Thursday, March 28, 2024
More
    HomeTechnical Textileনারকেলের ছোবড়া থেকে তৈরি ফাইবার।

    নারকেলের ছোবড়া থেকে তৈরি ফাইবার।


    ▪কয়ার ফাইবারঃ 
    কয়ার (coir) শব্দটি দ্রাবিড়ীয় kayar শব্দ থেকে এসেছে।যার অর্থ হলো দড়ি। নারিকেলের সেল এর বাইরের অংশ দ্বারা যে ফাইবার তৈরি করা হয় তাকে কয়ার ফাইবার বলে।একে বাস্ট ফাইবার ও বলা হয়ে থাকে। নারিকেলের ছোবড়া সাধারণত কর্কশ থাকে। লবণ পানি আঁশের কর্কশ ভাব দূর করার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায়। আঁশকে ভিজিয়ে এটির মধ্যে একটি ব্যাকটেরিয়াল ক্রিয়ার সৃষ্টি করে আঁশ নরম করে পাকানোর উপযোগী করা হয়।


    ▪কয়ার ফাইবারের ইতিহাসঃ 
    প্রাচীনকাল থেকেই দড়ি এবং কর্ডেজ নারকেল ফাইবার থেকে তৈরি করা হতো। বহু শতাব্দী আগে মালায়া,জাভা,চীন এবং আরব উপসাগরে সমুদ্রের যাত্রা করা ভারতীয় নৌচালকেরা তাদের জাহাজের দড়ির জন্য কয়ার ব্যবহার করতেন। ১৯ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের আগে যুক্তরাজ্যের একটি কয়ার শিল্প রেকর্ড করা হয়েছিল। ১৮৪০ এর সময় Captain Logan এবং Mr.Thomas Treloar এর সহযোগিতায় Captain Widely ইংল্যান্ডের লুডগেড হিলে ট্রেলোয়ার এন্ড সন্স নামে পরিচিত কার্পেট ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন,যা মূলত মেঝের কার্পেটের কাপড় তৈরি করার জন্য।


    ▪বাংলাদেশ থেকে কয়ার ফাইবারের বিদেশযাত্রাঃ 
    বেশ কিছুদিন ধরেই নারকেলের ছোবড়া আর ফেলনা নয়। সেই ছোবড়ার আঁশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে যন্ত্রে তৈরি তোশকের (ম্যাট্রেস) ভেতরের অংশ, যা কয়ার ফেল্ট নামে পরিচিত। এখন নারকেলের ছোবড়ার পাশাপাশি ছোবড়ার গুঁড়াও মূল্যবান হয়ে উঠেছে। এ গুঁড়াকে প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। শুরুতেই এগুলোর বাজার পাওয়া গেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। নারকেলের ছোবড়ার গুঁড়া প্রক্রিয়াজাত করার কাজটি করছে ন্যাচারাল ফাইবার নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বাগেরহাটের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) শিল্পনগরীতে তাদের কারখানা।প্রতিষ্ঠানটি ২০০৫ সাল থেকে ‘কয়ার ফেল্ট’ (ম্যাট্রেস তৈরির কাঁচামাল) তৈরি করে আসছে। সোয়ান, আখতার, পারটেক্স, টাইগারসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ম্যাট্রেস উৎপাদনে ব্যবহার করা হচ্ছে এগুলো। এটি মূলত নারকেলের ফেলে দেওয়া ছোবড়ার আঁশ দিয়ে তৈরি হয়। মানভেদে প্রতি ঘনফুট কয়ার ফেল্টের দাম ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা।


    নারকেলের ছোবড়া থেকে আঁশ ছাড়াতে গেলে প্রচুর পরিমাণে গুঁড়া বের হয়। সেই গুঁড়া রোদে শুকিয়ে বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে চাপ দিয়ে ব্লকের মতো প্রস্তুত করা হয়। সেই ব্লক ‘কয়ার পিট’ নামে পরিচিত। দেশের বাজারে কয়ার ফেল্টের চাহিদা মেটানোর পর এখন নতুন পণ্য কয়ার পিট প্লাস্টিকে মুড়ে রপ্তানি করা হবে। বিভিন্ন দেশে গবাদি পশুপালন ফার্মে ও কৃষিকাজে মাটির বিকল্প হিসেবে কয়ার পিটের ব্যাপক চাহিদা।


    ▪কয়ার ফাইবারের প্রকারভেদঃ নারকেল বা কয়ার ফাইবার ২ ধরনের-

    ১. ব্রাউন ফাইবার(Brown fiber): পরিপক্ক নারকেল থেকে ব্রাউন ফাইবার গুলো তৈরি করা হয়।এই ফাইবার গুলো মোটা, শক্তিশালী এবং উচ্চ ঘর্ষণ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন হয়।

    ২. হোয়াইট ফাইবার(White fiber): অপরিণত নারকেল থেকে হোয়াইট ফাইবার তৈরি করা হয়।এই ফাইবার গুলো মসৃণ এবং সূক্ষ্ম।


    ▪কয়ার ফাইবারের বানিজ্যিক নামঃ
    Bristle fiber: long fibers.

    Mattress fiber: short fibers.

    Decorticated fibers: mixed fibers.


    ▪কয়ার ফাইবারের বৈশিষ্ট্য সমূহঃ
    ১. আঁশ শক্ত খসখসে।প্রায় ছয়মাস মিঠাপানি অথবা নদীর পানিতে  ভিজানোর পর আঁশ সংগ্রহ করলে কিছুটা নরম হয়।

    ২. আঁশের রং সাধারণত বাদামী, তবে বেশি পরিপক্ক নারিকেল থেকে আঁশ সংগ্রহ করলে আঁশ বর্ণহীন হয়।

    ৩. বেসিক এ ক্ষার জাতীয় রং দ্বারা এসিটিক এসিদ সহযোগে গরম পানিতে কম সময় ও ঠান্ডা পানিতে বেশি সময় রং করা সম্ভব। কয়ার ফাইবার কিছুটা উলের মত,তাই রং এর প্রতি আশক্তি রয়েছে তেমন বেসিক ডাই, এসিড ডাই, ডাইরেক্ট ডাই দ্বারা কয়ার ফাইবার রং করা যায়।


    ▪কয়ার ফাইবারের ব্যবহার:
    ১. পাপোষ ম্যাট, কার্পেট, দড়ি ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।

    ২. কুটির শিল্পের সৌখিন দ্রব্যাদি যেমন- ব্যাগ, পাখা এবং নারিকেলের মালা দিয়ে বোতাম, বাসন। হুক্কা ইত্যাদি তৈরি করা হয়।

    ৩. সোফা তৈরিতে কয়ার ফাইবার করা হয়।

    ৪. কয়ার ফাইবার প‍্যাকেজিং উপাদান হিসেবে ‍‍‌‍ পরিবহনের ক্ষেত্রে শক থেকে রক্ষা পেতে ব্যবহার করা হয়।

    ৫. জার্মানিতে গাড়ি ও রেলপথের জন্য কুশন বসানোর কাজে রাবারযুক্ত কয়ার ব্যবহার করা হয়।

    ৬. কয়ার ব্যাগগুলো চা পাতা সংগ্রহের জন্য এবং খনি থেকে কয়লা তোলার জন্য ব্যবহার করা হয়।

    ৭. বানিজ্যিক প্যাকেজিং এর জন্য কয়ার ম্যাটগুলো ব্যবহার করা হয়।


    ▪প্রধান উৎপাদনকারী দেশ সমূহঃ
    বিশ্বে মোট কয়ার ফাইবার উৎপাদন হয় 250,000 টন (250,000 long tons; 280,000 short tons)। ভারত, মূলত পোলাচি এবং কেরালা রাজ্যের উপকূলীয় অঞ্চলে, সাদা কয়ার(white coir) ফাইবারের সরবরাহ করে বিশ্বের মোট সরবরাহের 60%। শ্রীলঙ্কা মোট 36% ব্রাউন ফাইবার উৎপাদন করে। বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর উৎপাদিত কয়ার ফাইবারের 50% এর বেশি উৎপন্ন হয় মূলত ভারতবর্ষের দেশগুলিতে। প্রতি বছর ভারত এবং শ্রীলঙ্কা উত্পাদিত 90% কয়ার উৎপাদন করে। শ্রীলঙ্কা কয়ার ফাইবার এবং কয়ার ফাইবার ভিত্তিক পণ্যগুলির বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ হিসাবে পরিচিত।


    Writer,Nurun Nahar Tinny

    Department of Textile Engineering

    NITER ,10th batch

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments