কুমিল্লা খাদি শিল্পের তৈরী কাপড় দেশ/বিদেশের সকল শ্রেনীর মানুষের কাছে অতি প্রিয়। ১৯২১সালে মহাত্মা গান্ধীর ডাকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় এ কাপড়ের জনপ্রিয়তা বেড়ে ওঠে। স্বদেশী পণ্য গ্রহণ করোআর বিদেশি পণ্য বর্জন করো, এই শ্লোগানের ওপর ভিত্তি করেই তৎকালীন সময়ে খাদিশিল্পের উৎপত্তি হয়।
নামকরণ: খাদি কাপড়ের নামকরণ নিয়ে রয়েছে মতবাদ। দেশে যখন খাদি কাপড়ের চাহিদা বেড়ে যায় তখন সাধারণ মানুষের কাপড়ের চাহিদা পূরণ করার জন্য মাটির নিচে গর্ত করে পায়ে চালানো প্যাডল দ্বারা এই কাপড় তৈরী হতো। খাদ থেকে তৈরী হয় বলে এই কাপড়ের নাম খাদি বা খদ্দর। আবার অনেকে বলে থাকে খদ্দর শব্দটি গুজরাট শব্দ। এই শব্দ থেকেই খাদি বা খদ্দর হয়েছে।
ইতিহাস: প্রাচীনকাল থেকেই এ উপমহাদেশে কুমিল্লার তৈরী খাদি বা খদ্দর কাপড়ের চাহিদা ছিল প্রচুর। এই চাহিদাকে ধরে রাখার জন্য ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর তৎকালীন কুমিল্লা সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ ও বার্ডের প্রতিষ্ঠাতা ড. আখতার হামিদ খান ও তৎকালীন গভর্নর ফিরোজ খান নুনের সহযোগিতায় দ্য খাদি এন্ড কটেজ ইন্ড্রাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন। তখন কুমিল্লার অভয়াশ্রমে, চট্টগ্রামের প্রবর্তক সংঘ আর নোয়াখালীর গান্ধী আশ্রমে খাদি বা খদ্দর কাপড় বোনা হতো। তখন চান্দিনাতে ড. আখতার হামিদ খান প্রতিষ্ঠিত দি খাদি কো-অপারেটিভ অ্যাসোসিয়েশনের হাল ধরেন চান্দিনার শৈলেন গুহ ও তার ছেলে বিজন গুহ। তারা এই খাদি শিল্পের সুনাম ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনবরত কাজ করে গেছেন। শৈলেন গুহ মারা যাওয়ার পর তার ছেলে বিজন গুহ এই শিল্পকে ধরে রেখেছেন কোনো মতে। চান্দিনাতে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতি বিজড়িত একটি তাঁতশিল্প রয়েছে আজও। ১৯৯৪ সালে কুমিল্লার খাদিশিল্প তাদের গুণগত মানের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়।
সুতা: আমাদের দেশে যে খাদি কাপড় তৈরি করা হয় তা তূলনামূলক মোটা সুতা থেকে। এতে ২০-৪০ কাউন্টের সুতা ব্যবহার করা হয়। কিন্তু পাতলা খাদি কাপড় তৈরি করতে হলে বেশি কাউন্টের সুতার প্রয়োজন।তা অম্বর চরকায় কাটা হয়।যা আমাদের দেশে হয়না। বাইরে থেকে বেশি কাউন্টের সুতা এনে পাতলা খাদিও হাত তাঁতেই তৈরি করা হয়। তাই খাদি কাপড়কে সম্পূর্ণ হাতে তৈরী কাপড় বলা যায়। খাদি কাপড় নিয়ে একটি কথা প্রচলিত আছে। তাহলো “” খদ্দর পড়ে ভদ্দরনোক”” খাদি কাপড় মোটা বলে পূর্বে শুধু শাল হিসেবেই বেশি ব্যবহৃত হতো। তবে বর্তমানে নতুন নতুন ব্র্যান্ডগুলো খাদি কাপড় নিয়ে কাজ করছে। যেমন: বিশ্বরঙ।
পাতলা খাদি দিয়ে এই সময়ের ডিজাইনাররা মেয়েদের পোশাকের পাশাপাশি তৈরি করছে পুরুষদের পোশাকও। যার মধ্যে রয়েছে শাড়ি, ব্লাউজ, স্কার্ট, সালোয়ার, কুর্তা,শার্ট,ব্লেজার,জ্যাকেট,প্যান্ট ইত্যাদি। যেগুলোর চাহিদা সারা বছরই থাকছে। বর্তমানে দেশের প্রায় সব ফ্যাশন হাউজেই কম-বেশি খাদি কাপড়ের পোশাক দেখা যায়। খ্যাতিমান ডিজাইনার রা অনেকেই খাদি নিয়ে কাজ করছেন নতুন প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে। কুমিল্লা জেলার চান্দিনায় অবস্থিত গ্রামীণ খাদির সত্বাধিকারী অরূণ গুহ জানান, বর্তমানে খাদি কাপড়ের যথেষ্ট চাহিদা না থাকলেও দেশে এবং বিদেশে ছোট-বড় লটে খাদির তৈরি কাপড় রপ্তানি হচ্ছে।
ফ্রান্স, স্পেন, ডেনমার্ক, তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশে এই পণ্য রপ্তানি হয়। বর্তমানে এই শিল্প টিকে থাকলেও ভবিষ্যতে এর অস্তিত্ব নিয়ে যথেষ্ট শংকা রয়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন তুলার অপর্যাপ্ততা এবং চাহিদার সীমাবদ্ধতা। বর্তমানে মেশিনের সাথে হস্তচালিত তাঁত দ্বারা উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। ভবিষ্যতে এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে বছরে অন্তত একটি করে খাদির পোশাক সকলের কেনা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।
পৃষ্ঠপোষকতা: কুমিল্লার স্বনামধন্য খাদিশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন। তাঁতশিল্পীদের স্বল্প সূদে ঋণ ও খদ্দর কাপড় তৈরির কাঁচামালের দাম নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
তথ্য সংগ্রহ: উইকিপিডিয়া ও প্রথম আলো।
Writer information:
Sadia Tamanna Binte Taifur
4th Year, Batch 21,
Department of Clothing & Textile,
Bangladesh Home Economics College.