ফাস্ট ফ্যাশন
ফাস্ট ফ্যাশন বর্তমান বিশ্বে বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। কিন্ত এর মানে কি আমরা সবাই জানি! ফাস্ট ফ্যাশন কি? ফাস্ট ফ্যাশন কে যুগের হাল ফ্যাশন হিসেবে সঙ্গায়িত করা যেতে পারে যা
বিভিন্ন ফ্যাশন ক্যাটওয়্যাক বা রানওয়ে মডেল বা তারকাদের জীবন সংস্কৃতি থেকে অনুপ্রানিত হয়ে পোশাকে রূপান্তরিত করে, এবং ভোক্তাদের চাহিদা মেটাতে দ্রুত ও বিপর্যস্ত গতিতে পোশাক তৈরি করে ও হাই এন্ড পোশাকের দোকান গুলোতে সস্তায় বিক্রি করে।ফাস্ট ফ্যাশন কে এক কথায় সহজলভ্য, দ্রুত এবং সস্তা ও বলা যেতে পারে। ফাস্ট ফ্যাশনের মূল লক্ষ্য থাকে যত দ্রুত সম্ভব বাজারে নতুন পোশাক ছাড়া এবং জনপ্রিয়তার শীর্ষে থেকে ক্রেতাদের ছিনিয়ে নেওয়া ।দুঃখের বিষয় হচ্ছে এই লক্ষ্যের কারণে পোশাক কিছুদিন পরেই বাতিল করে দিতে হয়। কারন ফাস্ট ফ্যাশন “ পোশাকের পুনরাবৃত্তি করা ফ্যাশনের ভুল এবং কাউকে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে হালের সর্ব শেষ সংযোজনের সাথে নিজেকে মিলেয়ে চলতে হবে” এমন ধারণা দ্বারা প্রভাবিত। এই অত্যাধিক উৎপাদন এবং ব্যাবহার ফ্যাশন ইন্ড্রাস্ট্রিকে বিশ্বের বৃহত্তম দূষণকারী খাত হিসেবে গড়ে তুলছে।
ফাস্ট ফ্যাশনের বর্তমানের সাথে সাথে ফাস্ট ফ্যাশনের ইতিহাস আমাদের জানা দরকার। শিল্প বিপ্লব নতুন প্রযুক্তির সাথে আমদের পরিচয় করিয়ে দেয় যেমন সেলাই মেশিন। এর ফলে জামা কাপড় তৈরি সহজ,দ্রুত,এবং সস্তা হয়ে ওঠে।মধ্যবিত্তদের জন্য পোশাকের দোকান গড়ে ওঠে। ১৯৬০ এবং ৭০ এর দশকে তরুণরা নতুন ধারণার প্রবর্তন শুরু করে। তারা পোষাক কে মনের অভিব্যাক্তি প্রকাশের একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার শুরু করে। ১৯৯০ এবং ২০০০ এর দশকের শেষের দিকে সস্তা এই ফ্যাশনের চাহিদা উচ্চতার শীর্ষে পৌছায়।অনলাইন কেনাকাটার প্রচলন শুরু হয়। এবং ফাস্ট ফ্যাশনের খুচরা বিক্রেতারা যেমন H&M,ZARA ফ্যাশন ইন্ড্রাস্ট্রির হাই স্ট্রিট টপ শপ গুলো দখল করা শুরু করে। H&M ফাস্ট ফ্যাশন জায়ান্টগুলির মধ্যে সবথেকে প্রাচীন। ১৯৪৭ সালে সুইডেনে হেন্নেস নামে প্রথম এদের যাত্রা শুরু হয়, ১৯৭৬ সালে লন্ডনে বিস্তৃত হয় এবং পরবর্তীতে ২০০০ সালের মধ্যে স্টেট এ বিস্তার লাভ করে।
আমাদের দেশে ফাস্ট ফ্যাশনের মূল রিটেইলার শপ গুলোর মধ্যে আড়ং,এস্টাসি,কে ক্রাফট, অঞ্জন্স অন্যতম।
ফাস্ট ফ্যাশন পোশাক কে সস্তা এবং দ্রুত তম সময়ে মানুষের কাছে আনলেও এর ক্ষতিকর প্রভাব দিন কে দিন বেড়ে চলেছে। যেমন পলিয়েস্টার বহুল ব্যাবহৃত একটি ফেব্রিক যা মূলত জীবাশ্ম জ্বালানী উদ্ভুত এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিং এ ভূমিকা রাখে। এছাড়া ওয়াশিং এর সময় এর মাইক্রোফাইবার পানির সাথে মিশে সমুদ্রের প্লাস্টিক দূষণ বাড়িয়ে চলছে।
তবে আশার আলো হচ্ছে ফাস্ট ফ্যাশন কোম্পানি গুলো সাস্টেইনেবলিটি দিকে জোর নজর দিচ্ছে। ইকো ফ্রেন্ডলি পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
স্লো ফ্যাশন
স্লো ফ্যাশন কি? সহজ করে বললে ফাস্ট ফ্যাশনের বিপরীত। স্লো ফ্যাশন ফ্যাশন ইন্ড্রাস্ট্রির অন্তর্ভুক্ত সবকিছুর , যেমন পোশাক তৈরির প্রোয়জনীয় প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে সবকিছুর প্রতি সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি রাখে। স্লো ফ্যাশন ভালো মানের পোশাক কেনাকে সমর্থন করে যা দীর্ঘস্থায়ি হবে। স্লো ফ্যাশন মানুষ,প্রানী ,পৃথিবী সব কিছুর প্রতিই সম্মানের দৃষ্টি রাখে।
স্লো ফ্যাশনের মূলনীতি হচ্ছে নীতি মেনে পোশাক তৈরি করা,যা পরিবেশ বান্ধব হবে,দীর্ঘস্থায়ি হবে এবং রিসাইকেল করা যাবে। ফাস্ট ফ্যাশনের ফলে যে ল্যান্ডফীল ও পরিবেশ দূষণ হচ্ছে তা নিয়ন্ত্রনে আনা স্লো ফ্যাশনের লক্ষ্য।
স্লো ফ্যাশনের ইতিহাস খুজতে গেলে দেখা যায় ফাস্ট ফ্যাশনের পূর্বর্তী সব কিছুই স্লো ফ্যাশন ছিল। ১৮০০ সালের আগের ফ্যাশন স্লো ফ্যাশন ছিল। আগে মানুষকে উল বা চামড়ার মতো উপকরণ নিজস্ব ভাবে সংগ্রহ করা লাগত,তারপর সেগুলো প্রস্তুত করা লাগত,বোনা লাগত ,কাপড় বানানো লাগত ,তারপর পোশাক তৈরি করা যেত।
স্লো ফ্যাশনের উৎপাদন প্রক্রিয়া বেশ সময় সাপেক্ষ,যার কারনে দেখা যায় ভোক্তার চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয় না তখন ভোক্তা আবার ফাস্ট ফ্যাশনের দিকে ঝুকে পড়ে।
তবে বর্তমানে বেশ কিছু অত্যাধুনিক কোম্পানি স্লো ফ্যাশন নিয়ে কাজ করছে যাতে করে তারা সহজেই ভোক্তা চাহিদা মেটাতে পারে। এমন কিছু কোম্পানি হচ্ছে OhSevenDays, A.BCH, ASKET।
আমাদের দেশে স্লো ফ্যাশন নিয়ে কাজ করা উল্লেখযোগ্য কিছু ব্রান্ড হচ্ছে আড়ং,বিবিয়ানা,খুঁত।এছাড়াও কিছু অনলাইন ব্রিক্রী ভিত্তিক ব্রান্ড পটের বিবি, বিজেন্স উল্লেখযোগ্য ভাবে বাংলাদেশে স্লো ফ্যাশন নিয়ে কাজ করছে।
পোশাক আমাদের মৌলিক চাহিদার গুলোর মধ্যে প্রধানতম একটি চাহিদা। ফাস্ট ফ্যাশন হোক আর স্লো ফ্যাশন কোনো একটা বেছে নিয়ে আমরা এ চাহিদা মিটিয়ে থাকি। আমাদের পৃথিবীর প্রতি সচেতন দৃষ্টি রাখা শুধু ফ্যাশন ইন্ড্রাস্ট্রি গুলোর ই দায়িত্ব না, আমাদের ও দায়িত্ব। ফ্যাশন ইন্ড্রাস্ট্রি থেকে হওয়া এই দূষণ রোধে আমরা কি কিছু করতে পারি না! এ সম্পর্কে বলার জন্য ব্রিটিশ ডিজাইনার ভিভিয়েন্ন ওয়েস্টউডের একটি উক্তিই যথেষ্ট “Buy less, choose well, make it last.”
Writer Information
Nusrat Taz.
B.S.C 2nd Year, Batch-22.
Department Of Clothing And Textile,
National College Of Home Economics.