Thursday, March 28, 2024
More
    HomeJuteসম্ভাবনাময় সোনালী আশঁ এবং অন্যান্য

    সম্ভাবনাময় সোনালী আশঁ এবং অন্যান্য

    পাটকে বলা হয় সোনালী আশঁ। কারণ,বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল হচ্ছে পাট। পাটের আশঁ যেমন সোনালী চুলের মতো তেমনই এর মূল্যও সোনার মত দামী। তাই এর আরেক নাম হল ‘স্বর্ণসূত্র’।

    আমাদের দেশে পাট একটি সম্ভাবনার নাম। পাট চাষ এদেশে প্রাচীন কাল থেকেই হয়ে আসছে। এই দেশের আবহাওয়া-মাটির উর্বরতা সবই পাট চাষের অনুকূলে। তাই প্রকৃতিও যেনো এই দেশকে উজার করে পাট চাষের অনুমতি দিয়েছে। পাট রয়েছে ৪ প্রকারের। যেমন: ১)সাদা পাট, ২)তোষা পাট, ৩)কেনার পাট, ৪)মেসটা পাট। তার মাঝে বাংলাদেশে সাধারণ ২ ধরণের পাট চাষ করা হয়, ১)সাদা পাট (Corchorus capsularis) এবং ২)তোষা পাট (Chochorus olitorius)। সাদা পাটকে দেশী পাটও বলা হয়। এটা উফশি(উচ্চ ফলনশীল) জাতের পাট।

    পাট চাষের আদর্শ সময়কাল হচ্ছে বর্ষাকাল। পাটের বীজ বপন করা হয় সাধারণত ফেব্রুয়ারিতে এবং ফসল তুলে আনতে ৪ থেকে ৫ মাস সময় লাগে। সময়মত পাট বীজ বপন করা উচিত। সাধারণত ছিটিয়েই পাট-বীজ বপন করা হয়। তবে লাইন করে বপন করলে পাটের ফলন বেশি হয়। বীজ বপনের ১৫-২১ দিনের মধ্যে ১ম নিড়ানি এবং ৩৫-৪২ দিনের মধ্যে ২য় নিড়ানি দিয়ে আগাছা দমন ও চারা পাতলা করতে হবে। পাট গাছের বয়স যখন ১২০ দিন পার হবে এবং যখন ফুল আসবে তখনই পাট সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। তারপর যথাক্রমে আকারভেদে(লম্বা,মোটা,চিকন) পাট আলাদা করে ১০ কেজি করে আটি বেধে গোড়া থেতলিয়ে জাগ(পানিতে ভিজিয়ে পাট পচানো/রেটিং করা) দিতে হবে। তারপর ১০ থেকে ১২ দিন পর পাট পচে গেলে পাটের খড়ি থেকে আশঁ সংগ্রহ করে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর বাশের আড়া,ব্রিজের রেলিং এ ঝুলিয়ে পাটের আশঁ শুকাতে দিতে হবে। ভালোমতো শুকানো হয়ে গেলে আশঁগুলাকে তাদের গ্রেডিং অনুযায়ী ভাগ করে, ‘Bailing and Packing’ ধাপ গুলো প্রতিপালন করার মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করতে হবে।

    প্রকৃতির অনুকূলতা পেয়ে এদেশের কৃষক পরিবারগুলা সানন্দে পাট চাষ করে আসছে অনেক আগের থেকেই। সেইসূত্রে এদেশে বেশ কিছু পাটকল তৈরি হয় এবং পাটজাত বিভিন্ন ধরণের পণ্য তৈরি করা শুরু করে। এখনো বাংলাদেশে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ২২টি পাটকল পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু গত দুই দশকে প্লাস্টিক ব্যবহার্য পণ্যের সহজলভ্যতার জন্য পাটজাত পণ্য (যেমন: ব্যাগ, বস্তা ইত্যাদি) অবহেলিত হচ্ছিলো প্রতিনিয়ত। ফলে পাট জাত পণ্যের উদ্যোক্তারাও পাট থেকে মুখ ঘুড়িয়ে নেন এবং কৃষকরাও ভালো দাম না পেয়ে পাট চাষ ধীরে ধীরে কমিয়ে দেন। এদিকে এর প্রভাব পাটকল গুলার উপরও গিয়ে পড়ে, পাটকল গুলো একে একে বন্ধ হয়ে যেতে থাকে(বহুল আলোচিত বাংলাদেশে অবস্থিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ পাটকল আদমজী জুট মিল(স্থাপিত ১৯৫০) ২০০২ এ বন্ধ ঘোষিত হয়)। পাট কলের শ্রমিকরা হয়ে পড়েন কর্মসংস্থানহীন। যার ফলস্বরূপ ধীরে ধীরে বাংলার ঐতিহ্য, পাট কালের গর্ভে মিলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।

    এমতাবস্থায়, বাংলাদেশ সরকার ‘পাটনীতি ২০১৬’ প্রনয়ণ করে। যেখানে পাট চাষের উদ্যোগ, পাটের ন্যায্য মূল্য, পাটপণ্য বহুমুখীকরণ, প্রশিক্ষণ, গবেষণা, আধুনিকায়ন, বাজার সম্প্রসারণ ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বিভিন্ন শস্য প্রক্রিয়াজাত-বাজারজাত করণে পাটের তৈরি বস্তা/ব্যাগ এর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। এতে করে প্লাস্টিকজাত পণ্য (যেমন: পলিথিন,প্লাস্টিকের ব্যাগ) থেকে সবাই সরে এসে আবার পাটের সাথে সম্পৃক্ত হবে, সচল হবে পাটকল গুলো, কৃষকরা আবার পাট চাষে উৎসাহিত হবে, পাট তার পুরানো গৌরব ফিরে পাবে। যথারীতি পাটজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে।

    এদিকে প্লাস্টিকের ব্যাগের বিকল্প হিসেবে ‘বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন’ -এর একজন বিজ্ঞানী, মোবারক আহমেদ খান, বাংলাদেশের আরো কয়েকজন গবেষকের সহায়তায় সফলতার সাথে পাটের ফাইবার দিয়ে একটি নতুন ধরণের প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যাগ তৈরি করেন। যার নাম রাখা হয়েছে ‘সোনালী ব্যাগ’। এই ব্যাগ সম্পূর্ণ Organic(পচনশীল)। অর্থাৎ পরিবেশ দূষিতের হার অনেকটাই কমে যাবে যদি প্লাস্টিকের ব্যাগের বদলে এই ‘সোনালী ব্যাগ’ ব্যবহার শুরু করা যায়।

    পরিশেষে,এইটুকুই বলার বাকি থাকে যে, বিশ্বের ২৫% পাটের চাহিদা বাংলাদেশ থেকে পূরণ করা হয়। পাটের চাষ-প্রক্রিয়াজাতকরণ সবকিছুর নীতিমালা যথাযথভাবে মানতে পারলে একদিকে পরিবেশ যেমন দূষণ থেকে রক্ষা পাবে,পৃথিবীর সবাই উপকৃত হবে, আরেকদিকে বাংলাদেশও তার সোনালী আশঁকে নিয়ে গর্বিত হয়ে মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারবে পৃথিবীর বুকে।

    Source: [ Wikipedia, পাট – কৃষি তথ্য সার্ভিস(এআইএস), Banglapedia ].

    Writer’s Information:

    Name: Noor Mohammad Belal.
    Semester: First Year, First Semester.
    Batch: 41 th
    Ahsanullah University of Science and Technology

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments