স্পাইডার সিল্ক

0
377


যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করা হয় কোন কোন প্রাণীকে আপনি সবচেয়ে বেশি ভয় পান? সেই প্রাণীগুলোর তালিকায় নিশ্চিতভাবেই থাকতে পারে আট পা দিয়ে চলা অদ্ভুত দর্শন মাকড়সা নামের পোকাটি। যদিও বলার জন্য বলা অদ্ভুত দর্শন, এটি হয়তো অনেকের কাছেই ভয়াল দর্শন একটা বস্তু। কিন্তু শুধু ভয় পেলেই তো আর চলবে না। আপনি যখন মাকড়সার কথা ভাবেন তখন অনেক কিছুই মনে আসে। নিঃসন্দেহে, এই জিনিসগুলির মধ্যে একটি হলো মাকড়সার জালগুলি স্পিন করে। এই জালগুলি তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদানকে  “স্পাইডার সিল্ক” বলা হয়।


যেভাবে মাকড়সা জাল বোনেঃ
মাকড়সার জাল বোনাও একটা বিশাল মুন্সিয়ানার কাজ। প্রথমে সে সামনের দিকে বাতাসে সুতোর মতো জালের একটি শাখা ছুঁড়ে দেয়। যদি সেই সুতাটি কোনো বস্তুর সঙ্গে আটকে যায়, তাহলে মাকড়সা সুতাটির অপর প্রান্ত ঐ বস্তুর সঙ্গে আটকে দেয় এবং শুরুর প্রান্তও আটকে দেয়। এভাবে মাকড়সা শুরুর প্রান্ত আর শেষ প্রান্ত মিলিয়ে একটি ব্রিজের মতো তৈরি করে।


এরপর মাকড়সা ঐ সুতোর ব্রিজের শুরুর প্রান্ত থেকে শেষ প্রান্তে হেঁটে যায় এবং হেঁটে যাওয়ার সময় খুব ঢিলা করে আরও একটি সুতো ঐ ব্রিজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিচের দিকে ঝুলিয়ে দেয়। এরপর ঐ ঝুলন্ত সুতোর মাঝ থেকে আরেকটি সুতো লম্ব বরাবর টেনে নিয়ে নিচের দিকে এমনভাবে নেমে আসে যেন ইংরেজি Y অক্ষরের মতো মনে হয়। এরপরে Y অক্ষরের একদম নিচের প্রান্ত থেকে একদম প্রথমে তৈরি করা শুরুর প্রান্ত আর শেষ প্রান্ত সুতো দিয়ে যুক্ত করে V অক্ষরের মতো অংশ তৈরি করে। এভাবে একটা ত্রিভুজের মতো জাল তৈরি হয়।


ত্রিভুজের মতো জালের মধ্যে থেকে পুরো ত্রিভুজের চারপাশে মাকড়সা তার জাল ছড়িয়ে দেয়। এভাবে গোল করে সে বাইরের দিকে জাল ছড়িয়ে দিতে থাকে। প্রথমে পুরো জালটাই মাকড়সা তার নিজের চলাচলের সুবিধার জন্য শুকনো সিল্ক দিয়ে তৈরি করে। এরপর শিকার ধরার জন্য আঠালো সিল্ক দিয়ে জাল তৈরি করে। এভাবে একটা মাকড়সার জালে দুইটা অংশ থাকে, আঠালো আর শুকনো। আঠালো অংশে শিকার ধরা পড়ে আর শুকনো অংশ দিয়ে মাকড়সা নিজে চলাচল করে।
স্পাইডারের সিল্ক অ্যামিনো অ্যাসিডের শিকল দিয়ে তৈরি। অন্য কথায়, এটি কেবল একটি প্রোটিনম দুটি প্রাথমিক অ্যামিনো অ্যাসিড হলো গ্লাইসিন এবং অ্যালানাইন।


মাকড়সার রেশম অত্যন্ত শক্তিশালী – এটি স্টিলের চেয়ে প্রায় পাঁচগুণ শক্তিশালী এবং একই ওজনের কেভলারের দ্বিগুণ শক্তিশালী। স্পাইডার সিল্কের ভাঙা ছাড়াই এটির মূল দৈর্ঘ্যের চেয়ে প্রায় 30 শতাংশ দীর্ঘ প্রসারিত করার ক্ষমতা রয়েছে যা এটিকে খুব দৃঢ় তর করে তোলে।
 মাকড়সার সুতা যে শক্তিশালী এবং স্থিতিস্থাপক সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। চিন্তা হচ্ছে এই সুতা আহরণ ও উৎপাদন করা যায় কীভাবে সেটা নিয়ে। সাধারণ রেশম পোকা যেমন আমরা চাষ করতে পারি মাকড়সার চাষ করা আসলে ততোটা সহজ নয়। কারণ একে তো সব প্রজাতির মাকড়সাই এই শক্তিশালী সুতা তৈরী করতে পারে না, অন্যদিকে মাকড়সা সবসময় একই প্রকার সুতা প্রদানও করতে পারে না। সবচেয়ে কঠিন সমস্যা হলো মাকড়সা কলোনিভুক্ত প্রাণী নয়। কাজেই এদের একত্রে চাষ করা অসম্ভব।


অন্যদিকে গবেষকগণও কৃত্রিমভাবে মাকড়সার সুতা গবেষণাগারে তৈরী করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু তরল প্রোটিনকে কঠিন ও দৃঢ় করাটাই এখন তাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
কীভাবে স্পাইডার সিল্ককে মানবকাজে ব্যবহার করা যেতে পারে?বিজ্ঞানীরা একবার কীভাবে রেশমকে সংশ্লেষিত করতে হয় সেই কোডটি ক্র্যাক করেন, তা কীভাবে এটি মানুষের উপকারে ব্যবহার করতে পারে সে সম্পর্কে তাদের প্রচুর ধারণা রয়েছে। এখানে বেশ কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো। যা নিয়ে তারা কাজ করতে আগ্রহী:


১. পোড়া ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য কৃত্রিম ত্বক তৈরি।

২. কৃত্রিম লিগামেন্টস।

৩. ব্যান্ডেজ যা নিরাময়কে উতসাহ দেয়।

৪. অস্ত্রোপচার ক্ষত জন্য Sutures (বা stiches)।৫. মৃদু অটোমোবাইল এয়ারব্যাগ।

৬. বুলেটপ্রুফ পোশাক।

৭. দড়ি, জাল এবং প্যারাশুট।


Writer,

Nurun Nahar Tinny

NITER 10th batch

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here