খবরের কাগজে তৈরী পোষাক

2
519

বিষয়টা একটু অদ্ভুত লাগছে তাই না?! প্রযুক্তির এই যুগে এসে এতো এতো ফেব্রিক/ফাইবার থেকে তৈরীকৃত পোষাক বাদ দিয়ে কেন খবরের কাগজ দিয়ে প্রস্তুতকৃত পোষাক পরতে হবে? হ্যা, অদ্ভুত হলেও ব্যাপারটা বেশ মজার। তাহলে আসুন আজকে এই মজার বিষয়টি নিয়ে একটু জানি…

সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই মানুষ নিজেকে বিভিন্নভাবে সাজাতে পছন্দ করে। তার মধ্যে থাকে আলাদা কোনো বেশভূষায় সবার থেকে আলাদা হয়ে সাজবার একটা নেশা। পোশাক মানুষের ব্যক্তিত্বের একটি অংশ। অনেক ক্ষেত্রে মানুষ নিজেকে উপস্থাপন করে এই পোশাকের মাধ্যমেই। নতুন, পুরনো, রঙিন হাজারো বাহার আছে এই পোশাকের ভিড়ে। পোশাকে এসেছে নতুনত্ব। যদি আমরা পেছনে ফিরে তাকাই তবে দেখা যাবে পোশাকে পরিবর্তন এসেছে খুব কম সময়ে। সময় অতিবাহিত হবার সঙ্গে সঙ্গে পোশাক হয়ে দাঁড়িয়েছে ফ্যাশনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে। মানুষ নিজেকে ফ্যাশনের কোন আলোকে তুলে ধরবে তা নির্ভর করে তার পোশাকের ওপর। তাই লাইফস্টাইল থেকে শুরু করে ফ্যাশন, সব ক্ষেত্রেই আছে পোশাকের সমান গুরুত্ব। রেশম, নাইলন,উল ইত্যাদির মত হাজারো উপাদান দিয়ে পোশাক তৈরি করা গেলেও এর মাঝে আছে কিছু ভিন্নতা। ফ্যাশন এবং প্রয়োজন দুইটি দুইরকম প্রেক্ষাপট। প্রয়োজন আমাদের পোষাকের ভেরিয়েশনের উপর ডিপেন্ড করেনা। আর ফ্যাশন শুধু ভেরিয়েশন খুজে বেড়ায়।

🔸খবরের কাগজের মূল্য আমাদের কাছে থাকে মাত্র ২৪ ঘণ্টা। খুব গুরুত্বপূর্ণ না হলে আমরা খবরের কাগজ নিজেদের কাছে রাখি না। কিন্তু প্রতিনিয়ত ছাপানো হচ্ছে বিভিন্ন নামের লাখো লাখো খবরের কাগজ। একদিকে মানুষ এসব খবরের কাগজ পড়ছে আর পড়া শেষে কিছুদিন পর অন্যদিকে তা ফেলে দিচ্ছে ময়লার স্তূপের মাঝে নাহয় জমাকারে বিক্রি করে দিচ্ছে কাগজওয়ালার কাছে। তবে এই চিরাচরিত নিয়ম ভাঙতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন একজন। যিনি খবরের কাগজ নতুনভাবে চেয়েছেন উপস্থাপন করতে পোশাকের মাধ্যমে। তিনি একজন ইতালিয়ান নাগরিক এবং তার নাম “ইভানো ভিটালি”। ভিটালি খবরের কাগজকে নিয়ে এসেছেন সুতার চেহারায়। এই সুতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে জামা, যা দেখতে কাপড়ের তৈরি জামার মতই। এটি তৈরি করতে প্রথমে খবরের কাগজকে খুব চিকন করে কেটে করুশ দিয়ে কাঠিতে পেঁচিয়ে হালকা টুইস্টের সঙ্গে সুতার বল তৈরি করা হয়। এই পদ্ধতিতে আঠা, রঙ, কোনো কিছুই ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না, হয় না কোনো প্রকারের পরিবেশ দূষণ। তবে এতে রঙ ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। জ্যাকেটের মতো পোশাকগুলোকেও এই নিউজ পেপার থেকে তৈরি করা সম্ভব খুব সহজে।

এছাড়াও, নিউজপেপার কাটিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ওয়ানটাইম ফ্যাশনেবল পোষাক প্রস্তুত করা যায়। সাধারণত ফ্রান্স,ইতালি,চায়না, স্পেন এর বিভিন্ন ফ্যাশন শো, ফ্যাশন কম্পিটিশন, পার্টি ইত্যাদিতে এসকল পোষাক ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
“Halloween costume” এবং “Party Dress” হিসেবে এই পোশাক ব্যবহার করা হয়ে থাকে বেশি।

🔶 যেভাবে খবরের কাগজ দিয়ে ফ্যাশনেবল স্কার্ট বা গাউন প্রস্তুত করা হয়:

➡প্রথমে প্রয়োজনীয় উপকরন অর্থাৎ রঙবেরঙ এর খবরের কাগজ, পরিমাপক স্কেল/ফিতা,মার্কার,পেন্সিল,কমফোর্টেবল টেপ ইত্যাদি সংগ্রহ করতে হবে।
➡দুই পিস কাগজকে টেপ দিয়ে জোড়া লাগাতে হয়। পরিমাপক ফিতা দ্বারা চেস্ট এবং কোমরের মাপ নিয়ে পেপারে মার্ক করে নিতে হবে।
➡জোড়া লাগানো পেপারটি কোমরে জড়িয়ে প্রয়োজনীয় মাপ দাগিয়ে নিতে হবে।পরে সেই মাপ অনুযায়ী কেটে টেপ দিয়ে ফাইনালি জোড়া লাগাতে হবে। এভাবে একটি স্কার্ট এর নিচের গোলাকার অংশ তৈরী হয়ে যাবে।
➡এভাবে পর্যায়ক্রমে পেপার কাটিং এড করে পোশাকটির প্রয়োজনীয় অনেকগুলো পার্ট তৈরী করে নিতে হবে
➡ এরপর কাগজ ভাজ করে লম্বা করে পেপার বেল্ট বানিয়ে নিতে হবে। শরীরে জড়ানোর পর গাউনের পেছনের পিঠের অংশ লম্বাকারে কেটে সেখানে ডিজাইনকৃত ফিতার সাহায্যে পেপার বেল্ট লাগিয়ে দিতে হবে।
➡ সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য নকশাকৃত ফুল, রঙিন ফিতা,বেল্ট এবং ছোট বড় বিভিন্ন সাইজের কালারফুল বোতাম ব্যবহার করা যায়। আর সাথে অতিরিক্ত অংশ হিসেবে মানানসই পোশাকের সংমিশ্রণ ঘটিয়েও সৌন্দর্যবর্ধন করা যায়।

এভাবেই প্রস্তুত হয়ে যায় একটি ফ্যাশনেবল স্কার্ট বা গাউন।

🔺সম্পূর্ণ প্রসেসটি ভাল ভাবে জানতে ভিজিট করতে পারেন :
https://www.wikihow.com/Make-a-Paper-Dress

এসকল পোষাক নিত্যদিনের ব্যবহার্য হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা না পেলেও সৌখিন পোশাক হিসেবে ঠিকই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মানুষের রুচি আর শখের কদরে বিভিন্ন যায়গায় এসকল পরিচ্ছদ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দীর্ঘমেয়াদি পোশাক না হয়েও শুধুমাত্র ফ্যাশনেবল এবং বিভিন্ন কালচারের অংশ হিসেবে এসকল পোষাকের প্রচলন রয়েছে এছাড়াও নিউজপেপার প্রিন্টের পোষাকও অনেক জনগোষ্ঠীর কাছে বহুলভাবে সমাদৃত।

টেক্সটাইলের বহুলব্যবহৃত অংশ না হলেও ফ্যাশন টেকনোলজির একটি জনপ্রিয় ক্ষুদ্র অংশ এই “নিউজপেপার ক্লোথিং”। সম্পূর্ণ বিষয়টিকে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরার চেষ্ঠা করেছি মাত্র।
ধন্যবাদ।

তথ্যসূত্র : Google, Wikipedia, Jagonews24.com

Writer info:
Md Rashid
Dept of Fabric Engineering (First Batch)
Dr. M A Wazed Miah Textile Engineering College.

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here