Thursday, March 28, 2024
More
    HomeTechnical Textileডিফেন্স সেক্টরে টেক্সটাইলের রাজত্ব।

    ডিফেন্স সেক্টরে টেক্সটাইলের রাজত্ব।

    প্রাচীনকাল থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত সভ্যতা, রাষ্ট্র ও রাজনীতির অগ্রগতির ক্ষেত্রে সামরিক শক্তি অন্যতম সহায়ক উপাদান ছিল । যুদ্ধের প্রয়োজনে সামরিক শক্তি অপরিহার্য ছিল। প্রয়োজনের তাগিদে প্রতিটি দেশ, জাতি ও সভ্যতায় সামরিক কাঠামো, যুদ্ধাস্ত্র প্রভৃতির ধারাবাহিক পরিবর্তন ঘটেছে। সামরিক বাহিনীতে পদাতিক, রথ, বা হস্তিবাহিনীর পরিবর্তে বর্তমানে ট্যাংক বা সাঁজোয়া বাহিনী, বিমানবাহিনী প্রভৃতি এবং তীরধনুক, তরবারি, বল্লম, কুঠার প্রভৃতির পরিবর্তে বর্তমানে কামান, বন্দুক, বোমা বিষাক্ত গ্যাস প্রভৃতির প্রচলন হয়েছে। উনবিংশ শতক পর্যন্ত ঐতিহাসিকদের যুদ্ধ-সংক্রান্ত আলোচনা যুদ্ধের কারণ ও ফলাফলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমানকালে এই ধারার পরিবর্তন ঘটেছে। বর্তমানে যুদ্ধাস্ত্র, সামরিক সজ্জা, রণকৌশল, সামরিক পোশাক প্রভৃতি খুঁটিনাটি বিষয়ও ইতিহাসচর্চায় স্থান পেয়েছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে যে প্রযুক্তিগত টেক্সটাইল ব্যবহৃত হয় তাকে ডিফেন্স টেক্সটাইল বলে। যেমনঃ সামরিক বেল্ট, সামরিক জুতো এবং ইউনিফর্ম।

    ফ্যাশনে মিলিটারি হাওয়াঃ

    একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব সেই সঙ্গে সে কতটুকু ফ্যাশন সচেতন তা প্রকাশ পায় তার পোশাকে। পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পোশাকের ধরন-ধারণে আসে পরিবর্তন। পোশাকে একেক যুগে একেক ধরনের ফ্যাশন দেখতে পাওয়া যায়। যুগের প্রয়োজনে আবহাওয়ার সঙ্গে তাল রেখে ফ্যাশনেবল সব পোশাক যুক্ত হয় ফ্যাশন জগতে। যার কারিগর থাকেন আমাদের ফ্যাশন ডিজাইনাররা। তেমনি ফ্যাশনে একটি নতুন প্যাটার্ন হলো মিলিটারি ফ্যাশন। যা বর্তমান পোশাকের ফ্যাশনে মিলিটারি ফ্যাশন নতুন মাত্রা যোগ করেছে । গত কয়েক বছরে বেশ জোরালোভাবে এই প্যাটার্ন আলোচনায় এসেছে। ফ্যাশন জগতে মিলিটারি ট্রেন্ড ফ্যাশন ডিজাইনারদের সৃজনশীলতার অন্যতম বহিঃপ্রকাশ। কেননা পোশাকে এমন একটি প্যাটার্ন কেউ ভাবেনি আগে আমাদের দেশে। এর বিশেষত্ব হলো মিলিটারিদের পোশাকের কাটিং, প্যাটার্ন, রং, নকশা এমনকি ডিজাইন অনুষঙ্গ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

    মিলিটারি ফ্যাশন পশ্চিমা বিশ্বে দেখা গেলেও প্রাচ্য ফ্যাশনে খুব একটা দেখতে পাওয়া যায়নি এর আগে। বিশ্বায়নের এই যুগে প্রাচ্য ঝুঁকছে পাশ্চাত্যের ফ্যাশন ধারায়। যার ফলে মিলিটারি ফ্যাশনের হাওয়া এদেশের ফ্যাশন জগতেও লেগেছে।

    পোশাকে মিলিটারি ফ্যাশন কথাটি শুনলেই মনে হতে পারে মিলিটারি ইউনিফর্ম কিংবা মিলিটারি প্রিন্টের কোনো পোশাক। আসলে বিষয়টি এমন নয়। প্রকৃত অর্থে মিলিটারি ফ্যাশন বলতে কিছু নেই। এটি হলো মিলিটারি ইউনিফর্ম বা প্রিন্ট দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে চলতি ফ্যাশনের মিশেলে তৈরিকৃত পোশাক। এই মিলিটারি প্যাটার্নের পোশাক একজন ব্যক্তির মধ্যে আভিজাত্য, আত্মবিশ্বাসী ও ক্ষমতাধর লুক আনে। সাধারণ মানুষের কাছে যাতে এ ধরনের পোশাক পৌঁছাতে পারে তাই এই ট্রেন্ড-এর আবির্ভাব। এই মিলিটারি প্যাটার্ন সমসাময়িক সময়ে বেশ জনপ্রিয় ট্রেন্ড হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বিশ্বের বিখ্যাত সব ফ্যাশন ডিজাইনাররা মিলিটারি প্যাটার্ন নিয়ে কাজ করেছেন। তাছাড়া ফ্যাশন জগতে এই ট্রেন্ড সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতাও পেয়েছে বেশ।

    সামরিক বেল্টঃ

    সামরিক ইউনিফর্মে সেনা বেল্ট হলো কাঁধের বেল্ট। এটি এমন একটি প্রশস্ত বেল্ট যা সাধারণত কাঁধের উপরে এবং সারা শরীর জুড়ে থাকে। পলিপ্রোপিলিন (পিপি) দিয়ে উপাদান তৈরি করা হয় আর্মি বেল্ট ওয়েবিং। এটি বিভিন্ন ধরণের অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহৃত একটি থার্মোপ্লাস্টিক পলিমার। পলিপ্রোপিলিন (পিপি) ওয়েবিং টেপ একটি শক্তিশালী এবং সংকীর্ণ বস্তু। উল্লেখ্য ডিফেন্স টেক্সটাইলে ব্যবহৃত ফেব্রিক দিয়ে পিপি ওয়েবিং টেপ, খেলাধুলার সরঞ্জাম, প্যারাসুট, কার্গো, শিল্প নিরাপত্তা ব্যাগ, কুকুর ফাঁস ইত্যাদি তৈরি করা হয়।

    ক্যামোফ্লাজঃ

    উইকিপিডিয়া বলছে, যেকোনো কিছুর রঙিন বর্ণের ব্যবহারের মাধ্যমে কোনো পশু, পাখি অথবা কোনো বস্তুকে ভিন্ন রুপ দিয়ে আড়াল করে রাখা বা থাকার ব্যাপারটাই ক্যামোফ্লাজ। তবে গোপনীয়তা রক্ষার্থে মানুষের মনে বিভ্রান্তি তৈরি করার জন্যই নাকি এই ক্যামোফ্লাজ টার্মের উৎপত্তি। আর অভিধান বলছে, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের হঠাৎ করে লুকিয়ে যাওয়া, আশেপাশে যা কিছু আছে তার সাথেই মিলিয়ে যাওয়া, অস্ত্রগুলো হুটহাট লুকিয়ে ফেলা বা যেকোনো উপায়েই নিজেদের স্বাভাবিক দৃষ্টির আড়ালে নিয়ে যাওয়াটাই ক্যামোফ্লাজ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে এই মিলিটারি ক্যামোফ্লাজের কৌশল খুব রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।

    তাপমাত্রা সংবেদনশীল পোশাকঃ 

    পোশাকের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো এটি শরীরকে উষ্ণ ও শীতল রাখে। স্মার্ট টেক্সটাইল প্রযুক্তি বাজারে আনছে এমন পোশাক যা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবে। অস্ট্রেলিয়ার মাউনটেইন ডিজাইনার ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার ক্যাম্পবেল বলেন, এই পোশাক এমন প্যারাফিন দ্বারা আবৃত যা তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। প্যারাফিন মোমের মতো একটি পদার্থ। গরম অনুভূত হলে এটি তরলে রূপান্তরিত হয়ে তাপ বের করে দেয় আর শীত অনুভূত হলে এটি কঠিন হয়ে যায় এবং পরিধানকারীর শরীরের তাপ ধরে রাখে। এটি মূলত ডিফেন্স টেক্সটাইল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

    টেক্সটাইল পণ্যগুলোর নিম্নলিখিত ধর্মগুলোর পরিবর্তন করে  সেটি ডিফেন্স টেক্সটাইল এর অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভবঃ

    1. Thermal  

    2. Mechanical

    3. Chemical  

    4. Electrical 

    5. Magnetic

    6. Optical

    ডিফেন্সে ব্যাবহৃত কাপড়গুলি চরম জলবায়ু পরিস্থিতি, দেহের আকস্মিক গতি এবং ধ্বংসাত্মক পারমাণবিক বা রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে সৈন্যদের রক্ষা করার জন্য তৈরি করা হয়। তদুপরি, এই প্রযুক্তিগত টেক্সটাইলের কার্যকারিতা এখানেই শেষ হয়নি। যোদ্ধাদের পারফরম্যান্স বাড়াতে এবং যুদ্ধে তাদের জীবন বাঁচানোর জন্য এই ফেব্রিকের গুরুত্ব ব্যাপকভাবে স্বীকৃত হয়েছে।

    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এই খাতে যথেষ্ট উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আজ ফ্যাব্রিক প্রযুক্তিতে অগ্রগতির ফলে সৈন্যদের ইউনিফর্মগুলিতে অসাধারণ পরিবর্তন ঘটেছে। সামরিক ইউনিফর্মটি কেবল সুরক্ষার উদ্দেশ্যেই কাজ করে না তবে তাদের লড়াইয়ের একটি অন্তর্নিহিত অংশে পরিণত হয়েছে।

    Writer Information:

    Sajjadul Islam Rakib

    Dept. of Textile Engineering

    National Institute of Textile Engineering and Research-NITER   

    Batch-10           

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments