Tuesday, April 16, 2024
More
    HomeGarments & Apparelউপজাতিদের ঐতিহ্যের পোশাক (পর্ব-০১)

    উপজাতিদের ঐতিহ্যের পোশাক (পর্ব-০১)

    ♦ বাংলাদেশে বসবাসকারী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৪৫ টি। তাদের প্রত্যেকের রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি। সেই সাথে রয়েছে পোশাকের ধরণ, বুনন ও পড়নে বৈচিত্র্যতা। বাংলাদেশের আদিবাসী সম্প্রদায় নিজেদের বস্ত্র মূলত নিজেরাই তৈরি করে। এজন্য তাদের প্রায় প্রতি পরিবারের রয়েছে নিজস্ব তাঁত। তারা চরকা ও তাঁতের সাহায্যে অত্যন্ত চাকচিক্যপূর্ণ বস্ত্র তৈরি করে। আদিবাসী বস্ত্রশিল্পের কাঁচামাল সাধারণত জুম ক্ষেতে উৎপাদিত তুলা ও প্রাকৃতিক উপকরণ থেকে তৈরি হলেও বর্তমানে বাজার থেকে কেনা মিলের সুতা ও রং-এর ব্যবহার ব্যাপক। পুরুষদের পোশাক-পরিচ্ছদে নকশার বৈচিত্র্য কিছুটা কম। নারীদের পোশাক-পরিচ্ছদে থাকে বর্ণাঢ্য রং ও নকশার সমাবেশ।

    তাহলে চলুন আজকের পর্বে চাকমা ও মণিপুরী জনগোষ্ঠীর পোশাক সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেয়া হয়ে যাক….

    ♦ চাকমাদের পোশাক-পরিচ্ছদ:

    🍀 চাকমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, লোক সাহিত্য, সাহিত্য ও ঐতিহ্য রয়েছে । চাকমা মেয়েদের পরিধেয় পোশাক সাধারণত দুটি অংশে বিভক্ত। চাকমা নারীরা “বেইন” নামক কোমর তাঁতে কাপড় তৈরী করে থাকে। তাদের পরিহিত ঐতিহ্যবাহী বস্ত্রের নাম “পিনন-হাদি” যা বিভিন্ন নকশা ও সুতার মিশ্রণে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ভাবে বুনন করা হয়ে থাকে।

    পোশাকের নিচের অংশের নাম “পিনন” যা কোমর থেকে গোড়ালি পর্যন্ত এবং উপরের অংশ “হাদি”। পিননে কোনোরকম সেলাই থাকেনা।পিননের সাথে “চিবুকি” নামক নকশাযুক্ত আচল থাকে। হাদির সঙ্গে তারা ব্লাউজের মতো জামা পরিধান করে। তারা মাথায় খবং পড়ে।

    🔹 এক সময় শুধু জুম ক্ষেতে উৎপাদিত তুলা থেকে তৈরী সুতা দিয়ে তাদের বস্ত্র তৈরী হলেও বর্তমানে তারা বাজার থেকে কেনা সুতা দিয়েও কাপড় বুনে থাকে। পুরুষরা “জুন্নাছিলুম”, “টন্নে হানি”,”খবং”,”ধুতি” পরিধান করে।

    🔹 তাদের বর্ষবরণ উৎসব “বিজু”। এইদিনে তারা ঐতিহ্যবাহী পোষাক পরিধান করে তগাকে। এটি ছাড়াও বুদ্ধ পূর্ণিমা,কঠিন চীবর দান,মহাসংঘ দান,মাঘী পূণিমা সহ অন্যান্য সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তারা তাদের এইসকল ঐতিহ্যবাহী বস্ত্র পরিধান করে। “আলাম” নামক কাপড়ে তারা তাদের ঐতিহ্যবাহী নকশা সংরক্ষিত করে রাখে।

    🔹 জুম ক্ষেতে উৎপাদিত তুলার আঁশ মোটা, খাটো ও খসখসে হয়। তাদের ধর্মীয় উৎসব “কঠিন চিবর দান” অনুষ্ঠানে ধর্মীয় গুরুকে এই তুলা দিয়ে তৈরি বস্ত্র উপহার দিয়ে থাকে।

    ♦ মণিপুরীদের পোষাক-পরিচ্ছদ:

    🍀 বাংলাদেশের প্রাচীন হস্তশিল্পগুলোর মধ্যে মনিপুরী হস্তশিল্প সু-প্রসিদ্ধ। মণিপুরী নারীদের সুখ্যাতি রয়েছে হাতে বোনা তাঁতের কাপড়ের জন্য। শ্রীমঙ্গল ও বিশেষ করে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জের প্রায় ৬০টি গ্রাম মণিপুরী তাঁতশিল্পের জন্য বিখ্যাত।

    🔹 মণিপুরী নারীদের নিত্যদিনের ব্যবহার্য পোশাকের নাম, “ফুরিত-ফানেক-ফিদুপ”। নিচের অংশে পরিধেয় পোশাক “ফানেক” যা প্যাচ দিয়ে পড়তে হয়। আর ব্লাউজের মতো পোশাক ফুরিত। তারা ফুরিতের উপর “ফিদুপ” নামের ওড়না পড়ে। “ইনাফি” নামক এক প্রকার চাদর তারা গায়ে জড়িয়ে থাকে।

    বিয়ে ও নৃত্যের সময় “পলই” নাম এর উজ্জ্বল,কারুকাজময় পোশাক পড়ে থাকে।পলই দেখতে অনেকটা চোঙ অাকৃতির।মণিপুরীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব মহারাসলীলা ও লাই- হারাওবা সহ অন্যান্য নৃত্যানুষ্ঠান এবং বিয়েতে তারা পলই এর সাথে সূক্ষ্ণ কারুকাজের ফুরিত,ইনাফি ও ফিদুপ পরিধান করে।

    ভারতের মণিপুর রাজ্যের রাজধানী ইম্পলে উৎপাদিত সুতার মাধ্যমে তারা উন্নত মানের ব্স্ত্র তৈরী করে থাকে। তবে বাজার থেকে কিনা সুতার মাধ্যমেও তারা এসব বস্ত্র তৈরী করে।

    🔹 মণিপুরীদের তৈরী শাড়ি বেশ সুপরিচিত। মণিপুরী শাড়ির মূল বৈশিষ্ট্য হলো এর “টেম্পল মোটিফ” বুনন। তাদের ঐতিহ্যবাহী মৈরাংগ ফী নামক ওড়না থেকেই মনিপুরী শাড়ির উদ্ভব। শাড়ির পাড়ে ট্রাডিশনাল মন্দিরের নকশা ঠিক রেখে অাচল ও জমিনে অন্যান্য নকশার মাধ্যমেও এই শাড়ি তৈরী হয়।

    “মোটিফ হচ্ছে একটি ধারণা যেখানে কোন একটি ডিজাইন পুনরাবৃত্তি করে বিভিন্ন অাঙ্গিকে সাজিয়ে বুনন,সূচ ও খোদাই এর মাধ্যমে অাকর্ষণীয় ও পরিপূর্ণ রূপ দেয়া হয়। যেমনঃ গাছ, পাতা, ফুল,সূর্য ইত্যাদি মোটিফ রূপে খোদাই, বুনন ও সূচি কাজে ব্যবহার হয়।” রাজশাহী সিল্ক সুতা থেকেও মণিপুরী শাড়ি তৈরী হয় যা মসৃণ ও হালকা।

    🔹 মণিপুরী পুরুষেরা “ফেইজং” নামক ধুতি, “পুজাত” নামক পাঞ্জাবি ও লম্বা সাদা শার্ট পরিধান করে।তাদের ব্যবহার্য “ফুরিত” ফতুয়া ধরণের। বিয়ের অনুষ্ঠানে তারা “কৈরাত” নামক পাগড়ি পড়ে।

    🔹 বর্তমানে এসব সম্প্রদায়ের পোশাক-পরিচ্ছদে পরিবর্তন এসেছে। এখন নারীরা সালোয়ার-কামিজ সহ অন্যান্য আধুনিক পোশাক ও পুরুষেরা প্যান্ট,শার্ট পড়লেও সামাজিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং বিয়েতে তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাককেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে।

    📝 তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, উইকিপিডিয়া,বাংলাপিডিয়া,সিলেটের ডাক, বিডি মর্নিং,বাংলানিউজ ২৪ ডট কম

    Writter Information:

    Rebeka Sultana
    Dept. of Fabric Engineering
    Member of Team TES-DWMTEC
    Dr. M A Wazed Miah Textile Engineering College

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments