Friday, April 26, 2024
More
    HomeWeavingসুই সুতার বুননে টেক্সটাইল

    সুই সুতার বুননে টেক্সটাইল

    টেক্সটাইল মানেই বৈচিত্র্যময়। বিশ্বের প্রতিটি বস্তুকে টেক্সটাইল এর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা যায় !!! ভাবছেন কিভাবে????এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য নিচের আর্টিকেলটি পড়ুন
    টেক্সটাইল ডিজাইন- সুন্দরের চাহিদা পৃথিবীর শুরু থেকেই । যে শিল্পে যত বেশি মাধুর্য থাকে সেই শিল্পের চাহিদাও বেশি হয়। তেমনি টেক্সটাইল শিল্পের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে টেক্সটাইল ডিজাইন নামে একটি সৃজনশীল ক্ষেত্র ।ডিজাইনকে শিল্পবিদ্যার ভাষা বলা হয়ে থাকে ।মূলত, টেক্সটাইল সংক্রান্ত শিল্পকে কাপড়ের বুননে প্রতিফলিত করাকে টেক্সটাইল ডিজাইন বলে ।
    টেক্সটাইল ডিজাইন প্রধানত দুই প্রকার
    যথাঃ

    ১. স্ট্রাকচারাল ডিজাইনঃ যে ডিজাইনের মাধ্যমে সুতার কারিগরি শিল্পকে ফুটিয়ে তোলা হয়, তাকে স্ট্রাকচারাল ডিজাইন বলে।

    ২. আর্টিস্টিক ডিজাইনঃ যে ডিজাইনে রং ও তুলি ব্যবহার করে কাপড়ে বিভিন্ন ডিজাইন ফুটিয়ে তোলা হয় তাকে আর্টিস্টিক ডিজাইন বলা হয়।টেক্সটাইল ডিজাইন মূলত ফ্যাশন, পোশাকের অভ্যন্তরীণ ডিজাইন এবং চারুকলার মতো অন্যান্য শাখার সাথে এটি শিল্পের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। টেক্সটাইল ডিজাইনিং বর্তমানে এমন একটি সৃজনশীল ক্ষেত্র যা ফ্যাশন ডিজাইন, কার্পেট উৎপাদন এবং সকল কাপড়-সংক্রান্ত ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করে যেমন:-পোশাক, গালিচা, ড্রিপস, তোয়ালে ।
    টেক্সটাইল ডিজাইনের মাধ্যমে টেক্সটাইল ডিজাইনারদের নিখুঁত দক্ষতা প্রকাশ পায়। টেক্সটাইল ডিজাইনাররা তাদের সৃজনশীল দৃষ্টি দিয়ে উৎপাদনের প্রযুক্তিগত দিকগুলিসহ ফাইবার, সুতা এবং রঞ্জকগুলির বৈশিষ্ট্য গভীরভাবে বুঝার মাধ্যমে একটি ডিজাইন সম্পন্ন করে থাকে । তাই ডিজাইনের ক্ষেত্রে টেক্সটাইল ডিজাইনারদের গুরুত্ব অপরিসীম ।

    টেক্সটাইল ডিজাইনের শৃঙ্খলাঃ

    যে কাজে শৃঙ্খলা নাই সেই কাজ বেশিদিন টিকে না এবং কাজটির ক্ষেত্রে মাধুর্য আসে না। তাই প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা প্রয়োজন। টেক্সটাইল ডিজাইনের ক্ষেত্রেও শৃঙ্খলা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । টেক্সটাইল ডিজাইনের শৃঙ্খলা বলতে মূলত কাপড় কিভাবে নান্দনিকভাবে মুদ্রিত করা হয়ে থাকে সেটা বুঝায়। ডিজাইন করার জন্য ফেব্রিক বা কাপড় সহ যেকোন মিডিয়াতে বিভিন্ন প্রকার মুদ্রণ প্রক্রিয়াগুলি দ্বারা মুদ্রিত করা হয়। 
    এগুলো হলো:-প্রিন্টিং,ত্রাণ মুদ্রণ,রোটোগ্রাভর,স্ক্রিন প্রিন্টিং,ট্রান্সফার প্রিন্টিং,ডিজিটাল প্রিন্টিং। 
    মুদ্রণ প্রক্রিয়াগুলি নান্দনিকভাবে ছাপাতে বিভিন্ন কালি বা রং ব্যবহার করা হয়। 

    কিছু বিশেষ ধরনের মুদ্রিত ডিজাইন রয়েছে সেগুলো হলো-
    1.বিভিন্ন ফুল দিয়ে মুদ্রিত ডিজাইন। ফুল পৃথিবীর সবাই পছন্দ করে।ফুল দ্বারা তৈরি যেকোন ডিজাইন দেখতে যেমন সুন্দর লাগে তেমনি এর চাহিদাও বেশি।

    2.জ্যামিতিক নকশা দিয়ে মুদ্রিত ডিজাইন। বিভিন্ন অজৈব এবং বিমূর্ত উভয় এর নানা ধরনের বৈশিষ্ট্য এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।জ্যামিতিক ডিজাইন একটি মজার ট্রেন্ড যাতে সাধারণ শেইপ, লাইন এবং বক্র রেখাকে মিশিয়ে সৃজনশীল ফলাফল তৈরীতে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

    3.বিশ্ব সংস্কৃতি ফুটিয়ে তুলতে সংস্কৃতি দিয়ে মুদ্রিত ডিজাইন। বর্হিরবিশ্বের সংস্কৃতির নকশা, ভৌগলিক অবস্থান, বিভিন্ন নৃগোষ্ঠী বা নৃতাত্ত্বিক উৎসের প্রভাব এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে। যুগ যুগ ধরে মানুষ তাদের সংস্কৃতি বজায় রাখার জন্য কাপড়ে বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন করে থাকে ।টেক্সটাইলে আমরা যেসব আকর্ষণীয় রং এর কাপড় দেখি বা ব্যবহার করি তার পিছনে রয়েছে রং এর ব্যবহার। এই রং দ্বারাই মূলত টেক্সটাইল ডিজাইন গুলো ফুটিয়ে তোলা হয়।
    বিভিন্ন কাপড়ের তৈরি পোশাকের জন্য বিভিন্ন বর্ণের বা রং এর প্রয়োজন হয়ে থাকে। উদাহরণঃ সিল্ক, উল বা অন্যান্য প্রোটিন-ভিত্তিক কাপড়গুলিতে অ্যাসিডযুক্ত বর্ণের প্রয়োজন হয়। তবে সিন্থেটিক কাপড়গুলিতে বিশেষ রঞ্জকের প্রয়োজন হয়ে থাকে ।

    আধুনিক পৃথিবীতে সবকিছু যেমন সময়ের সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে ঠিক তেমনি টেক্সটাইলের আধুনিক সরঞ্জামগুলি টেক্সটাইল ডিজাইনকে করেছে আরও কার্যকর, সহজ এবং টেকসই। ডিজিটাল টেক্সটাইল এক অনন্য মাত্রা যুক্ত করেছে টেক্সটাইল ডিজাইনের ক্ষেত্রে। ফলে আগের থেকে আরো নান্দনিকভাবে টেক্সটাইল ডিজাইনগুলি খুব সহজেই নিখুঁতভাবে করা সম্ভব হচ্ছে ।উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অ্যাডোবি ফটোশপ বা ইলাস্ট্রেটারের মতো কম্পিউটার-এডেড ডিজাইন সফ্টওয়্যারের আবির্ভাব টেক্সটাইল ডিজাইনের প্রতিটি বিভাগকে নতুন করে বিকশিত ও উদ্ভাবনের সুযোগ দিয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে মুদ্রিত টেক্সটাইল ডিজাইন।

    বোনা টেক্সটাইল ডিজাইনঃ বোনা টেক্সটাইল ডিজাইনটি বুননের মাধ্যমে উদ্ভূত হয় যা বেশিরভাগ সময় ডান কোণে উল্লম্ব সুতা(ওয়ার্প) এবং একটি অনুভূমিক সুতা(ওয়েফ্ট) সংযুক্ত করে ফেব্রিক উৎপাদন করে । বোনা টেক্সটাইল ডিজাইনগুলি বিভিন্ন ধরণের তাঁত দ্বারা তৈরি করা হয়।এখন প্রধানত যান্ত্রিকীকরণ বা কম্পিউটারাইজড জ্যাকওয়ার্ড তাঁত ব্যবহার করে উৎপাদিত হয় ।বোনা ফেব্রিক ডিজাইনের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুতা ব্যবহার করা হয়। তবে এতে তুলা, টোয়েল, লিনেন এবং সিন্থেটিক ফাইবারগুলি সীমাবদ্ধ নয়। বোনা ফেব্রিক উৎপাদন করার জন্য ডিজাইনার প্রথমে ডিজাইনটি কল্পনা করে, যা একটি পয়েন্ট পেপার হিসাবে পরিচিত গ্রাফ পেপারে আঁকা হয়। ডিজাইনার কাজটি সম্পন্ন করার জন্য একটি সরল তাঁত ব্যবহার করে। এ প্রক্রিয়ায় একটি নরম ফেব্রিক তৈরি হয়।বুনন কাঠামোর বাইরেও, রঙ বোনা টেক্সটাইল ডিজাইন নিয়ন্ত্রণে আরেকটি প্রভাবশালী দিক। রঙ সুতার আকারের উপর নির্ভর করে। সূক্ষ্ম সুতাগুলি এমন একটি ফেব্রিক তৈরি করে যা রঙ পরিবর্তন করতে পারে যখন এটি বিভিন্ন কোণ থেকে আলো পায়। মিশ্র মিডিয়া টেক্সটাইল ডিজাইনঃমিশ্র মিডিয়া টেক্সটাইল ডিজাইনগুলি এমব্রয়ডারি বা বিভিন্ন ফেব্রিক ম্যানিপুলেশন প্রক্রিয়াগুলি যেমন প্লেইটিং , অ্যাপ্লিক্যু , কুইলটিং এবং লেজার কাটিং ব্যবহার করে উৎপাদিত হয় । টেক্সটাইল পৃষ্ঠে নকশা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সেলাই প্রয়োগ করা হয় একে সূচিকর্ম বলে।যদিও শিল্প এবং যান্ত্রিকতার কারণে সূচিকর্ম স্ট্যান্ডার্ড হয়ে উঠেছে।হাতের সেলাই এখনও টেক্সটাইল শিল্পের কিছু কিছু ক্ষেত্রে রয়ে গেছে। তবে সেটা শুধু ক্রস সেলাই , চেইন সেলাই এবং পালঙ্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় । কুইলটিং প্রক্রিয়াটি টেক্সটাইলে নিরোধক, উষ্ণতা বাড়ানো এবং নান্দনিক বৈশিষ্ট্য প্রয়োগ করে থাকে ।কুইলটিং এর মাধ্যমে একজন শিল্পী তার ব্যক্তিগত বা সাম্প্রদায়িক বর্ণনাকে কাপড়ে ফুটিয়ে তুলে। কুইলটিং মূলত রঙের গঠনবিন্যাস এবং জ্যমিতিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে কাজ করে। কুইলটিং প্রায়শই পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাপড়ে ব্যবহার করা হয়।উদাহরণস্বরূপঃ হামংয়ের লোকেরা পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের সাথে তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করার জন্য গল্পের পটকা বা কাপড় তৈরির রীতি রয়েছে।টেক্সটাইল ডিজাইন এবং পরিবেশঃটেক্সটাইল শিল্পের সাথে পরিবেশের সম্পর্ক অতি ঘনিষ্ঠ। তাই টেক্সটাইল ডিজাইন সম্পন্ন করার ধাপগুলো পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলে থাকে।

    যেসকল পদক্ষেপ পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলে থাকে সেগুলো হলো-১.কাঁচামাল থেকে কাপড় উৎপাদন২.রঞ্জনবিদ্যা ৩.সমাপ্তি ৪.পণ্যগুলির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি প্রতিটি পদক্ষেপ পরিবেশগত প্রভাবের সাথে জড়িত। তাই প্রচুর ব্যবহৃত বিপজ্জনক রাসায়নিক বস্তুগুলি সঠিকভাবে নিষ্পত্তি করতে হবে। কারণ এই সকল রাসায়নিক পদার্থ গুলো পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। দ্য এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী বছরে ১৫ লক্ষ টন টেক্সটাইল বর্জ্য তৈরি করা হয়। যেখানে মোট বর্জ্যের মাত্র ১৫% পুনরুদ্ধার এবং রিসাইক্লিং এএ মাধ্যমে পুনরায় ব্যবহার করা হয়।এই উদ্যোগগুলি টেকসই টেক্সটাইল ডিজাইনের প্রতি সকলের মধ্যে সচেতনতার জন্ম দেয়। উদাহরণস্বরূপঃ লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটি অফ আর্টস ডিজাইন প্রতিযোগিতাগুলি হোস্ট করে যা সমস্ত প্রবেশকারীদের টেকসই অনুশীলন এবং উপকরণগুলির চারপাশে তাদের নকশা এবং উৎপাদন পদ্ধতিগুলি কেন্দ্রীভূত করতে বাধ্য করে।এইভাবে পরিবেশ ওপর সচেতন থেকে এবং কাপড়ে নান্দনিক ডিজাইন ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হয় টেক্সটাইল ডিজাইনের মাধ্যমে।

    তথ্যসূত্র: Wikipedia, Textile Today.

    Writer information:
    Jannatuz Faria
    Dr. M A Wazed Miah Textile Engineering College

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments