Thursday, March 28, 2024
More
    HomeDyeingডাইং এর খুঁটিনাটি

    ডাইং এর খুঁটিনাটি

    টেক্সটাইল ওয়েট প্রসেসিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে ডাইং । চলুন জেনে নেই ডাইং সম্পর্কে কিছু তথ্যঃ

    ◾ডাইং

    যে পদ্ধতির মাধ্যমে টেক্সটাইল দ্রব্যসমূহ অর্থাৎ সুতা, কাপড় ইত্যাদি রং করা হয় তাকে ডাইং বলে । ডাইং সাধারণত রং এবং কিছু রাসায়নিক পদার্থ সহযোগে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। ডাইং করার পরে, রং এর অণুসমূহ কাপড়ের সুতার অণুসমূহের সাথে বন্ধন গঠন কর । এর মাধ্যমে কাপড় তার কাঙ্খিত রং ধারণ করে । বন্ধন দুর্বল হবে না শক্তিশালী হবে সেটা নির্ভর করে কি ধরনের রং ব্যবহার করা হবে তার ওপর । তাপমাত্রা এবং সময়-নিয়ন্ত্রণ এ দুটি বিষয় ডাইংয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । ডাইংয়ে দুই ধরনের রং ব্যবহার করা হয় : ১. প্রাকৃতিক এবং ২. কৃত্রিম।

    ডাইংয়ে যেসব মৌলিক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় সেগুলো হলোঃ

    ১.অ্যাসিটিক এসিড ।
    ২.অক্সালিক এসিড ।
    ৩.সোডা অ্যাস ।
    ৪.সোডিয়াম হাইপ্লো-ক্লোরাইট ।
    ৫.সালফিউরিক এসিড ।

    সাধারণত সাঁত ধরনের ডাইং করা হয়ে থাকে । সেগুলো হলোঃ

    ➡সলিউশন ডাইং ( Solution Dyeing)
    ➡ফাইবার ডাইং (Fibre Dyeing)
    ➡ইয়ার্ণ ডাইং (Yarn Dyeing)
    ➡ফ্রেবিক ডাইং (Fabric Dyeing)
    ➡ইউনিয়ন ডাইং (Union Dyeing)
    ➡ক্রস ডাইং (Cross Dyeing)
    ➡প্রোডাক্ট ডাইং (Product Dyeing)।

    সোলিউশন ডাইং: সলিউশন ডাইং ডোপ বা স্পূন ডাইং নামেও পরিচিত । এই ডাইংয়ে রঞ্জক পদার্থসমূহ কিংবা অদ্রবণীয় রংসমূহ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সাধারনত যেসব ফাইবার ডাইং করা কষ্টসাধ্য শুধুমাত্র সেগুলোতে এই ডাইং করা হয় । যেমন -অলেফিন ফাইবারসমূহ ডাইং করা হয় এই ডাইংয়ের মাধ্যমে । সলিউশন ডাইং সম্পন্ন ফাইবারসমূহ অধিক কালার ফার্স্ট সম্পন্ন হয়ে থাকে আলো,ধৌতকরণ, আর্দ্রতা, ব্লিচিং ইত্যাদি যে কোনো পর্যায়ে । তবে এই ডাইং ব্যয়বহুল কারণ প্রতিক্ষেত্রে ভিন্ন রং ব্যবহার করার পর যন্ত্রপাতিসমূহ ধৌত করতে হয় ।

    ফাইবার ডাইং: ফাইবার ডাইং হচ্ছে স্টক ডাইং,টপ ডাইং এবং টো ডাইং এই তিনভাগে বিভক্ত ।

    🔸 স্টক ডাইং: এটি হলো অপক্ক ফাইবার ডাইং করার পদ্ধতি। ফাইবারসমূহ মিশ্রিত এবং স্পিনিং করে সুতা উৎপাদিত করার আগে এই ডাইং করা হয় ।

    🔹 টপ ডাইং: এটি হলো উলের পশমি সুতা ডায়িং করার প্রক্রিয়া । ডাইং করার আগে ফাইবারসমূহ সোজা সারিবদ্ধ করে সাজানো হয় এবং ছোট ফাইবারসমূহ বাদ দেয়া হয় । যে পদ্ধতিতে ছোট ফাইবারসমূহ বাদ দেয়া হয় তাকে কম্বড্ প্রক্রিয়া বলে।

    🔸 টো ডাইং: এটি হচ্ছে আঁশ জাতীয় ফাইবার রং করার প্রক্রিয়া । টো ডাইং করা হয় ফাইবারসমূহ ছোট স্টেপল ফাইবারে পরিণত করার আগে। রং এর তীক্ষ্ণতা অনেক বেশি হয় এই ফাইবার ডাইংয়ে। তার কারন প্রচুর পরিমাণ রং ব্যবহার করা হয় ফাইবার ডাইংয়ে। যার ফলে ফাইবার ডাইংয়ে খরচ তুলনামূলক বেশি ইয়ার্ণ,ফেব্রিক এবং প্রোডাক্ট ডাইংয়ের চেয়ে । ফাইবার ডাইং সাধারণত উল এবং অন্যান্য ফাইবারগুলোতে করা হয় যেগুলো দুই বা ততোধিক রংয়ের সুতা তৈরীতে ব্যবহার করা হয়।

    ইয়ার্ণ ডাইং: ইয়ার্ণ ডাইং হচ্ছে সুতা পর্যায়ে রং করার পদ্ধতি । স্কেইন, প্যাকেজ, বীম এবং স্পেস ডাইং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় সুতাসমূহ রং করতে ।

    🔹 স্কেইন ডাইংয়ে সুতাসমূহ কুন্ডলী বা জট পাকিঁয়ে রং করা হয় । এই পদ্ধতি খুবই ভালো ইয়ার্ণ ডাইংয়ের জন্য । কিন্তু এই পদ্ধতি খুবই ধীরগতির এবং ব্যয়বহুল ।

    🔸 প্যাকেজ ডাইংয়ে সুতা ছির্দ্রযুক্ত রিলে নিয়ে চাপনিয়ন্ত্রিত ট্যাংকে ডাইং করা হয়। এই পদ্ধতি খুবই দ্রুত কিন্তু রংয়ের সামঞ্জস্যতা স্কেইন ডাইংয়ের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম ।

    🔹 বিম ডাইংয়ে রিলের পরিবর্তে ওয়ার্প বা টানা বিম ব্যবহার করে ডাইং করা হয় ।

    🔹 স্পেস ডাইং করা হয় একই সুতা বিভিন্ন রং প্রদান করার জন্য । এককথায় ইয়ার্ণ ডাইং করা হয় সুতার যথোচিত রং এবং সূক্ষতা প্রদান করার জন্য । মোটা এবং অধিক পাঁকযুক্ত সুতাসমূহ এ পদ্ধতিতে ততোটা উপযোগী নয় ।

    ফেব্রিক ডাইং: সবচেয়ে সাধারণ ডাইং পদ্ধতি হচ্ছে ফ্রেবিক ডাইং। গঠিত ওভেন ফেব্রিক বা কাপড় রং করা হয় যে পদ্ধতিতে সেটাই হচ্ছে ফেব্রিক ডায়িং । ফেব্রিক তৈরী হওয়ার পর নির্ধারণ করা যায় কোন রং করা হবে । তাই এই পদ্ধতি খুবই উপযোগী তৎক্ষনাৎ অর্ডার নিতে। এই ডাইং পিস ডাইং নামেও পরিচিত।

    ইউনিয়ন ডাইং: ইউনিয়ন ডাইং হচ্ছে এক ধরনের ফেব্রিক রং করার পদ্ধতি যেখানে দুই বা ততোধিক একই রকম ফেব্রিক বা ইয়ার্ণকে দৃঢ় রঙ্গিন ফেব্রিকে পরিণত করা হয় । এই ডাইং একক বা বহু প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করা হয়ে থাকে । সাধারণত যেসব ফেব্রিক এ্যাপারেল এবং হোম ফার্নিশিংয়ে ব্যবহার করা হয় সেসব ফেব্রিকসমূহে এই ডাইং করা হয় ।

    ক্রস ডাইং: ক্রস ডাইং করা হয় একাধিক মিশ্রিত ফেব্রিককে বিভিন্ন ফিনিশিং যেমন – চেক, স্ট্রিপ,প্লেইড ইত্যাদি দেয়ার জন্য । ক্রস ডাইংয়ে রং ততোটা দৃঢ় হয় না । ফেব্রিক ডাইংয়ে যেসব কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়ে থাকে এখানেও সেগুলোই ব্যবহার করা হয়ে থাকে । ক্রস ডাইংয়ের একটি উদাহরণ হচ্ছে নীল রংয়ের উল ফেব্রিকে পলিয়েস্টার পিন স্ট্রিপ । যখন ডাইং করা হয়, তখন উলের সুতা নীল রং ধারণ করে কিন্তু পলিয়েস্টারের সুতা সাদা রং ধারন করে থাকে ।

    প্রোডাক্ট ডাইং: প্রোডাক্ট ডাইং গার্মেন্টস ডাইং নামেও পরিচিত । এই ডাইংয়ের মাধ্যমে হোসিয়ারি,সুয়েটার, কার্পেট ইত্যাদি ডাইং করা হয় । সাধারণত নিটিং এর পর হোসিয়ারি, কার্পেট ইত্যাদি প্রোডাক্ট ডাইং করা হয় ।

    ✅ ডাই বা রংয়ের প্রকারভেদ : বিভিন্ন ডাই সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলোঃ

    🔹 এসিড ডাই: এসিড ডাই হলো পানিতে দ্রবণীয় অ্যানায়নিক ডাই যা সিল্ক, উল, নাইলন ইত্যাদি ফাইবারে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এসিড ডাই সেলুলোজিক ফাইবারে ব্যবহার করা যায় না ।

    🔹 ব্যাসিক ডাই: ব্যাসিক ডাই পানিতে দ্রবণীয় ক্যাটায়নিক ডাই যা প্রধানত অ্যাক্রাইলিক ফাইবারসমূহে ব্যবহার করা হয়ে থাকে । সাধারণত অ্যাসিটিক এসিড যোগ করা হয় ডাই বাথে যাতে ডাইসমূহ ফাইবারে দৃঢ় ভাবে আটকে যায় ।

    🔸 ডিরেক্ট ডাইঃ ডিরেক্ট ডাই নিরপেক্ষভাবে বা ক্ষারসম্পন্ন ডাইবাথে সম্পন্ন করা হয়ে তাকে । এই ডাইয়ে সোডিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম সালফেট অথবা সোডিয়াম কার্বোনেট ব্যবহার করা হয়ে থাকে । ডিরেক্ট ডাই কটন,পেপার, লেদার,উল, সিল্ক এবং নাইলনে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

    🔹 ভ্যাট ডাই: ভ্যাট ডাই পানিতে অদ্রবণীয় এবং ফাইবারকে সরাসরি ডাইং করতে পারে না । একে ক্ষারযুক্ত দ্রবনে বিজারিত করে ডাইংয়ের জন্য উপযুক্ত করে তোলা হয় । ডেনিমের রং নীলবর্ণের করা হয় ভ্যাট ডাইয়ের মাধ্যমে ।

    🔹 রিয়েক্টিভ ডাইঃ রিয়েক্টিভ ডাইয়ে ক্রোমোফোর নামক উপাদান ব্যবহার করা হয় যা সরাসরি ফাইবারের উপাদানের সাথে বিক্রিয়া করে । রিয়েক্টিভ ডাই ফাইবারের সাথে সমযোজী বন্ধন গঠন করে যার কারণে এই ডাই সবচেয়ে স্থায়ী ডাই হিসেবে পরিচিত। ঠান্ডা রিএক্টিভ ডাইসমূহ যেমন -Procin MX ,Cibacron F, and Drimarene K খুবই সহজেই ব্যবহার করা যায় কক্ষ তাপমাত্রায় । রিয়েক্টিভ ডাই সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি কটন এবং অন্যান্য সেলুলোজিক ফাইবার বাসায় কিংবা স্টুডিও তে ডাইং করার জন্য ।

    🔹 ডিস্পার্স ডাই : ডিস্পার্স ডাই মূলত সেলুলোজ অ্যাসিটেট ডাইং করতে ব্যবহার করা হয় এবং এ ডাই পানিতে অদ্রবণীয় । ডিস্পার্সিং এজেন্টের মাধ্যমে তাদের টেক্সচার করা হয় এবং পেস্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয় কিংবা পাউডার হিসেবেও ব্যবহার করা হয় । তাদের প্রধানত পলিয়েস্টার ডাইংয়ে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও নাইলন, সেলুলোজ ট্রাই-অ্যাসিটেট এবং অ্যাক্রেলিক ফাইবারসমূহ ডাইং করতেও এদের ব্যবহার করা হয় । কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডাইং করার জন্য
    ১৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং চাপ-নিয়ন্ত্রিত ডাই বাথ ব্যবহার করা হয় এ ডাইয়ে। ডিস্পার্সিং এজেন্ট গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে এই প্রক্রিয়ায় ।

    🔹 অ্যাজো ডাই : অ্যাজো ডাই পানিতে অদ্রবণীয় এবং সরাসরি ফাইবারে ব্যবহার করা হয়ে থাকে ডাইং করার জন্য । এ ডাইয়ে ডায়োজয়িক এবং কাপলিং উপাদান ব্যবহার করা হয়। উপযুক্ত ডাই বাথের মাধ্যমে এই দুই উপাদান বিক্রিয়া করে তৈরী করে অদ্রবণীয় অ্যাজো ডাই ৷ এ দুই উপাদানের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা ডাইংয়ের চূড়ান্ত রং । অ্যাজো ডাই কটনে ব্যবহার করা হয় না এর ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রভাবের কারণে ।

    🔹 সালফার ডাই: সালফার ডাই দুই অংশ নিয়ে গঠিত ডাই যা কটনে কালো রং করার জন্য ব্যবহার করা হয় । প্রথম ডাই বাথে কটন হলুদ বা বর্ণহীন হয় । এর পর সালফার দিয়ে ডাই বাথের মাধ্যমে কটন কালো রংয়ের করা হয় । যেমন-কটনের তৈরী কালো মোজা যা সালফার ডাইয়ের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে ।

    তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া

    লেখক-
    মোহাম্মদ রাফি
    ডিপার্টমেন্ট অব ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং
    ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ।

    RELATED ARTICLES

    1 COMMENT

    Leave a Reply to kamales patra Cancel reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments