Tuesday, April 23, 2024
More
    HomeTechnical Textileইসলাম ধর্মে বস্ত্র শিল্পের ঘনিষ্ঠতা

    ইসলাম ধর্মে বস্ত্র শিল্পের ঘনিষ্ঠতা



    পৃথিবীতে অনেক ধর্মের, অনেক মতের মানুষ আছে।আর এ সব ধর্মের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম হলো ইসলাম।ইসলাম ধর্ম পুরো মানবজাতীর জন্য কল্যান স্বরুপ। মানব কল্যান মূলক ধর্ম।যাতে রয়েছে মানব জীবনের পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম র্ধমের অনুসারীদের বলা হয় মুসলিম। আমরা যারা মুসলিম আছি তারা আমরা আমাদের আল্লাহর ইবাদত করি। এ ইবাদত করার জন্য যেমন নিয়ম রয়েছে ঠিক তেমনি রয়েছে সুন্নতি পোশাক পরিচ্ছেদ। আর এ সব পোশাক পরিচ্ছেদের মধ্যে রয়েছে টুপি,পাগরি,পাঞ্জাবি, মহিলাদের হিজাব, বোরকা।এছাড়াও আমাদের দৈনন্দিন কাজে যেমন খাবার রাখার জন্য দস্তরখান ব্যবহার করি যা কাপরের তৈরি। এছাড়াও মসজিদের কার্পেট তৈরিতেও ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন প্রকারে সুতা। অর্থাৎ সমাগ্রিক ভাবে বলা যায়,নিত্য ব্যবহার্য ইসলামিক তৈজসপত্র’র সাথে বস্ত্র শিল্প ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত।

    নিম্নে এ সব সামগ্রির বিশ্লেষণাত্বক বর্ণনা করা হলো:-

    টুপি:

    টুপি শব্দটি উর্দু।যাহা এক প্রকার পরিধেয়, যা মাথা আবৃত করনে ব্যবহৃত হয়।হাদীস শরিফে টুপির জন্য তিনটি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে।এর মধ্যে একটি হলো বুরনুস এর অর্থ- এমন কাপড় যার অংশ বিশেষ মাথার সাথে লেগে থাকে।টুপি মুসলিম উম্মাহর জাতীয় নিদর্শন বা ইসলামের অন্যতম ‘শিআর’। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন, আইম্মায়ে মুজতাহিদগণ সহ সর্ব যুগে টুপি পরিধান করার প্রচলন মুসলিম সমাজে ছিল এবং অদ্যাবধি আছে।বৈজ্ঞানিকদের দৃষ্টিতে টুপি ব্যাবহারের উপকারীতা রয়েছে।


    টুপি পরিধান এবং পাগড়ি বাঁধা রাসূলের সুন্নত। রাসূলে আকরাম (সাঃ) মস্তকাবরন হিসেবে তিন প্রকারের পোশাক- টুপি,পাগড়ি ও রুমাল ব্যবহার করেছেন।নামায ছাড়াও সর্বাবস্হায় রাসূল(সাঃ), সাহাবায়ে কেরামগন টুপি ব্যবহারের আমল ছিলো। হযরত হাফিয আবু শাইখ ইসফাহানী (রহ.) তাঁর ‘আখলাকুন নবী’ গ্রন্থে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর টুপির বর্ণনা নামক আলাদা একটি অধ্যায় সংযোজন করেছেন এবং সেখানে তিনি অনেক গুলো হাদীস উল্লেখ করেছেন।
    হাসান বিন মেহরান থেকে বর্ণিত-
    একজন সাহাবী বলেছেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তাঁর দস্তরখানে খেয়েছি এবং তাঁর মাথায় সাদা টুপি দেখেছি’ (আল ইসাবাহ ৪/৩৩৯)
    এখন খুব সহজেই অনুমেয় যে টুপি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আর এ টুপি কিন্তু মূলত কাপড়ের ই তৈরি। আমাদের দেশে নারায়ণগঞ্জ, ফেণী,চট্টগ্রাম,পঞ্চগড় সহ বিভিন্ন জায়গায় এ টুপি তৈরির কারখানা রয়েছে।

    পাগড়ি :

    এর আভিধানিক অর্থ হলো মাথায় জড়ানোর কাপড়। মূলত পাগড়ি একখন্ড সেলাই বিহীন কাপড়ের তৈরি।একজন মানুষের পাগড়ির কাপড়, তার বুনটশৈলি বা বাধার ধরন দেখলে বুঝা যায় সে ব্যাক্তি কোন অঞ্চলের বা তার পেশা কি। অনুষ্ঠান ভেদে পাগড়ির রং এবং তার কাপড়ের গুনমান এক এক হয়। পাগড়ি দামী সিল্কের তৈরি হতে পারে বা আবার সাধারন সাদা-কালোও হতে পারে।মুসলিম রা টুপির উপর পাগড়ি পরিধান করেন।

    জায়নামাজ:

    এর উপর দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া হয়। এটির আকার এমনভাবে তৈরী করা হয় যাতে মুসল্লিরা স্বচ্ছন্দে নামাজ আদায় করতে পারে। জায়নামাজ এক বা একাধিক ব্যক্তির উপযোগী করে তৈরী করা হয়। একাধিক ব্যক্তির ব্যবহার উপযোগী জায়নামাজ সাধারণত মসজিদ, ঈদগাহ এমন বড় আকারের জামায়াতে ব্যবহৃত হয়।
    অলংকরণের জন্য জায়নামাজে অনেক রকম নকশা থাকে। এতে বিভিন্ন লতাপাতা, ফুল ইত্যাদি নকশা অঙ্কন করা হয়। এছাড়াও মসজিদের ছবিও নকশায় ব্যবহৃত হয়। অনেক সময় মেহরাবের ছবি জায়নামাজের অঙ্কিত হয়। সেক্ষেত্রে জায়নামাজ বিছানোর সময় মেহরাবের উপরের দিক কিবলার দিকে করে রাখা হয়। জায়নামাজ ইসলামি সংস্কৃতির অন্যতম নিদর্শন।

    কার্পেট :

    সাধারন মসজিদে কার্পেট বিছানো থাকে। এর উপর এক সাথে অনেক মানুষ সালাত আদায় করতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মসজিদে কার্পেট ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো সুলতান কাবুস গ্রান্ড মসজিদের বিশ্বের ২য় বৃহত্তম হাতে বোনা কার্পেট।এই কার্পেটে ১,৭০০,০০০,০০০ টি সুতার বন্ধন, ওজন ২১ মেট্রিক টন এবং এটি তৈরীতে চার বছর সময়ে লেগেছিল। এই কার্পেট তৈরীর সময় ক্লাসিক্যাল তাব্রিজ, কাশান এবং ইসাফাহান এর ঐতিহ্য বজায় রেখে ডিজাইন করা হয়েছিল। ২৮ টি বিভিন্ন স্তরের রঙের সমন্বইয় ঘটেছে এই কার্পেটে। বেশিরভাগ রঙ প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরীকৃত। কার্পেট তৈরির জন্য রয়েছে দেশে দেশে কারখানা। উদাহরন স্বরুপ, পূর্ব আজারবাইজানে ইরানের প্রায় ৩৫% কার্পেট প্রস্তুত হয়, এবং ইরান থেকে রপ্তানিকৃত গালিচার ৭০% এখানেই তৈরি হয়। তাব্রিজের গালিচা জগদ্বিখ্যাত।

    এছাড়াও আরো বিভিন্ন পোশাক রয়েছে যেমন মহিলাদের হিজাব, বোরকা, পুরষদের পায়জামা, পাঞ্জাবি,জোব্বা,ইত্যাদিও বস্ত্র শিল্পের সাথে সম্পর্কিত।তাছাড়াও তসবিহ তৈরিতে সুতা ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
    পরিশেষে এ কথা সহজেই
    অনুমেয় যে ইসলামিক বিভিন্ন দব্যদি এবং তৈজসপাত্রের সাথে বস্ত্র শিল্প সম্পর্কিত।

    লেখক:

    মোঃ তানভীর হোসেন সরকার

    ডিপার্টমেন্ট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং

    ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড রিসার্চ।





    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments