Saturday, April 20, 2024
More
    HomeBusinessএনায়েতপুর হাটের পরিচিতি"

    এনায়েতপুর হাটের পরিচিতি”

    সিরাজগঞ্জের একটি বড় হাট এনায়েতপুর হাট। এই জনপদের বয়নশিল্পীরা তাঁদের পণ্য বিক্রি করতে একসময় যেতেন যমুনাতীরের ঘাটাবাড়ি হাটে। এতে তাঁতিদের নানা অসুবিধা হতো।এলাকার পাঁচ ইউনিয়নের নেতৃস্থানীয়দের তৈরি কমিটি জেলার এনায়েতপুরে এই হাট প্রতিষ্ঠা করে। হাটের বয়স প্রায় ৫০ বছর। এখানে তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা ও সুতা পাইকারি বিক্রি হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় শুরু এই হাটের নাম সেই সময়ে দেওয়া হয় মুজিব হাট। হাট প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই হাটের দিন ক্রেতাদের বিনা মূল্যে গরুর মাংস-ভাত খাওয়ানো হতো। ফলে, অল্প সময়েই ব্যবসায়ীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। শুরুতে কেবল শুক্রবার হাট বসলেও বর্তমানে সপ্তাহে চার দিন বসে।বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত স্থানীয় বয়নশিল্পীরা সরাসরি তাঁত থেকে হাটে ওঠান শাড়ি ও লুঙ্গি। বৃহস্পতিবার শুধু বসে গ্রে লুঙ্গির হাট; শুক্রবার আসে প্যাকেট করা শাড়ি ও লুঙ্গি; সঙ্গে সুতা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা পণ্য। হাটের সব পণ্য দেশি। সপ্তাহে ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকার শাড়ি, লুঙ্গি এবং প্রায় ১০ কোটি টাকার অন্যান্য পণ্য বিক্রি হয়। জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে হাট ইজারা হয়। এ বছর সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। হাটে পানি জমে, বৃষ্টি হলে ব্যবসায়ীদের বসার ঘরগুলোয় পানি পড়ে। কোনো শৌচাগার নেই।

    বর্তমান অবস্থা :

    ড্রেনেজ, অবকাঠামো, স্যানিটেশনসহ সার্বিক উন্নয়ন বঞ্চিত সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী এনায়েতপুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘদিনে হাটের সংস্কার না করায় এক শ্রেণির প্রভাবশালীরা হাটের জায়গা দখলের উৎসবে মেতে উঠেছে। এ যেন দেখার কেউ নেই। জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের অন্যতম প্রধান এনায়েতপুর হাট। এ হাট থেকে সরকার প্রতি বছর কোটি টাকার উপরে রাজস্ব আদায় করে থাকে। অথচ সেই তুলনায় হাটের তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগেও। বিভিন্ন জটিলতায় আটকে রয়েছে হাটের উন্নয়ন কর্মকান্ড। একারনে সংস্কারের অভাবে ঐতিহ্যবাহী এ হাটের অবকাঠামোগুলো দিনের পর দিন ভঙ্গুর হয়ে বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর পাবালিক টয়লেট, টিউবওয়েল ও গরু জবাইয়ের জন্য নির্দিষ্ট কশাইখানা না থাকায় ক্রেতা বিক্রেতাদের অবর্ননীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে যত্রতত্র গরু জবাই ও ময়লা ফেলে রাখায় উৎকট দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে হাটের অভ্যন্তরে। এতে পথচারীদের চলাচলেও মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় একটু বৃষ্টি হলেই হাটের মধ্যে হাঁটু পানি জমে যায়। দোকানগুলোর টিনের চালা নষ্ট হয়ে মালপত্র ভিজে যায়। ২০০৬ সালে হাট সংলগ্ন প্রায় ৩৫ একর জায়গা ওপর কাপড়ের হাট প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় থেকে হাটের উন্নয়নে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এছাড়া রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হাটের টিন কাঠ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এ কারণে হাটের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা বঞ্চিত হচ্ছে। এতে দেশ-বিদেশের ক্রেতাদের উপস্থিতি দিন দিন কমে যাচ্ছে। এই কারণে প্রতি সপ্তাহের রোববার, বুধ ও বৃহস্পতিবার হাটে অবিক্রীত অন্তত সাড়ে ৫ কোটি টাকার কাপড় ফেরত নিয়ে যেতে হচ্ছে তাঁতিদের। ভারত ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি অঞ্চল থেকে ক্রেতারা নিয়মিত কাপড় ক্রয় করতে এনায়েতপুর হাটে আসত। কিন্তু হাটের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা এবং পরিবেশ না থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতারা এই হাটে আসতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এনায়েতপুর হাটের ইজারাদার আহম্মদ মোস্তফা খান বাচ্চু জানান,” এ হাট থেকে সরকার এ বছর প্রায় দেড়কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। কিন্তু হাটে স্যানিটেশন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ অবকাঠামোগত কোনো সংস্কার হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা তেমন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না।”(সংবাদপত্র: যায়যায়দিন) এদিকে এনায়েতপুর হাট পরিদর্শনে এসে সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মন্ডল বলেন, “এনায়েতপুর হাটের অবকাঠামো, ড্রেনেজ ও স্যানিটেশনসহ সার্বিক উন্নয়নে দ্রম্নত কাজ শুরু করা হবে।” (সংবাদপত্র: যায়যায়দিন)

    ইতিকথা

    পরিশেষে বলা যায় সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর হাট পোশাক ও তাঁতশিল্পের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। এবং এটি অবহেলার কারণে ধসের পথে। কিন্তু এখান থেকে প্রতি বছর সরকার এক কোটির উপর রাজস্ব পায়। এবং এ হাটটি যদি পূর্বের মত জমজমাট হয়ে ওঠে তাহলে ক্ষুদ্র ও স্থানীয় উদ্যক্তা গুলোর কাজের প্রতি আরও বেশি আগ্রহ পাবে।

    তথ্য: সংবাদ পত্র যায়যায়দিন, সিরাজগঞ্জ নিউজ ২৪।

    Md Eshtiak Ahmed Ayoun
    Department of Textile Engineering
    BGMEA University of Fashion & Technology (BUFT)

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments