Thursday, November 27, 2025
Magazine
HomeBTMA, BGMEA & BKMEAটেক্সটাইল কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা

টেক্সটাইল কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা

ক্সটাইল শিল্প বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শিল্প খাত, যা দেশের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই শিল্প দেশের মোট রপ্তানি আয়ের একটি বড় অংশ জোগান দেয় এবং লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে। তবে টেক্সটাইল কারখানাগুলোতে বিভিন্ন ধরণের যান্ত্রিক, বৈদ্যুতিক, রাসায়নিক ও অগ্নি ঝুঁকি থাকার কারণে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই টেক্সটাইল কারখানায় একটি কার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা অপরিহার্য।

ঝুঁকি মূল্যায়ন ও পরিকল্পনা

প্রথমেই কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার মূল ধাপ হলো ঝুঁকি সনাক্তকরণ ও মূল্যায়ন। প্রতিটি উৎপাদন ইউনিটে যেমন—স্পিনিং, ডাইং ও ফিনিশিং—ভিন্ন ভিন্ন ঝুঁকি বিদ্যমান। যেমন, যন্ত্রপাতির কারণে দুর্ঘটনা, আগুন লাগা, রাসায়নিক পদার্থে দগ্ধ হওয়া বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা ইত্যাদি। এসব ঝুঁকি চিহ্নিত করে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং নিয়মিত পরিদর্শনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

যন্ত্রপাতি ও মেশিন নিরাপত্তা

টেক্সটাইল কারখানায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে যন্ত্রপাতি সংক্রান্ত ত্রুটির কারণে। তাই প্রতিটি মেশিনে সুরক্ষা গার্ড, সেন্সর এবং ইমারজেন্সি স্টপ বাটন থাকতে হবে। অপারেটরদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে যাতে তারা মেশিন চালানোর সময় সঠিক নিয়ম মেনে চলে। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও সার্ভিসিংয়ের মাধ্যমে মেশিনের ত্রুটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।

অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা

কারখানায় প্রচুর দাহ্য পদার্থ যেমন তুলা, সুতা ও রাসায়নিক দ্রব্য থাকার কারণে আগুনের ঝুঁকি বেশি থাকে। এজন্য অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র, ফায়ার অ্যালার্ম, এবং জরুরি নির্গমন পথ থাকতে হবে। প্রতিমাসে অন্তত একবার ফায়ার ড্রিল আয়োজন করা উচিত, যাতে কর্মীরা জরুরি অবস্থায় দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে। কারখানায় কেন্দ্রীয় মাইক সিস্টেম সংস্থাপন করা।  ফ্লোরে, সিড়ির গোড়ায়, স্টোরে ব্যাটারী চালিত ইমার্জেন্সি লাইট সংস্থাপন করা।

কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি

নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার অন্যতম মূল উপাদান হলো কর্মীদের প্রশিক্ষণ। নতুন কর্মীদের কাজ শুরু করার আগে নিরাপত্তা সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া উচিত। নিয়মিত প্রশিক্ষণ, সেমিনার এবং পোস্টারের মাধ্যমে শ্রমিকদের সচেতনতা বাড়ানো যায়। কারখানার প্রতিটি শ্রমিককে কাজের ধরন অনুযায়ী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম যেমন—হেলমেট, গ্লাভস, সেফটি বুট, মাস্ক ও কান রক্ষাকারী ব্যবহার করতে হবে। ডাইং ও প্রিন্টিং সেকশনে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ অনেক সময় মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এসব পদার্থ নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে এবং কর্মীদের জন্য গ্লাভস, মাস্ক, অ্যাপ্রন ও সুরক্ষা চশমা বাধ্যতামূলক করতে হবে। বায়ু চলাচলের সঠিক ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে বিষাক্ত গ্যাস বা ধোঁয়া জমে না থাকে। এছাড়া, প্রতিটি রাসায়নিকের জন্য “সেফটি ডাটা শিট” প্রদর্শন করা উচিত।

বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা

বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়, যেমন স্পিনিং, উইভিং, ডাইং এবং ফিনিশিং মেশিন। তাই কারখানায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ইউনিটে ঝুঁকি মূল্যায়ন করে সার্কিট ব্রেকার, মানসম্মত কেবল ব্যবহারের মাধ্যমে শর্ট সার্কিট, ওভারলোড বা বৈদ্যুতিক শক প্রতিরোধ করা যায়। শ্রমিকদের বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যাতে তারা মেশিন চালানোর সময় সঠিক নিয়ম মেনে চলে । বৈদ্যুতিক কারণে আগুন লাগার ঝুঁকি কমাতে ইমারজেন্সি লাইটিং এবং নিয়মিত ফায়ার ড্রিল নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও, ফার্স্ট এইড ব্যবস্থা এবং নিকটস্থ হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা রাখা জরুরি। সঠিক বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা বজায় রাখলে শ্রমিকদের জীবনরক্ষা হয়, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং একটি টেকসই, নিরাপদ ও আধুনিক টেক্সটাইল শিল্প প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়।

প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা

কারখানায় একটি নিরাপত্তা কমিটি থাকা উচিত, যারা নিয়মিত নিরাপত্তা অডিট করবে। বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এবং আন্তর্জাতিক মান (ILO, ISO, OHSAS) অনুযায়ী নিরাপত্তা বিধান অনুসরণ করতে হবে। পাশাপাশি, শ্রমিকদের অভিযোগ ও পরামর্শ গ্রহণ করে তা দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে।

তথ্যসূত্র
1.উইকিপিডিয়া 

  1. https://textilelab.blogspot.com/2019/05/blog-post_14.html
  2. https://seip-fd.gov.bd/wp-content/uploads/2022/10/TA_Compliance-and-HR-in-Textiles.pdf

লেখক
Mrinmoy Kumar Das
NITER
Fahimul Islam
NITER

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related News

- Advertisment -

Most Viewed