চুপি চুপি কোথা থেকে
এলো আজ শীত
গুন গুন গায় পাখি
শীত শীত শীত।
এই কবিতাটি শীতের কথাই মনে করিয়ে দিল, তাই তো!! শীত মানেই এক ধরনের সংগ্রাম। আমরা জানি সংগ্রামী জীবনে মানুষকে পরিবেশ, পরিচিতি, ঋতু বৈচিত্র্য সবকিছুর সাথেই সংগ্রাম করতে হয়। শীতের সাথেও লড়াই করতে চাই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি। তবে কি সেটা ঢাল তলোয়ার?? নিশ্চয়ই না। নিজেকে সুরক্ষিত রাখার মাধ্যমেই সহজে শীতকে পরাজিত করা যায়। সেক্ষেত্রে মোজা, টুপি এবং মাফলার নামক ছোট্ট জিনিসগুলো কিন্তু আপনার ত্বকের বন্ধুই বটে। এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে নিচের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন –
শীত বাংলাদেশের ছয় মৌসুমের একটি। এটি ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়ে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে। ঠান্ডা আবহাওয়া থেকে নিরাপদ থাকার জন্য আপনার উষ্ণ পোশাক পরিধান করা গুরুত্বপূর্ণ। শীতের দিনে সোয়েটার,চাদর, শাল, জ্যাকেটসহ নানা সরঞ্জামের মাধ্যমে শীত নিবারণের চেষ্টা চললেও নাকে, কানে এবং মুখে বাতাস ঢোকা বন্ধ করতে টুপি-মাফলারের এবং হাত-পা উষ্ণ রাখার জন্য মুজার বিকল্প নেই। অতীতে টুপি, মাফলার শুধু ছেলেরা ব্যবহার করলেও কালের বিবর্তনে এখন মেয়েরাও এসব ব্যবহার করা শুরু করেছে। তবে নকশা বা আকৃতিতে কিছুটা ভিন্নতা আছে। শীতের অনুষঙ্গ আজকাল শীত নিবারণের পাশাপাশি ফ্যাশনকেও করেছে সমৃদ্ধ। তাছাড়া শীত নিবারণের এসব মাফলার ও টুপি দুটিই গায়ে জড়ানো যায় নানা কায়দায়। ফলে ফ্যাশনেবল দেখার পাশাপাশি শীত থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
শীতের মাফলার:
আজকাল প্রায় সব তরুণ-তরুণীরাই শীতের দিনে বাইরে বের হবার আগে গলায় জড়িয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন ডিজাইনের মাফলার। তীব্র শীতে নাক-কান-গলা-মাথা উষ্ণ রাখতে মাফলার খুবই জনপ্রিয় শীত বস্ত্র। বাজারে উল, এন্ডি কটন, ফ্লানেল, খাদি, মখমল ইত্যাদি ফেব্রিকের মাফলার পাওয়া যায়। আমাদের দেশে সাধারণত দুই ধরনের মাফলার পাওয়া যায়-
১. সুতি: সুতির মাফলারগুলোতে লতাপাতার ডিজাইন, জ্যামিতিক নকশা, চেক ও স্টাইপ ডিজাইন রয়েছে।
২. উলের তৈরি: উলের মাফলারগুলোতে করা হয় উলের কাজ। কিছু কিছু মাফলার জমকালো করার জন্য জরি সুতার কাজ করা হয়।
এ দুই ধরনের মাফলারের রয়েছে অনেক ডিজাইন এবং অনেক রঙ। মাফলারের ক্ষেত্রে স্টাইল যাই হোক না কেন মাফলারের ফেব্রিক এবং কালার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন চেক প্রিন্ট মাফলার ছেলেদের পছন্দের শীর্ষে। তাছাড়া কালার নির্বাচনের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল রঙই ভালো হতে পারে। তাই পোশাকের রঙ, কর্মস্থল এবং পরিবেশের সঙ্গে মিলিয়ে নির্বাচন করা যাবে পছন্দের মাফলারটি।
শীতের টুপি:
শীতে মাফলারের পাশাপাশি টুপিরও রয়েছে অনেক চাহিদা। মাথা ও কান হিমেল বাতাস থেকে রক্ষা করতে নানা রকম টুপির জনপ্রিয়তা আছে। যারা একদম ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না তাদের জন্য টুপির কোনো বিকল্প নেই। তবে আজকাল ফ্যাশনেবল হিসেবেও টুপি ব্যবহার করা হয়। বাজারে বিভিন্ন ধরনের টুপি পাওয়া যায়। যেমন কান ঢাকা টুপি, মাফলার টুপি, ক্যাপের মতো টুপি। তাছাড়া আজকাল বিভিন্ন ডিজাইন এবং রঙের টুপি পাওয়া যায় যেগুলো যেকোনো পোশাকের সাথেই পরা যায়।
আজকাল কান ঢাকা টুপি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্ক ব্যক্তিসহ প্রায় সকলেই এই ধরনের টুপি পরে থাকে। ছোটদের জন্য ব্যবহৃত এসব টুপিকে বলা হয় ভালুক টুপি, কাটুন টুপি। মাফলার টুপি গুলো দিয়ে কান ছাড়াও গলা জড়িয়ে রাখা যায়। এই টুপির প্রান্তভাগ মাফলারের মতো কাজ করে। ক্যাপের মতো টুপি গুলো গেঞ্জি কাপড় থেকে একটু মোটা কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়। অনেক সময় উলেরও হয়ে থাকে। ছেলেমেয়েদের কাছে এই টুপির জনপ্রিয়তা বেশি। মেয়েদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় টুপি হল ঝুলা টুপি কারণ এই টুপি পিছনের দিকে একটু ঝুলে থাকে ফলে রাস্তার ধুলাবালি ও শীতের আবহাওয়া থেকে চুলকে সহজেই রক্ষা করা যায়।
শীতের মোজা:
এসো পায়ে রঙ করি, মোজা পরি!
মোজা (ইংরেজি: Sock) হলো এক ধরনের হাতে এবং পায়ে পরিহিত কাপড় যা ত্বককে মসৃণ রাখে, বাইরের ধুলো ময়লা থেকে রক্ষা করে এবং শীতের রুক্ষতা থেকে ত্বককে ভালো রাখে। এটি জুতার ভেতরে বা খালি পায়ে এবং হাতে পরা হয়।
এটি মূলত কাপড়ের তৈরী। মোজার উপরিভাগ এবং ভেতরের ভাগ দেখতে হুবহু বুট জুতার মতো এবং হাত মোজা অবিকল পাঁচ আঙুল সহিত হাতের মতো। কিন্তু জুতা আর মোজার মধ্যে পার্থক্য হল মোজা কাপড়ের তৈরী এবং বিভিন্ন নকশাদার।
এটি সাধারণত কোথাও বেড়াতে যেতে বা কোনো বিশেষ জায়গায় যেতে অথবা নিজের বাসাতেই পরিধান করা হয়। এটি হাত ও পায়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে আবার হাত পা কে শীত থেকে বাঁচায়। ফুটবল ক্রিকেট থেকে শুরু করে অন্যান্য সব খেলাতেই মেয়ে-ছেলে উভয়েরই ক্ষেত্রে জার্সির সাথে মোজা পরতে হয়।অফিসিয়াল এবং আনঅফিসিয়াল উভয়ক্ষেত্রেই মোজার ব্যবহার সবখানেই দেখা যায়। এখন ফ্যাশন হিসেবেও মানুষ মোজাকে সাদরে গ্রহণ করছে। মিডিয়া জগতে মোজা এখন একধরণের ফ্যাশন ট্রেন্ড হয়ে দাড়িয়েছে। তাছাড়া এটি পা এবং হাতকে বিভিন্ন ধূলাবালি থেকে রক্ষা করে এবং হাত পা-কে সুন্দর রাখে।অনেকে পায়ে ব্যান্ডেজ ধরে রাখতে মোজা ব্যবহার করেন। ইসলাম ধর্মে মোজার উপর মাসেহ করা জায়েজ। কেননা মোজাও এক প্রকারের ঔষধ।
![Woman in Red Long Sleeved Coat](https://images.pexels.com/photos/3711652/pexels-photo-3711652.jpeg?auto=compress&cs=tinysrgb&h=750&w=1260)
জ্যাকেট:
অনেকেই মনে করেন, শীত এসে বারোটা বাজিয়ে দিল ফ্যাশনের। কিন্তু আসলে তা নয়। শীতের সময় একাধিক অনুসঙ্গ ব্যবহার করে আপনিও হয়ে উঠতে পারেন সকলের মধ্যমণি। জ্যাকেট তেমন একটি পোশাক। কিশোর, কিশোরী, তরুণ-তরুণী- সব বয়সেই পরার মতো একটি শীতের পোশাক হলো জ্যাকেট।বর্তমানে বেশ কয়েক ধরনের জ্যাকেট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পারকা নামের একধনের জ্যাকেট পাওয়া যাচ্ছে কয়েক বছর ধরে। এটি হুডি দেয়া জ্যাকেট। এর বিশেষত্ব হচ্ছে এর হুডির সাথে পশমের স্তর আছে যা প্রচন্ড শীতে আপনার মাথায় ঠাণ্ডা লাগতে দেবে না। শীতের জন্য একটি জনপ্রিয় আইটেম হচ্ছে ওভারকোট। ক্যাজুয়াল কিংবা ফরমাল উভয়ের জন্যই বেছে নিতে পারেন এই আইটেমটি।কিন্তুু বর্তমানে শীতকালীন পোশাক হিসেবে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে ট্রেঞ্চ জ্যাকেট। ১৮৫০ সালে ট্রেঞ্চ কোট প্রথম তৈরি করে ব্রিটিশ ফ্যাশন কোম্পানি অ্যাকুয়াস্কুট। এছাড়া শীতের সময়ে জিন্সের জ্যাকেটের চাহিদা তো রয়েছেই।
![Brown Haired Woman in Black Puffer Coat Standing Near the Water](https://images.pexels.com/photos/54202/pexels-photo-54202.jpeg?auto=compress&cs=tinysrgb&h=750&w=1260)
পশমিনা চাঁদর:
হিম শীতল সকাল কিংবা সন্ধ্যায় শীতকে যারা পরম আদরে আলিঙ্গন করতে চান, তারা জানেন এক কাপ ধূমায়িত চায়ের সঙ্গে একটি নরম, পেলব নক্সা কাটা শাল এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। সেটি যদি হয় কাশ্মীরি পশমিনা, তাহলে অনুভূতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে আভিজাত্যের উষ্ণতাও।
কাশ্মীরি শালের মধ্যে সব থেকে পরিচিত শাল ‘পশমিনা’। ভেড়ার পশম দিয়ে এই শাল তৈরি হয়। গোটা পৃথিবীর বাজারে এই শাল সবচেয়ে জনপ্রিয়। কায়প্রা প্রজাতির ভেড়ার গলার নিচের এবং পেটের তলার অংশের পশম দিয়ে এই শাল তৈরি করা হয়। উন্নতমানের একটি পশমিনা শাল তৈরি করতে একজন কারিগরের সময় লাগে ত্রিশ মাস। অতীতে শাল একটু বয়স্কদের পোশাক তালিকায় থাকলেও আজ সেটা তরুণদের মাঝেও জায়গা করে নিয়েছে ফ্যাশনেবল হিসেবে।
![Women's Gray and Black Plaid Dress Shirt](https://images.pexels.com/photos/1790189/pexels-photo-1790189.jpeg?auto=compress&cs=tinysrgb&h=750&w=1260)
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো, উইকিপিডিয়া, নিউজ ২৪.কম, বাংলাদেশ প্রতিদিন
Writter Information:
1) Jeba Yasmin Borsha.
Department: Apparel Engineering
Institute: Dr. M A Wazed Miah Textile Engineering College (DWMTEC)
Pirgonj,Rangpur
2) Jannatuz Faria.
Department: Apparel Engineering
Institute: Dr. M A Wazed Miah Textile Engineering College (DWMTEC)
Pirgonj,Rangpur