ওড়নায় রং বাহার: ”ফুলকাড়ি” ওড়না

0
956

গত ৩-৪ চার বছর ধরে বাঙ্গালী মেয়েদের ফ্যাশনে সংযোজন হয়েছে ‘ফুলকাড়ি ওরনা’। হঠাৎ কেনই বা এই ওড়নার কদর এতো বেড়ে গেলে এবং কেন এতো বিখ্যাত এই বিশেষ ডিজাইন এর ‘ফুলকাড়ি ওড়না’??

‘ফুলকাড়ি’ এর রয়েছে বিখ্যাত ও সমৃদ্ধ ইতিহাস। আজ-কাল এর সৃষ্টি নয় এই কাপড়।
আজ থেকে প্রায় বহু বছর পূর্বে ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে এই ”ফুলকাড়ি’ এমব্রয়ডারি কাপড় এর কাজ শুরু হয়।
পাল রাজার আমলে পাঞ্জাবে এই কাপড়ের ব্যাবহার ছিল বহুল। সেই সময় পাঞ্জাব এলাকার মহিলারা ঘরের সামনের ফাকা জায়গায় ‘ফুলকাড়ি’ এমব্রয়ডারি এর কাজ করতো। কাজে যাতে মন বসানো যায় তার জন্য কাজের সাথে সাথে লোক-সঙ্গীত এর আসর বসানো হতো। পাঞ্জাব প্রদেশে কোনো মেয়ে শিশুর জন্ম হলে মা-দাদীরা মিলে সেই শিশুর জন্য অনেক বিশাল কাপড় জুড়ে ‘ফুলকাড়ি’ এমব্রয়ডারি এর কাজ করতো এবং মেয়ের বিয়ের সময় সেই ‘ফুলকাড়ি’ কাপড় দেয়া হতো মেয়েকে।
ইতিহাসের পাতার আরো গভীরে গেলে জানা যায় কোথা থেকে পাঞ্জাবে এর আবির্ভাব। ‘ফুলকাড়ি’ এর প্রথম উৎপত্তি স্থল নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত বিরোধ থাকলেও, লোক-কথা অনুযায়ী ভারতের আরো কিছু প্রদেশ বিহার ও রাজস্থানে এর চল থাকলেও শেষ পর্যন্ত শুরু পাঞ্জাবেই ‘ফুলকাড়ি’ টিকে থাকে। এছাড়া সদূর ইরানে একটা বিশেষ ডিজাইন এর কাপড় যা ‘গুলকাড়ি’ নামে পরিচিত ছিল,অনেকের ধারণা ‘গুলকাড়ি’ থেকেই ‘ফুলকাড়ি’ এর সৃষ্টি, তবে পাঞ্জব এর তৎকালীরলন রাজা পালের ভাষ্যমতে ‘ফুলকাড়ি’ ‘ ইরানের ‘গুলকাড়ি’ থেকে ভিন্ন ডিজাইন ও বুননের দিক থেকে।

এবার আসা যাক, ‘ফুলকাড়ি’ এর বুনন এবং বর্তমানের চাহিদার কথায়। ‘ফুল’ এবং ‘কাড়ি’ দুটি শব্দের সমন্বয়ে তৈরি,’কাড়ি’ শব্দের অর্থ ‘আকার’ এবং ফুল বলতে বাংলার সাধারণ ‘ফুল’ শব্দকেই বোঝায়।
কাপড়ে এমব্রয়ডারি এর মাধ্যমে বিভিন্ন আকারের ফুলের ডিজাইন এর মাধ্যমে বানানো হতো এই ‘ফুলকাড়ি’ কাপড়। এই কাপড় বুননের ভিন্নতা হলো এটি কাপড়ের উল্টো দিক থেকে বুনন করা হতো,যার জন্য এই বুনন প্রক্রিয়া ছিল অন্য সব বুননের থেকে ভিন্নমাত্রার। নিপুণ হাতের কাজ, জরি-সুতার সুন্দর ডিজাইন এবং রঙ্গিন হওয়ায় মূলত নারীরা এই কাপড়ের প্রতি বিশেষ ভাবে আকর্ষিত ছিল।
‘ফুলকাড়ি’ কাপড় এর প্রধান রং ‘লাল’।লাল কালার এর উপর ভিত্তি করে এই কাপড়ের কাজ করা হতো।
পাঞ্জাবিরা হিন্দু এবং তারা লাল রং কে ‘শুভ’ ভাবতো সেই থেকে এর মূল রং লাল,এছাড়াও এটি মেয়েদের বিয়ের সময় দেয়া হতো বলে প্রাধান্য পেয়ে আসছে লাল রং, এই কাপড়ের ব্যাকগ্রাউন্ড কালার হিসেবে গোলাপি, বেগুলী,কমলা,হলুদ ব্যাবহার করা হতো। বিধবা এবং বয়স্কদের জন্য সম্পূর্ণ সাদার উপরেও এই কাপড় বুনা হতো।
পাঞ্জাবের নারীরা এই কাপড় ব্যাবহার শুরু করে এবং ক্রমশ তা পুরা ভারত এমনি কি বর্তমানে বাংলাদেশও বিপুল ভাবে জড়িয়ে পরে এবং জনপ্রিয়তা লাভ করে।
গত ৩-৪ বছর ধরেই এ দেশের তরুণী-যুবতীরদের মাঝে এই ‘ফুলকাড়ি’ এমব্রয়ডারি ডিজাইন এর ওড়নার কদর বেড়ে যায়। এক কালার বা সাদা কামিজ এর সাথে কালারফুল একটা ওড়না যেন ফ্যাশন লিস্টে সবার উপরে। ফাল্গুন-বৈশাখ উৎসব কিংবা সাধারণ ব্যবহার থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নারীরা ব্যবহার করছে এই কাপড়।
ফ্যাশন সর্বদা পরিবর্তনশীল। তাই থেমে থাকেনি ‘ফুলকাড়ি’ এর ব্যবহার। আমাদের দেশের ডিজাইনাররা ওড়না ছাড়াও শাড়ীর আচল, কোটি ড্রেস,কামিজ এর পাইপিং এর অংশে ‘ফুলকাড়ি’ এমব্রয়ডারি কাপড় ব্যাবহার করেছে। সেই গুলোও ‘ফুলকাড়ি’ ওড়নার মতো যথেষ্ট পরিচিতি পেয়েছে।

শুরুর দিকে আমাদের দেশে শুধু ‘ফুলকাড়ি’ ওড়নার চল শুরু হয়েছিলো,সেই সময় এই ওড়নার বাজার দাম ছিল প্রায় ১৫০০-২০০০ টাকা।মূলত শুরুর দিকে ভারত থেকেই আনা হতো এই ওড়না,কিন্তু বাংলাদেশের গার্মেন্টসে বর্তমানে এই কাপড় অহরহ বানানো হচ্ছে।
ফলস্বরুপ এই ওড়নার বর্তমানে বাজার মুল্য ৩০০-৪০০ টাকা। অনেক নামিদামি গার্মেন্টস বিশাল অর্ডারে বানাচ্ছে এই কাপড়। এমনকি বাংলাদেশের তৈরী এমব্রয়ডারি এই কাপড় আবার ভারতে রপ্তানিও হচ্ছে।
আগে শুধুমাত্র হাতের কাজের মাধ্যমেই এই কাপড় বানানো হতো বর্তমানে তা চলে গিয়েছে ইন্ডাস্ট্রি প্রোকাডশনে। এ দেশের ফ্যাশানে এই ডিজাইন বেশ জনপ্রিয় অবস্থান করে নিয়েছে। ফ্যাশন ডিজাইনাররা এই ‘ফুলকাড়ি’ এর মাঝে আনছে ভিন্নতা, উন্নত কিছু ডিজাইন যাতে ‘ফুলকাড়ি’ কখনোই তার জনপ্রিয়তায় স্থান থেকে ছিটকে না পড়ে।

Source : Wikipedia

Writer’s Information

Name : Nure Arfi
Semester: Second Year, First Semester
Batch : 39
University: Ahsanullah University of Science and Technology

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here