Tuesday, April 23, 2024
More
    HomeTextile Manufacturingমাছ থেকে পোশাক তৈরি

    মাছ থেকে পোশাক তৈরি

    📌 সামুদ্রিক মাছের তৈরি রশি বা চাবুকের ব্যবহার আছে বিশ্বে অনেক এলাকায়। তবে মাছের তৈরি পোশাকের কথা বিরলই বলতে হয়। আর সেই বিরল প্রজাতি থেকে তৈরি হচ্ছে পোশাক! এ যেন এক অদ্ভুত আবিষ্কারের অদ্ভুত জগৎ। আর এই অদ্ভুত জগতেরই আমরা একজন! ভবিষ্যতে এর চেয়ে অদ্ভুত কিছু অপেক্ষা করছে না, তা বলার অবকাশ নেই! প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল যা একের পর এক অদ্ভুত উপহারের দ্বারা জগতটাকে অদ্ভুত রুপ প্রদান করে চলেছে।

    📌 শুনলে অবাক হবেন যে, সেই শত শত কোটি বছর আগেই পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত ডাইনোসরদের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত বেঁচে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী! যারা পৃথিবীর পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গভীর সমুদ্রের তলদেশে টিকে আছে। সেই প্রাগৈতিহাসিক প্রাণিদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হ্যাগফিস প্রজাতির মাছ। যা থেকে তৈরির সম্ভাবনা ক্রীড়াবিদের পোশাক, বুলেটপ্রুফ অন্তর্বাস বা জামাকাপড়সহ ইত্যাদি।

    📌 পৃথিবীর বুকে এই প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ৮০ টি। সবচেয়ে বড় প্রজাতিটির দৈর্ঘ্য ৪ ফুট পযর্ন্ত হতে পারে। তবে বেশির ভাগ হ্যাগফিস ১ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। চোয়ালবিহীন, এটি একটি খুলি বিশিষ্ট অমেরুদণ্ডী আদি প্রাণী হ্যাগফিস। প্রায় ৫০ কোটি বছর ধরে মহাসাগরের তলদেশে বসবাসকারী এই প্রাণী একধরনের বিশেষ ঘন আঠালো স্লাইম (পদার্থ) নিঃসরণ করতে পারে যা থেকে পোশাক তৈরির সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছিল বিজ্ঞানীরা। হ্যাগফিস দেখতে অনেকটা সাপের আকৃতির ন্যায়। হ্যাগফিসের দেহে অন্তত ১০০ টি বিশেষ গ্রন্থি থাকে যা স্লাইম উৎপাদনে সক্ষম হয়। সেই গ্রন্থি ও ঘাম গ্রন্থির মিশ্রণে তৈরি হয় স্বচ্ছ ও নমনীয় কিন্তু শক্তিশালী ও পিচ্ছিল স্লাইম। এটিকে পানিতে রেখে লম্বা করে টেনে শুকানো হলে রেশমের কাপড়ের মত আকার ধারণ করে।

    📌 আবার হ্যাগফিসকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেকটাই কষ্টসাধ্য, তাই অনেকেই একে এড়িয়ে চলেন। কানাডার uelph University এর এক বিজ্ঞানী টিম ওয়াইনগার্ড হ্যাগফিস নিয়ে গবেষণা চালিয়ে বলেন, “দেখতে ভালো না হলেও হ্যাগফিসের অনেক গুণ রয়েছে”। সেই সাথে তারা হ্যাগফিস থেকে এক ধরনের শক্ত প্রোটিন সমৃদ্ধ সুতা তৈরি করতে সক্ষম হন। এই মাছের শরীর থেকে একধরনের জেলির মত স্লাইম পানিতে মিশানো হয়ে থাকে যা অদ্ভুত ভাবে জালিকা সিল্কের আকার ধারণ করে এবং বাতাসের সংস্পর্শে আসা মাত্রই পানি উধাও হয়ে যায় এবং তৈরি হয় প্রোটিনসমৃদ্ধ সুতা। যদিও এই জেলির মত স্লাইমটি নোংরা সমুদ্রের জলের মতো দূর্গন্ধযুক্ত কিন্তু বিজ্ঞানীদের মতে এই প্রোটিনসমৃদ্ধ সুতা দ্বারা প্রস্তুতকৃত পোশাকটি হবে চমৎকার বলবিজ্ঞান সম্বন্ধীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।

    📌 প্রাণিবিজ্ঞানীরা শত শত বছর ধরে গবেষণা করেছেন। এই প্রাণী সমগ্র সাগরের তলদেশে গভীর অন্ধকারাচ্ছন্ন খাদে তিমিসহ বিভিন্ন মৃত প্রাণীর দেহাবশেষ খেয়ে জীবন ধারণ করে। চোয়ালহীন হওয়ায় প্রাণীটি অতন্ত্য ঘন স্লাইমের সাহায্যে নিয়ে আত্মরক্ষার কাজ চালায়। গবেষকেরা জানান, হাঙরের কামড় থেকে পরিপোষণের জন্য হ্যাগফিস স্লাইমের সাহায্যে নিজেকে আড়াল করে। এতে হাঙরের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। ফলে হাঙর পালিয়ে যায়। বলতেই হয়, হ্যাগফিস নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে জয়ী হয়েছে। যা কোটি বছর আগের ডাইনোসরের মতো অনেক প্রজাতিও পেরে ওঠতে পারেনি। সেই সাথে পৃথিবীকে দিয়ে চলেছে তার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা আজকের অদ্ভুত আবিষ্কার।

    🚩 বছর কয়েক আগে মাছের ত্বক দিয়ে আগুনে পোড়ার চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবন করে সমস্ত বিশ্বে সারা ফেলে দিয়েছিলেন গবেষকরা। বিশ্ব সংবাদমাধ্যম গুলোতে দীর্ঘ দিন ধরে সেই খবর নিয়ে আলোচনা হয়। মাছের ত্বকের এমন আরও অনেক ব্যবহারই অঞ্চলভেদে করা হচ্ছে শত শত বছর ধরে যা আমাদের অনেকেরই অজানা। সেই অজানারই একটি মাছের ত্বক দিয়ে তৈরি পোশাক। রাশিয়ার সীমান্তবর্তী চীনের প্রদেশ হেইলংজিয়াংয়ের তৎজিয়াং শহরের হ্যাজেন সম্প্রদায়ের মানুষেরা মাছের ত্বক দিয়ে পোশাক তৈরি করেন। তবে সম্প্রতি সময়ে তারা এ পোশাক তৈরি কমিয়ে দিয়েছেন।

    🚩 যেভাবে বানানো হয়ঃ-

    🚩 প্রথমে মাছের ত্বক ছাড়িয়ে ভালভাবে শুকানো হয়।এরপর তা নরম করে জামাকাপড় তৈরি করা হয়। এতে সময় লেগে যায় প্রায় এক মাসের মতো। আর সেলাই করতেও সময় লেগে যায় আরো ২০ দিন।

    🚩 হ্যাজেন তরুণদের মধ্যে দিন দিন আগ্রহ কমে যাওয়ায় ওয়েনফেঙ স্থানীয় হান চীনা নারীদেরকে মাছের ত্বক দিয়ে পোশাক তৈরির কৌশল শেখাচ্ছেন। এভাবে অন্তত তাদের ঐতিহ্যটি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন।

    🚩 ডিয়র, প্রাডার মতো ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো মাঝেমধ্যে এ ধরনের পোশাক নিয়ে আসে। তবে তা এখনও বাণিজ্যিকভাবে ততটা সফল হতে পারেনি।

    📖 রেফারেন্স – গুগল, প্রথম আলো ও বাংলাদেশ জার্নাল।

    📝 লেখকঃ
    মোঃ সন্ধান কবির
    পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার কলেজ, পাবনা।
    রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট (টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারস)

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments