দেশীয় অর্থনীতিতে অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি আমাদের টেক্সটাইল শিল্প।এ শিল্পে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়।১৯৭১ সালে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশের শিল্পখাত কিভাবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক শিল্পে পরিণত হল তা একটি অনপ্রেরনামূলক ইতিহাস।এ শিল্পের সম্প্রসারণ বাংলাদেশের সমাজে বিশেষ করে নারীসমাজ ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে।
শ্রমিকদের জীবনঝুঁকির কারণ
বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পে অনেক শ্রমিক প্রতিদিন কঠিন পরিবেশে কাজ করেন। বেশিরভাগ কারখানায়ই দেখা যায় পর্যাপ্ত আলো, বাতাস ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা না থাকার অভাবে শ্রমিকরা শ্বাসকষ্ট, ত্বকের রোগসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভোগেন।তাছাড়া বিশ্রামের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় শ্রমিকদের শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে যান এবং তাদের কাজ করার ইচ্ছা ও কমে যায়।এমন অনুপযুক্ত কর্মপরিবেশ তাদের স্বাস্থ্য ও জীবনের জন্য প্রধান সমস্যার কারণ হয়ে দাড়ায়।
বেশিরভাগ সময়ই শ্রমিকদের বেতন সংক্রান্ত নানা ধরনের অন্যায় দেখা যায়। অনেক শ্রমিক ন্যায্য মজুরি পান না, আবার অনেকে মাসের শেষে সময়মতো বেতনও পান না। অতিরিক্ত সময় কাজ করানোর পরেও ওভারটাইমের টাকা দেওয়া হয় না। এর পাশাপাশি অনেক কারখানায় ছুটির দিনেও কাজ করাতে বাধ্য করা হয়, কিন্তু সেই অনুযায়ী পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না। মালিকরা শ্রমিকদের বেতন কমিয়ে দেন বা অযথা কেটে রাখেন, যা শ্রমিকদের জীবনে চরম হতাশা তৈরি করে। ফলে তাদের পরিবার চালানো, সন্তানদের পড়াশোনা করানো এমনকি মৌলিক চাহিদা পূরণ করা বেশ কঠিন হয়ে দাড়ায়।
রানা প্লাজা দুর্ঘটনা বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পের ইতিহাসে একটি ভয়াবহ ও মর্মান্তিক ঘটনা। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে অবস্থিত নয়তলা ভবনটি ধসে পড়ে এবং সেই দুর্ঘটনায় ১১৩৫ জন বেশি শ্রমিক নিহত হন এবং হাজারো শ্রমিক গুরুতর আহত হন। ভবনে ফাটল দেখা দেওয়ার পরও মালিকপক্ষ শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করেছিল, যা এই বিপর্যয়ের মূল কারণ ছিল। এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে, অনেক পোশাক কারখানায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হয়।
টেক্সটাইল শিল্পে নারী শ্রমিকদের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখের বেশি।কিন্তু তাদের কাজ করা এখন অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। তারা বেশিরভাগ সময় পুরুষদের তুলনায় কম বেতন পান এবং পদোন্নতির সুযোগও সীমিত থাকে। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়, ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি থাকে। অনেকসময় নারী শ্রমিকরা হয়রানি ও শ্লীলতাহানির শিকার হন। এছাড়া মাতৃত্বকালীন ছুটি ও স্বাস্থ্যসেবা ঠিকভাবে না পাওয়ায় শারীরিক ও মানসিক চাপ বেড়ে যায়। সব মিলিয়ে তাদের জীবনমান ও কাজের পরিবেশ মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়।
সমাধানের উপায়
এই অবস্থা বদলাতে হলে, দীর্ঘমেয়াদে ভাবতে হবে। সরকারকে কঠোর নিয়ম-কানুন আনতে হবে, শ্রমিক সংগঠনগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। নিরাপদ কর্মস্থল তৈরি, সঠিক স্বাস্থ্যসেবা, আর ন্যায্য মজুরি—এসব নিশ্চিত করা খুব দরকার। আর হ্যাঁ, কারখানায় সুরক্ষা নিয়ে আরও বেশি প্রশিক্ষণ আর কর্মশালা দরকার, যাতে শ্রমিকরা নিজেরা বুঝতে পারেন কোন ঝুঁকি কোথায় আছে, কীভাবে সচেতন থাকতে হয়। কাজের সময় আর বিশ্রামের ব্যাপারেও নজর দেওয়া জরুরি। আসলে, টেক্সটাইল শ্রমিকদের জীবনঝুঁকি এখন শুধু ব্যক্তিগত নয়, এটা সামাজিক আর অর্থনৈতিক বড় সমস্যা। এই সমস্যার সমাধান হলে, দেশের টেক্সটাইল শিল্পও টেকসইভাবে এগোবে, শ্রমিকদের জীবনও ভালো হবে।
তথ্যসূত্র
1.উইকিপিডিয়া
2.বাংলা ট্রিবিয়ন
3.JagoNews24 – জাতীয় মজুরি ও জীবনযাত্রা সংবাদ
4.পোশাক-শিল্পে-শ্রমিকদের-সংগ্রাম-ও-সম্ভাবনা/BD Platform for SDGs – বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প ও শ্রমিক ভবিষ্যৎ চিন্তা (PDF)
লেখক
মিফতাহুল জান্নাত
Niter
মোস্তাকিম হুসাইন
GTEC

