চলুন জেনে নিই বিজিএমইএ কি?
বিজিএমইএ এর পূর্ণরূপ হলো—বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি। অর্থাৎ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের প্রতিনিধিত্ব করে বিজিএমইএ প্রতিষ্ঠানটি। এটি ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মাত্র ১২ জন সদস্য নিয়ে যা এখন ৪৫০০ সদস্যদের আস্থা হয়ে উঠেছে। এখানে ৬০ ভাগ ওভেন বাকি ৪০ ভাগ নিট কারখানা।
এখানে দুই বছর মেয়াদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালক পর্ষদের দ্বারা পরিচালিত হয়। একজন সভাপতি পদ ও ৭ জন সহ–সভাপতি এখানে অন্তর্ভুক্ত থাকে।
নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন বিজিএমইএ। যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে দেশে বা বিদেশে অনুষ্ঠিত বস্ত্রমেলায় এর সদস্যদের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করা, বিদেশি ক্রেতা, ব্যবসায়ী সমিতি ও চেম্বারের সাথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা, তৈরি পোশাক শিল্প সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে তা এর সদস্য, বস্ত্র ক্রেতা ও অন্যান্য ব্যবহারকারীদেরকে সরবরাহ করা। এছাড়াও বিজিএমইএ পোশাক কারখানায় অগ্নি-দুর্ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে নিরাপত্তা সম্পর্কিত ব্যবস্থা গ্রহণে এর সদস্যদের সহায়তা করে।
নির্বাচনে নারী নেতৃত্বের অংশগ্রহণ
২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে নারীদের ভূমিকা ছিল কেবল কর্মী পর্যায়ে। ২০২৫ সালে এসে নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করছে নারী। ২০২৫-২৭ মেয়াদের বিজিএমইএ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন ৭ জন নারী উদ্যোক্তা, যা পোশাক শিল্পে এক নতুন সাহসী ও চমকপ্রদ মাইলফলক স্থাপন করতে চলেছে।
৭ জন নারী প্রার্থীদের মধ্যে ৫ জন ‘ফোরাম’ প্যানেল থেকে এবং ২ জন ‘সম্মিলিত পরিষদ ‘ প্যানেল থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বিজিএমইএ ২০২৫-২৭ মেয়াদের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১,৮৬৫ জন, যার মধ্যে নারী ভোটার সংখ্যা ১২০ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ১১০ জন এবং চট্টগ্রামে ১০ জন নারী ভোটার আছেন।

নারী নেতৃত্বের ইতিহাস
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের যখন আবির্ভাব ঘটেছে তখনও নারীরা নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের প্রথম পোশাক কারখানা পুরান ঢাকার রিয়াজ গার্মেন্টসে ফাতিমা বেগম মুক্তা ছিলেন প্রথম নারী যিনি উদ্যোক্তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়াও নাজমা চৌধুরী, দেশ গার্মেন্টসের হয়ে প্রশিক্ষণ শেষে যুক্ত হন প্রথম নারী কোয়ালিটি কন্ট্রোলার হিসেবে।
ড. রুবানা হক ইতিহাস গড়েন, ২০১৯ সালে প্রথম বিজিএমইএর সভাপতি হয়ে।
নারীদের বর্তমান ভূমিকা ও বাস্তবতা
২০২৪ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা যায় প্রায় ২৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬১৬ জন নারী শ্রমিক পোশাক শিল্পের বিভিন্ন ফ্লোরে কাজ করেন।
১৮ হাজারের বেশি নারী মধ্যম পর্যায়ের ম্যানেজমেন্টে কাজ করছেন। তবে নেতৃত্ব পর্যায়ে নারীর উপস্থিতি এখনো আশানুরূপ নয়।
বর্তমানে দেশ ও সমাজের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে অনেক নারী উদ্যোক্তা নেতৃত্ব পর্যায়ে যেতে বিভিন্ন বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৭ জন সাহসী নারী প্রার্থী:
ফামিদা আক্তার – মাসকো ইন্ডাস্ট্রি লিঃ (ফোরাম)
মিসেস সুমাইয়া ইসলাম – যমুনা ডেনিম লিঃ (ফোরাম)
রুমানা রশীদ – রুমানা ফ্যাশন লিমিটেড ( (ফোরাম)
সামিয়া আজিম – সাইনেস্ট অ্যাপারেল লিঃ (ফোরাম)
ভিদিযা অমৃত খান – দেশ গার্মেন্টস লিমিটেড (ফোরাম)
তামান্না ফারুক থিমা – বিজি কালেকশন লিঃ (সম্মিলিত পরিষদ)
লিথি মুনতাহা মহিউদ্দিন – লিথি অ্যাপারেল লিঃ ((সম্মিলিত পরিষদ)
সফল নারীদের অভিমত
বিজিএমইএ তে নতুন করে নারী নেতৃত্বের আবির্ভাব দেখে দেশের সফল নারী উদ্যোক্তা ও কর্মীরা তাঁদের অভিমত ব্যক্ত করেন। তাঁদের মধ্যে কেউ বলেন– সুযোগ সুবিধা পেলে আরও অনেক নারী নেতৃত্বে আসতে পারবেন। এই নির্বাচন নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় একটি বড় সুযোগ। আবার কেউ বলেন – নারী উদ্যোক্তা বা যাঁরা চাকরি করেন, তাঁদের কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করা, নারী শ্রমিক ও কর্মচারীদের ন্যায্য মূল্যয়ন করা আমাদের প্রথম কর্তব্য হওয়া উচিত।
বিজিএমইএ-তে নারী নেতৃত্বের এই নতুন যাত্রা শুধু পোশাক খাতের নয়, বরং গোটা বাংলাদেশের জন্যই এক গর্বের অধ্যায়। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নারীরা এখন আর শুধু শ্রমিক নয়, তারা নেতৃত্বেও ভূমিকা রাখতে সক্ষমতা দেখাচ্ছেন। ৭ জন সাহসী নারী উদ্যোক্তার এই নির্বাচন অংশগ্রহণ প্রমাণ করে যে, নারীরা সব বাধা অতিক্রম করে সামনের কাতারে আসতে প্রস্তুত। সমাজ ও শিল্প-সংগঠন যদি প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরিবেশ নিশ্চিত করে, তাহলে ভবিষ্যতে আরও অনেক নারী উদ্যোক্তা বিজিএমইএ-এর মতো শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বে আসবেন। এই পরিবর্তন কেবল একটি প্রতিষ্ঠান নয়, গোটা দেশের অর্থনীতি ও নারী ক্ষমতায়নকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
Writer:
Khadija Khatun
Deputy Sub-Leader Content Writing Team
Textile Engineers Society