Thursday, December 12, 2024
Magazine
More
    HomeTextile Manufacturingসেলাই মেশিন আবিষ্কারের গল্প

    সেলাই মেশিন আবিষ্কারের গল্প

    Traditional Textile Series (পর্ব-০৫)

    সেলাই মেশিন দিয়ে পোশাক তৈরীর ইতিহাস খুব বেশী দিনের নয়। আজ থেকে মাত্র ২৬৩ বছর আগে সর্বপ্রথম সেলাই মেশিন ব্যবহার করা হয়। ১৭৫৫ সালে ইংল্যান্ডের চার্লস ফ্রেডরিক প্রথম সেলাই মেশিন আবিষ্কার ও প্যাটেন্ট করেন, যেটা দ্বারা হ্যান্ড স্টিচের মত স্টিচ তৈরী করা যেত। বানিজ্যিকভাবে সেলাই মেশিন তৈরী করা হয় ১৮৫১ ইং সালে অর্থাৎ আজ থেকে মাত্র ১৬৭ বছর আগে। যে কোম্পানী প্রথম এই সেলাই মেশিন তৈরী করেছিলেন তার নাম ইসাক মেরিট সিঙ্গার। তারপরে জাপানের জুকি কোম্পানী ১৯৪৫ সালে টোকিওতে স্থাপন করা হয় এবং সেখানে প্রথম সেলাই মেশিন তৈরী করা হয় ১৯৪৭ সাল থেকে।

    শিল্প বিপ্লবের সময়ের দাবী সময় বাঁচানো ও অধিক উৎপাদনের জন্য তখনকার প্রায় সব শিল্প কলকারখানার কতৃপক্ষ ইতিহাসে প্রথম বারের মত শ্রমিকদের আবাসন ব্যাবস্থা আয়োজনের কথা ভাবে।এতে করে তখনকার চাকরি খোজ করা মানুষগুলো সেলাই ম্যাশিন তৈরির কারখানার আশেপাশের জায়গাগুলোতে ভীর করতে থাকে।১৮৪৯ সালে হটাৎ ক্যালিফোর্নিয়ার কিছু স্থানের মাটিতে সোনা পাওয়া যেতে শুরু করে। যাকে ইতিহাসে ক্যালিফোর্নিয়া গোল্ড রাষ নামে অবিহিত করা হয় । এ খবর চারিদিকে চাউর হতেই অ্যামেরিকার অন্যান্য অঙ্গরাজ্য ও পাশের দেশ থেকে প্রায় তিনলাখের উপড়ে মানুষ ক্যালিফোর্নিয়ায় অভিবাসন গ্রহণ করে। এই বিপুল সংখ্যক অভিবাসীদের মধ্য থেকে লেভি স্ট্রাউশ নামের এক ২০ বছরের বালক সেখানে ড্রাই গোডের (মুদি দোকান) দোকান দেন। দোকানের জন্য তিনি নিজেই ১৮৭৩ সালে ধাতব পিন যুক্ত পকেটের ফুল প্যান্ট তৈরি শুরু করেন। এ প্যান্ট গুলো তৈরিতে ব্যাবহার হত শক্ত প্রকৃতির তুলার ফেব্রিক যার নাম Serge-D-Nimes যাকে পরবর্তীতে ডেনিম নামে ডাকা শুরু হয়। খুব তাড়াতাড়ি ডেনিম প্যান্টের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে এবং এর বাণিজ্যিক উৎপাদন সেলাই ম্যাশিনের চাহিদা আরও বাড়িয়ে দেয়।

    ১৭৫৫ সালে আমেরিকার উদ্ভাবক চার্লস টি উইজেনথায়ল দুই সুচের সেলাই মেশিন উদ্ভাবন করেন। ১৮২৬ সালের ১০ মার্চ ফিলাডেলফিয়ার হেনরি লাই চামড়া সেলাইয়ের মেশিনের প্যাটেন্ট অর্জন করেন। কিন্তু আজকের দিনে তাদের কাজের কোন মডেল অথবা রেকর্ড খুঁজে পাওয়া যায় না। ফ্রান্সের সেইন্ট এটিনের বার্থেলেমি থিমোনিয়ার ১৮৩০ সালে ডাবল পয়েন্টেড নিডল ব্যবহার করে সেলাই কল তৈরী করেন। তিনি চাকার সাথে সংযুক্ত একটা দন্ডের সাথে সুঁইটিকে সংযুক্ত করতে সক্ষম হন যা সুইটিকে উপর নিচে করতে পারে, ১৮৩৪ সালে আমেরিকার ওয়াল্টার হান্ট দুই সুতার শাটল মেশিনের নকশা আঁকেন। ১৮৪৯ সালে হান্ট তার আবিষ্কারের প্যাটেন্ট করেন। কিন্তু ব্যবসায় মুনাফা করতে ব্যর্থ হলেন।

    সাধারণ সেলাই মেশিনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের নাম:

    ১) নিডেল
    ২) নিডেল প্লেট
    ৩) ফিড ডগ
    ৪) নিডেল বার
    ৫) নিডেল ক্ল্যাম্প
    ৬) প্রেসার বার
    ৭) প্রেসার ফুট
    ৮) প্রেসার ফুট লিফটার ইত্যাদি।

    যেসব সেলাই মেশিন বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তার একটি তালিকা:

    ১) লক স্টিচ মেশিন
    ২) চেইন স্টিচ মেশিন
    ৩) ওভার লক মেশিন
    ৪) জিগ-জ্যাগ স্টিচিং মেশিন
    ৫) ফ্লাট লক মেশিন
    ৬) ব্লাইন্ড স্টিচ মেশিন
    ৭) বাটন হোলিং মেশিন
    ৮) বাটন অ্যাটাচিং মেশিন
    ৯) বার টেক মেশিন।

    ১৮ শতকের শুরুতে নানা ব্যর্থ প্রচেষ্টা:

    ১৮ শতকের শুরুতে সেলাই মেশিন তৈরির বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়। এক্ষেত্রে, প্রথমে একদিকে সুচ ব্যবহার করে এবং অন্যদিকে ঘূর্ণায়মান হাতল রেখে চেষ্টাগুলো চালানো হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এই নকশা ব্যর্থ হলে নকশায় পরিবর্তন আনা হয় এবং ফলশ্রুতিতে সফলতা আসে।

    ▪ ১৮১০ সালে বলথাসার ক্রেমস নামের একজন ব্যক্তি সেলাইয়ের জন্য একটি মেশিন তৈরি করেন। তার এই মেশিন ঠিকঠাক সেলাই করতে ব্যর্থ হয় এবং তিনি পরবর্তীতে তার মেশিনের নকশার পেটেন্ট থেকে বিরত থাকেন।

    ▪ ১৮১৪ সালে জোসেফ মাদারস্পারজার নামের একজন অস্ট্রিয়ান দর্জি সেলাই মেশিন তৈরি করার জন্য উঠেপড়ে লাগেন। তিনি সেলাই কাজে ব্যবহারের জন্য বেশ কয়েকটি যন্ত্র তৈরি করেন এবং পেটেন্টও করান। কিন্তু তার সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

    ▪ ১৮১৮ জন অ্যাডামস এবং জন নোলস নামের দুই মার্কিন নাগরিক আমেরিকায় প্রথম সেলাই মেশিন তৈরি করেন। কিন্তু এই যন্ত্র কয়েক বিট কাপড় সেলাই করার পরেই ভেঙে যায়।

    কোনো নারীকে স্বাবলম্বী করার কথা মাথায় এলে, কীভাবে সাহায্য করা হবে, এই ভাবনায় প্রথম আসে একটি সেলাই মেশিন। তার মানে আমরা জানি এবং বিশ্বাস করি একটি মাত্র সেলাই মেশিন একজন নারীর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। এতো গেলো বড় পরিসরে চিন্তা। প্রতিদিনই আমাদের নানা কাজে একটি সেলাই মেশিনের প্রয়োজন হয়। প্রতিটি বাড়িতে হয়তো এখনো সেলাই মেশিন নেই, তবে দিন দিন চাহিদা বাড়ছে। ঘরে যদি একটি মেশিন থাকে, তবে অনেক কাজে দেয়। ছোট ছোট কাজগুলো শিখে নিলে বারবার টেইর্লাসে ‍যাওয়ার ঝামেলাও কমে। সেই সঙ্গে বাঁচে সময় ও অর্থ।

    Writer:

    Sajjadul Islam Rakib
    Dept. of Textile Engineering
    National Institute of Textile Engineering and Research-NITER (10th Batch)

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Related News

    - Advertisment -

    Most Viewed