
অ্যামাইলেস এনজাইমসমূহ যা স্টার্চে অ্যামাইলেস এবং অ্যামাইলোস্পেকটিন অণুর আণবিক ওজনকে হাইড্রোজ করে এবং এটি ফ্যাব্রিকটি হতে সকল প্রকার স্টার্চ জাতীয় পদার্থ দূর করে দেয় ।
☑ ব্যাবহৃত কিছু এনজাইমের নামঃ
১) Animal origin: Viveral, Degomma, waste pancrease, cotted blood, liver etc.
২) Vegetable origin:
ক) Malt extract: Diastator, diastase, malt ostase etc.
খ) Bacterial: Rapidase, biolase, Taka etc.
☑ শর্তসমূহঃ
Animal Origin:
ঘনমাত্রা ১-৩ গ্রাম/লিটার
তাপমাত্রা ৫০-৬০ সেলসিয়াস
PH: ৬-৭.৫
Malt extract: ঘনমাত্রা ৩-১৮ গ্রাম/লিটার
Bacterial: ঘনমাত্রা ১ গ্রাম/লিটার
সুবিধাঃ
১) সর্বাধিক ব্যাবহৃত প্রক্রিয়া।
২) পরিবেশের কোন ক্ষতি করে না ।
৩) চমৎকার ডিসাইজিং পাওয়া যায় ।
৪) কম সময়ে ডিসাইজিং হয়ে যায় ।
☑ অক্সিডেটিভ ডিসাইজিং নিম্নোক্ত কয়েকটি উপায়ে করা যেতে পারেঃ
১) ক্লোরিন ডিসাইজিং
২) ক্লোরাইট ডিসাইজিং
৩) ব্রোমাইড ডিসাইজিং
অক্সিডেটিভ ডিসাইজিং মূলত কটন ফাইবারের ক্ষেত্রে ব্যাবহার করা হয়ে থাকে । এই প্রক্রিয়ায় ক্লোরিন , ব্রোমিন এর জারন বিক্রিয়ার মাধ্যমে ফেব্রিক এর পৃষ্ঠ হতে স্টার্চ জাতীয় উপাদান দূর করা হয়ে থাকে ।
সুবিধাঃ
১) স্টার্চসমূহ ভালোভাবে অপসারণ করা সম্ভব
২) ফ্যাব্রিক অধিকতর পরিষ্কার হয় ।
অসুবিধাঃ
১) ফাইবার আক্রমণের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
২) আক্রমনাত্মক রাসায়নিক উপাদানের ব্যাবহার।
৩) ফ্যাব্রিকে স্পট তৈরী হতে পারে ।
☑ ডিসাইজিং এর দক্ষতার কিছু ফ্যাক্টরঃ
১) সাইজ এজেন্টসমূহের প্রকার এবং পরিমাণ।
২) সাইজ দ্রবণসমূহের সান্দ্রতা।
৩) ফ্যাব্রিক এর গঠন।
৪) ডিসাইজিং এর প্রক্রিয়া।
৫) ওয়াশিং অফ এর প্রক্রিয়া।
Writer:
Tanjidur Rahman Sakib
Department of Apparel Engineering
Sheikh Kamal Textile Engineering College
Campus Ambassador (Textile Engineers).