Monday, November 11, 2024
Magazine
More
    HomeBTMA, BGMEA & BKMEA❝সংস্কার প্রয়োজন টেক্সটাইল সেক্টরেও❞

    ❝সংস্কার প্রয়োজন টেক্সটাইল সেক্টরেও❞

    Badhon Mojumder

    টেক্সটাইল ও মেডিকেল সেক্টরের একাডেমিক সময়টা অনেকটা একই রকম।এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে।তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এসব সেক্টরের বাস্তবভিক্তিক কাজকর্ম।
    টেক্সটাইল সংশ্লিষ্ট ডিপ্লোমা, ভোকেশনাল, বি.এস.সি. সহ সকল কোর্সে একাডেমিকের ৪ বছরে দু-তিন বার কয়েকঘন্টার ইন্ডাস্ট্রি ভিজিট আর ফাইনাল ইয়ারে দু’মাসের ইন্টার্ন ব্যতীত ইন্ডাস্ট্রির সাথে তেমন কোনো যোগসূত্রই নেই।কিন্তু একজন টেক্সটাইল ব্যাকরাউন্ডের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই পড়াশোনা শেষ করে সশরীরে টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির সম্মুখীন হয়।শিফট্ ধরে ধরে,অন টাইমে ইন্ডাস্ট্রির সাথে এই সম্পৃক্ততা সবাই প্রথমেই পজিটিভলি নিতে পারে না,যার দায়ভার আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ঘাড়ে গিয়ে বর্তায়।এর কারণ,স্বাধীনতার গন্ডি পেরিয়ে হঠাৎ করে কেউ একটা নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে আসতে পারে না।সেজন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত সময় ও সঠিক দিকনির্দেশনা।প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন ফ্যাশনের আবির্ভাব,নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের চওড়া বাজারমূল্য ও ক্রেতা সন্তুষ্টিসহ অন্যান্য প্রতিকূলতা মোকাবেলাসহ ইত্যাদি বিষয়গুলো সমাধান করতে গিয়ে টেক্সটাইলের এত বড় সেক্টরের সমস্যাগুলো আমাদের চোখের অগোচরেই থেকে যায়।

    মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিক্ষার্থীরা যেমন প্রথম বর্ষ থাকা অবস্থায় পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের রোগীর সমস্যাগুলো খুব কাছ থেকে দেখতে পারে,রোগীদের সাথে নিয়মিত কথা বলার সুযোগ থাকে,সিনিয়র ডাক্তারগণ রোগীর সেবা করার সময় পর্যালোচনা করতে পারে,প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমে সেই রোগ সম্পর্কিত সমস্যাগুলো তখনই সমাধান করে ফেলতে পারে এবং সেই সমস্যাগুলোর সমাধান বের করে ভবিষ্যতে একজন আদর্শ ডাক্তার হওয়ার জন্য নিজেকে শিকড় থেকেই প্রস্তুত করতে পারে।

    কিন্তু টেক্সটাইল সেক্টর এর ব্যতিক্রম।একাডেমিক পড়াশোনা চলাকালীন আমরা যে ইন্ডাস্ট্রির সাথে সম্পৃক্ত থাকবো সেটা আর হয়ে উঠে না কিন্তু একাডেমিক পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর ঠিকই সশরীরে ইন্ডাস্ট্রির মুখোমুখি হতে হয়।ইন্ডাস্ট্রির সার্বিক কাজ,অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ ও এতটা চাপের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় যেন শরীরটা একটা রোলার কোস্টার!
    অর্জিত জ্ঞানকে বাস্তবের সাথে যাচাই-বাছাই ও পর্যালোচনা করার বিষয়টা মেডিকেলে একটু ভিন্ন। প্রতিটি মেডিকেল কলেজের খুব কাছাকাছি সরকারী বা বিশেষায়িত কোনো হাসপাতাল থাকলেও প্রতিটি টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর কাছাকাছি ইন্ডাস্ট্রির পরিমাণ খুবই কম।যার ফলে একাডেমিকভাবে জ্ঞান অর্জিত হলেও সাথে সাথে তা আর বাস্তবের সাথে সমন্বয় হয় না।

    পরিবেশের ইকোসিস্টেমকে ঠিক রাখতে শরীরের জন্য ক্ষতিকর টেক্সটাইল রংয়ের পরিমাণগত ও যথোপযুক্ত ব্যবহার,চতুর্থ শিল্পবিপ্লব রেভলুশন,ইনভিজিবল বা অদৃশ্য পোশাক থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ভারী ভারী যন্ত্রপাতি এমনকি অত্যাধুনিক উড়োজাহাজে টেক্সটাইল ফাইবারের ব্যবহার,আবহাওয়ার সাথে সামঞ্জস্য রেখে নিত্যনতুন ফ্যাশনের তারতম্য,সবুজায়নের সাথে টেক্সটাইলের ওতোপ্রোত সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়গুলো পাঠ্যপুস্তক থেকে মুখস্ত করা হলেও টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটগুলো থেকে হাতে-কলমে দেখানোর ব্যবস্থা করা হয় না।এমনকি উচ্চশিক্ষা এবং আর্থিক ও ভৌগোলিকগত কারণে এগুলো অবলোকন করা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর কখনই সুযোগ হয় না।ফলে এই সেক্টরের বড় একটি অংশ আমাদের চোখে অগোচরেই থেকে যায়।

    আবার ছাত্র অবস্থায় প্রতিটি শিক্ষার্থীকেই থিসিস বা নতুন একটি প্রজেক্ট উপস্থাপন করতে বলা হয়।প্রতি বছর ফাইবার বা ফেব্রিক সম্পর্কিত কিছু ব্যতিক্রমধর্মী নতুন উদ্ভাবনী উপস্থাপিত হয় যা নিয়ে চাইলেই ভবিষ্যতে বড় পরিসরে কাজ করা যেতে পারে।কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই সেই প্রজেক্ট বা থিসিস পেপারগুলো নিয়ে ভবিষ্যতে আর কাজ করা হয় না।এর জন্য দায়ী শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ উপরমহলের অনিহা,বিভিন্ন কোম্পানি এবং সরকারের বিনিয়োগের অভাব,পর্যাপ্ত ল্যাব ফ্যাসিলিটি না থাকাসহ রয়েছে নানান প্রতিবন্ধকতা।

    বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয়।বিশ্বে এত ভালো অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও মাঝেমাঝে বিভিন্ন কারখানা বন্ধ হওয়ার ঘটনাও শোনা যায়।এর পিছনে প্রধান কারণগুলো হলো:
    ১)দক্ষ ও শিক্ষিত জনশক্তির অভাব।
    ২)পানি,বিদ্যুৎ,গ্যাসসহ অন্যান্য ইউটিলিটিতে ঘাটতি।
    ৩)অতিরিক্ত মুনাফার আশায় শতভাগ কোয়ালিটি নিশ্চিত না করা।
    ৪)রাজনৈতিক ও ভৌগোলিকগত কারণ।
    ৫)বায়ার/অর্ডার না থাকা।
    ৬)সর্বোপরি মালিকপক্ষ যথেষ্ট অভিজ্ঞতা সম্পন্ন না হওয়া ইত্যাদি।

    পড়াশোনা চলাকালীন অবস্থায় বেশিরভাগ টেক্সটাইল শিক্ষার্থীই আর্থিক টানাপোড়নের মধ্য দিয়ে যায়।পরিবারের দায়িত্বের সাথে ব্যক্তিগত খরচটা প্রতিনিয়ত বেড়ে যায়।হাতে গোনা কয়েকজন বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যক্তিগত খরচের আংশিক উপার্জন করতে সক্ষম হয়।ক্যাম্পাসের ভৌগোলিকগত কারণেও অনেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে পিছিয়ে পড়ে বা আছে।তাই কেউ যদি পড়াশোনার পাশাপাশি অন্তত নিজের খরচটাও জোগানের চিন্তা করে,পারিপার্শ্বিক কারণে শত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আর সম্ভব হয়ে উঠে না।

    প্রতিটি সমস্যারই কোনো না কোনো সমাধান থাকে।তবে সমাধান হতে হবে সুপরিকল্পিত ও
    ভবিষ্যতের জন্য। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সরকারের হস্তক্ষেপে টেক্সটাইল শিক্ষার্থীদের দূরাবস্থা দূর হতে পারে। যেসব সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হলে টেক্সটাইল শিক্ষার্থীরা অনাকাংশে লাভবান হবে:

    ১)প্রতিটি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের কাছাকাছি একটি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলা যা তৈরী হবে শুধুমাত্র ঐ ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীদের শিখন ও কর্মক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে।
    ২)যারা চাইবে তাদের সবাই যেন বিভিন্ন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ঐ ইন্ডাস্ট্রিতে পার্ট টাইম কাজ করতে পারে।
    ৩)কাজ করা ব্যতীত শিক্ষার্থীরা যেন নিজেদের ক্যাম্পাসের পরিচয়ে যেকোন সময় ইন্ডাস্ট্রি ভিজিট করতে সশরীরে সবকিছু অবলোকন করতে পারে।
    ৪)পড়াশোনার পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রির সাথে সশরীরে থাকার ফলে পড়াশোনা শেষ করে আর অভিজ্ঞতার জন্য কোনো কাজের অভাব হবে না।
    ৫)রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি অধিক দক্ষ জনশক্তি তৈরী সম্ভব হবে ইত্যাদি।

    সর্বোপরি শিক্ষার্থীরা কাজ করলে ইন্ডাস্ট্রি ও শিক্ষার্থী দুপক্ষই লাভবান হবে।প্রথমত,ইন্ডাস্ট্রি শুরুতেই দক্ষ জনশক্তি পাবে।দ্বিতীয়ত,শুরু থেকেই শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে সবকিছু শিখতে পারবে এবং আয়ের উৎস তৈরী হবে।
    শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,বিভিন্ন কোম্পানি ও সরকারের সুপরিকল্পিত কয়েকটি উদ্যোগেই এই প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হতে পারে।যেহেতু টেক্সটাইল সেক্টরটি দেশের অনেক বড় একটি অংশ তাই পরিকল্পনাও নিতে হবে বৃহৎ পরিসরে।

    বাঁধন মজুমদার
    নিটার ১০ম ব্যাচ

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Related News

    - Advertisment -

    Most Viewed