Friday, April 19, 2024
More
    HomeTextile Manufacturing"সিসাল তন্তুর সম্ভাবনা"

    “সিসাল তন্তুর সম্ভাবনা”

    সময় গড়িয়ে যাবার সাথে সাথে পৃথিবীতে যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে মানুষের উপস্থিতি তেমন ভাবেই বৃদ্ধি পেয়েছে মানুষের নানাবিধ চাহিদা। এ চাহিদা মেটাবার জন্য মানুষ কখনো দারস্থ হয়েছে প্রকৃতির কখনোবা নিজেদের বুদ্ধিমত্তার উপরে। মূলত প্রাকৃতিক ভান্ডার থেকেই মানুষের চাহিদার সিংহভাগ যোগান হয়ে থাকে। মানুষের মৌলিক চাহিদা গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে বস্ত্র আর এ বস্ত্রের চাহিদা মেটাবার জন্য আদি কাল থেকেই মানুষকে নানা পদ্ধতির মুখোমুখি হতে দেখা গেছে।সহজ ভাবে চিন্তা করলে বুঝতে পারবেন প্রাচীন কালে মানুষ সরাসরি গাছের পাতা কেই পরিধেয় বস্ত্র হিসেবে গ্রহন করতো কিন্তু এখন তা সরাসরি না করলেও সেই গাছের পাতা বা গাছের বাকলের আশ থেকেই পরিধেয় বস্ত্রের প্রাথমিক উপাদান টি সংগ্রহ করে। আরো সহজ ভাবে বলতে গেলে তুলো এবং আশ। যা থেকেই পরবর্তীতে তৈরী হয় বর্তমানের নানা বাহারী পোশাক। তুলো বা আশ পাওয়া যায় এমন অনেক প্রাকৃতিক উৎস রয়েছে প্রাকৃতিক ভান্ডারে। সেগুলোর মধ্যে একটি উৎস নিয়েই আজকের আলোচনা।

    সোনালী আশের মুগ্ধতায় মুগ্ধ মানুষের মাঝে হয়তো খুব বেশি পরিচিত হবার সুযোগ পায়নি সিসাল তন্তু। তাই বলে কি প্রতিভাবান এ তন্তুর প্রতিভা আড়ালেই থাকবে? না থাকেনি।সিসাল তার তন্তু গুণ মানুষের মাঝে জানান দিয়েছে দাপটের সাথে এরই একটি সাধারন উদাহরণ হচ্ছে, সর্বাধিক ব্যবহৃত প্রাকৃতিক তন্তু গুলোর মধ্যে সিসাল তন্তু একটি।খুব সহজে এ তন্তুকে গ্রহনের নেপথ্যেও রয়েছে কিছু কারণ। এই যেমন, এটি সম্পুর্ণ প্রাকৃতিক এবং মানুষ খুব সহজেই চাষ করতে পারে এবং খুব স্বাভাবিক এটি সিসাল গাছ থেকে প্রাপ্ত। “আগাবা সিসালান” হলো গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম এবং সিসাল উদ্ভিদ হিসেবেই পরিচিত সবার মাঝে। গাছটির পাতাগুলো সাধারণত তরোয়াল আকারের হয়ে থাকে এবং কচি অবস্থায় অনেক পাতার ফলে একটি গাছকে মনে হয় যেনো আস্ত একটি গোলাপ। এই অবস্থায় পাতাগুলো দাঁতে দাঁত লেগে থাকার মতো দেখায় এবং বয়বৃদ্ধির সাথে আস্তে আস্তে পাতাগুলো পরিপক্ক হয়ে আলাদা হতে থাকে।পরিপক্ক পাতাগুলি দেখতে অনেকটা এলোবেরা বা আনারস গাছের পাতার মতো। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে প্রতিটি পাতায় অনেকগুলি দীর্ঘ এবং সোজা তন্ত থাকে যা ডেকোরোটিকেশন নামক একটি জীব বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় দীর্য তন্তু গুলো পৃথক করা হয়।

    সাধারণত ডেকোরিটিকেশন পদ্ধতিতে ঝিল্লী বা তন্তু আলাদা করা হয়। তন্তু পৃথক করণের সময় অর্থাৎ ডিকোরটিকেশনের সময় উদ্ভিদ উপাদানগুলি সরাতে পাতাগুলিতে জোরে আঘাত করা হয় ফলে শক্ত তন্তগুলো নিচের দিকে আলাদা হয়ে যায়। তন্তু এবং টেক্সটাইল উৎপাদনের জন্য আলাদা হওয়া তন্তু গুলো থ্রেডে কাটা পড়ে। সিসিল তন্তু পুরোপুরি বায়োডিগ্রেটেবল। সিসাল তন্তু সম্পুর্ণ রূপে নবায়নযোগ্য একটি সম্পদ সেই সাথে খুবই টেকসই রূপী একটি তন্তু। তুলনামূলক ভাবে শক্ত হওয়ায় সিসাল থেকে প্রাপ্ত তন্তু পরিধানের জন্য ব্যবহৃত হয়না ।এই তন্তু থেকে মূলত শক্ত ব্যাগ, ঘর সজ্জার সামগ্রী, নানা ধরনের হস্তশিল্প, অনেক শক্ত দড়ি সহ অনেক ধরনের সৌখিন পণ্য তৈরী করা হয়। যা কিনা শোভা পায় আমাদের শৌখিনতার দেয়ালে।

    সিসালের তন্তুর একটি ভালো গুন হলো এতে সহজে রঙ ধরে, ফলে কম পরিশ্রমে রঙ করার কাজ টি হয়ে যায়। সীসাল চাষের সময় সাধারণ কোন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়না।এর সুবিধাজনক অনেক গুলো দিক রয়েছে। যা কিনা এই তন্তু কে এগিয়ে রেখেছে অন্যদের থেকে। প্রাকৃতিক হওয়ার তন্তুটি সম্পুর্ণ পুনর্ব্যবহারযোগ্য। এটি সংগ্রহের সময় সিসাল পাতার বাইরের দিকের ত্বক থেকে তন্তুগুলো পাওয়া যায় সেই সাথে এর ভিতরের দিকের সজ্জাটি সরিয়ে ফেলা হয়। সিসাল তন্তু প্লেড, হেরিংবোন এবং টুইল হিসাবে উপলভ্য। সিসাল তন্তুর ভালো এবং গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এটি ধূলিকণা কে আকৃষ্ট না অর্থাৎ ধুলি প্রতিরোধক সেই সাথে তন্তুটি খুব তাড়াতাড়ি পানি শোষণ করে না। এত কথার মাঝে সিসাল তন্তুর চমৎকার একটি গুনের কথা বলাই হয়নি যা কিনা তাক লাগার মতো একটি ব্যাপার। সিসাল গাছের পাতাগুলি অগ্নি প্রতিরোধের বৈশিষ্ট্য গুলি বহন করে। তাই এই তন্তু গুলো সহজে আগুনের সংস্পর্শে আসলে ক্ষতির সম্মুখীন হয় না।

    এতক্ষন কথা বলছিলাম সিসাল তন্তুর নানা গুন, নানা সুবিধা জনক দিক নিয়ে। কিন্তু এবার জানা যাক এর প্রায়োগিক কিছু দিক নিয়ে। নাহলে বুঝতেই পারবোনা এর প্রয়োজনীয়তা। প্রাচীন কাল থেকে সিসাল তার তন্তুর শক্তি, স্থায়িত্ব,বস্তু প্রসারিত করার ক্ষমতার জন্য অন্য তন্তু থেকে আলাদা। সিসাল তন্তু শিপিং কার্গো পরিচালনা করার জন্য ব্যবহৃত হয়।এই তন্তু তার দৃঢ়তা গুনের জন্য লিফট এ ব্যবহৃত ইস্পাত তারের ফাইবার কোর হিসাবে ব্যবহৃত হয়, সেই সাথে তৈলাক্তকরণ এবং নমনীয়তার জন্যও ব্যবহৃত হয়। অটোমোবাইল শিল্পে যৌগিক উপকরণগুলিতে ফাইবারগ্লাস সহ এই সিসাল তন্তু ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও সিসাল তন্তু থেকে কিছু মাদুর সহ ওয়ালমেট ও প্রস্তুত করা হয়ে থাকে।

    আমরা অনেকে সিসাল তন্তুর সাথে পরিচিত আবার অনেকেই পরিচিত না এই তন্তু সাথে কিন্তু আড়ালে আবডালে আমরা নানা ভাবেই এই তন্তু থেকে তৈরীকৃত সামগ্রী ব্যবহার করে থাকি। আমাদের দেশে সিসাল চাষ এর ব্যাপারে মানুষের মাঝে খুব একটি আগ্রহ দেখা যায় না।যদি দেশে বাণিজ্যিক ভাবে সিসাল চাষ শুরু করা যায় তাহলে পাট শিল্পের মত নতুন মাত্রা পাবে সিসাল, সেই সাথে হয়ে উঠতে পারে লাভজনক একটি প্রকল্পে।

    Writer information:
    Muntachir Rahman
    Department Of Textile Engineering
    Batch:201
    BGMEA UNIVERSITY OF FASHION AND TECHNOLOGY

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments