গত ২ এপ্রিল ২০২৫-এ বাণিজ্য ঘাটতির কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। গত ৯ জুলাই ২০২৫-এ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, বাংলাদেশের ওপর পাল্টা শুল্ক ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে। শুল্কের হার কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তির জন্য ৩১ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন দেশকে সময় দেওয়া হয়। পরবর্তীতে গত ৩১ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক নির্বাহী আদেশে শুল্কের হার ১৫ শতাংশ কমিয়ে নতুন হার ঘোষণা করা হয়।
ট্রাম্পের ওই নির্বাহী আদেশ হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। আদেশে বাংলাদেশ ছাড়াও কয়েক ডজন দেশের ওপর মার্কিন শুল্কের হার তুলে ধরা হয়েছে। অন্য দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ, আফগানিস্তানের ওপর ১৫ শতাংশ, ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ, চীনের ওপর ৩০ শতাংশ, ব্রাজিলের ওপর ১০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ, মিয়ানমারের ওপর ৪০ শতাংশ, ফিলিপাইনের ওপর ১৯ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার ওপর ২০ শতাংশ এবং ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ওয়াশিংটন।
বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের হার কমানোয়, মার্কিন ক্রেতা এবং বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। শুল্কের নতুন নির্ধারিত হার ভারত ও চীনের তুলনায় কম এবং পাকিস্তানের সমপর্যায়ে হওয়ায় মার্কিন বাজারে বাংলাদেশ আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে।
২ আগস্ট ২০২৫, শনিবার, ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, “অনেক রপ্তানিকারক আমাদের জানিয়েছেন, ক্রেতাদের প্রতিনিধিরা যোগাযোগ শুরু করেছেন এবং স্থগিত থাকা অর্ডার ফিরতে শুরু করেছে।” তবে তিনি একই সঙ্গে আত্মতুষ্টিতে না ভুগে প্রতিযোগিতায় নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
রপ্তানিকারকদের অনেকেই বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কের হার ঘোষণার পর মার্কিন ক্রেতারা যোগাযোগ শুরু করেছেন। এর মধ্যে কিছু ক্রেতা আগে স্থগিত রাখা অর্ডারের কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন।
স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, “শুল্ক ইস্যুর কারণে মার্কিন ক্রেতারা আমার প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ৩ লাখ পিস পোশাকের অর্ডার স্থগিত রেখেছিলেন। শুল্কের হার ২০ শতাংশে নামার পর তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে, এবং তারা ওই অর্ডার চালিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছেন।”
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আরেক শীর্ষ রপ্তানিকারক স্নোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম খালেদ বলেন, “শুল্ক ইস্যুর কারণে আমাদের একটি বড় অর্ডার স্থগিত ছিল। আশা করছি, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ওই অর্ডার নিশ্চিত হবে।” তিনি আরও বলেন, “এখনো ক্রেতাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ হয়নি। তবে প্রতিযোগী অন্য দেশে অর্ডার চলে যাওয়ার যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তা কেটে গেছে। কারণ তাদের তুলনায় আমাদের শুল্কের হার প্রায় সমান।” তিনি উল্লেখ করেন, “এখন দেখার বিষয়, ক্রেতারা কতটুকু ক্রয়াদেশ দেন। কারণ শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বাড়বে, ফলে তাদের চাহিদা কমতে পারে।”
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত কাঁচামাল ব্যবহার করলে বাড়তি শুল্ক ছাড় পাওয়া যাবে। বিজিএমইএর সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শুল্ক সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে উল্লেখ আছে, পোশাক উৎপাদনে যদি ন্যূনতম ২০ শতাংশ মার্কিন কাঁচামাল (যেমন মার্কিন তুলা) ব্যবহার করা হয়, তাহলে এই কাঁচামালের মূল্যের ওপর অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য হবে না।
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিকৃত পোশাকের মধ্যে ৭৫ শতাংশ তুলার সুতা দিয়ে তৈরি। ফলে এই নির্বাহী আদেশ বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বছরে ৪০০ কোটি ডলারের বেশি তুলার প্রয়োজন হয়, যার মধ্যে মাত্র ৩০ কোটি ডলারের তুলা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হয়। এই আমদানি বাড়িয়ে ১০০ কোটি ডলার করার পরিকল্পনা রয়েছে সংগঠনটির। এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে সুতা আমদানিকারকরা কিছু কার্যক্রম শুরু করেছেন।
সর্বশেষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের ওপর শুল্ক হ্রাস ১৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে সবার জন্য এক নতুন দিগন্ত। মালিক, শ্রমিক, ক্রেতাসহ সবাই তাঁদের কাজের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।