Friday, April 19, 2024
More
    HomeTechnical Textileসায়েন্স ফিকশনঃ ভিনগ্রহ থেকে পোশাকের খোঁজে-পর্বঃ১

    সায়েন্স ফিকশনঃ ভিনগ্রহ থেকে পোশাকের খোঁজে-পর্বঃ১

    ৩০২০ সাল। প্রায় ১৪বছর পর আমি আর আরশিল পৃথিবীতে ফিরে আসছি সেটা ভাবতেই নিজের মধ্যে কেমন করছে অনুভব করতে পারছি না। নিজের মধ্যে একটা কঠিন উত্তেজনার সৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু পর মূহুর্তে একটা কথা মনে পড়ে গেল, সেটা হলো আমরা পৃথিবীতে পোশাকের স্যাম্পল আনতে এত বছর পর ফিরে যাচ্ছি। স্যাম্পল নিয়ে আবার স্পেকটোকোরাল গ্যালাকটিক গ্রহে পুনরায় ফিরে যেতে হবে।

    স্পেকটোকোরাল গ্যলাকটিক গ্রহের দূরত্ব পৃথিবী থেকে ৩০৯ আলোকবর্ষ দূরে।সেখানে ক্যাঁকো ক্যাঁকো নামে কিছু প্রানী বাস করে। তারা নিজেদেরকে অতি বুদ্ধিমান বলে দাবি করে। মেধা ও মননে তারা নাকি পৃথিবীর মানুষের তুলনায় বাম্বু রেক্টার স্কেলে কয়েকগুন এগিয়ে! তাই একাডেমী থেকে আমাদেরকে স্পেকটোকোরাল গ্যালাকটিক গ্রহে পাঠানো হয়েছে গ্রহটাকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য এবং মানুষ থেকে কি ওরা সত্যিই কয়েকগুন এগিয়ে তা দেখার জন্য।

    প্রায় ১৪ বছর আমি আর আরশিল গ্রহটাকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলাম। প্রানিগুলো সত্যিই অনেক বুদ্ধিমান। তারা দলবদ্ধভাবে একে অপরকে সাহায্য করে বসবাস করে। এমনকি পৃথিবীর মানুষ থেকে তারা কোনো অংশে কম নয়।

    এক বছর আগে আমরা একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম। এত কিছুর পরেও তারা একটা জিনিস আবিষ্কার করতে পারে নি। সেই জিনিসটি হলো পোশাক। বস্ত্রের অভাবে দিন চলতে গিয়ে ক্যাঁকো ক্যাঁকোদের ভীষণ সমস্যায় পড়তে হয়। তাই স্পেকটোকোরাল গ্যালাকটিক গ্রহের রাজাধিরাজ জুক নির্দেশ দিলেন, “ক্যাঁকো ক্যাঁকো সভ্যতা রক্ষা করতে যেখান থেকে যেভাবে পারো শরীর রক্ষার কার্যকরী ব্যবস্থা নিয়ে আসো।”

    কয়েকদিন পর আমি আর আরশিল জুকের সাথে পরামর্শ করতে তার সাথে সাক্ষাৎ করলাম-
    -মিঃ জুক, আমরা তোমাকে সাহায্য করতে পারি।
    -কীভাবে? 
    -আমাদের পৃথিবীর মানুষেরা শরীর রক্ষাকারী বস্তু পোশাক ব্যবহার করি। তুমি চাইলে পৃথিবী থেকে পোশাকের স্যাম্পল এনে দিয়ে তোমাদের সাহায্য করতে পারি।

    -অবশ্যই,চাই। তোমাদের পৃথিবীর মানুষদের সত্যিই বুদ্ধির প্রশংসা করতে হয়। তোমাদের অসাধ্য কোনো কাজ নেই। আসলেই তোমরা সৃষ্টির সেরা জীব। 

    আজই তোমরা পৃথিবীতে যাওয়ার জন্য তৈরী হয়ে নাও।

    স্পেকটোকোরাল গ্যালাকটিক গ্রহে আসার সময় আমরা জামা-কাপড় নিয়ে প্রবেশ করতে পারিনি। কারন, ক্যাঁকো ক্যাঁকোদের নিয়মের বাইরে কিছু করলে ওরা এর বিনিময়ে প্রান নিয়ে নেয়। তাই আবার পৃথিবীতে যেতে হচ্ছে পোশাকের স্যাম্পল আনার জন্য।

    একাডেমী থেকে আসার সময় আমাদের সাহায্য করার জন্য কয়েকটি দ্বিতীয় মাত্রার এবং একটি চতুর্থ মাত্রার রোবট দেয়া হয়েছিল। এই রোবটগুলো গত ১৪বছর ধরে আমাদের সঙ্গী হয়ে আছে।

    আমাকে আর আরশিলকে বহু পথ পাড়ি দিয়ে পৃথিবীতে পৌঁছাতে হবে। তাই যাত্রা শুরুর দুইদিন পর আমাদের একটি শীতল ঘরে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হলো। এই দুইদিন আমরা রোবটগুলোর সাথে অনেক দুষ্টুমি করেছি। এদের মধ্যে সকল মানবিক গুন আছে। আমাদের ঘুমের পরে এরাই মহাকাশযানটি নিয়ে যাবে পৃথিবীর দিকে। এটি একটি পঞ্চম মাত্রার মহাকাশযান।

    পৃথিবীতে পৌঁছনোর ৪৮ ঘন্টা আগে আমাদের ঘুম ভাঙল। শীতল ক্যাপসুলের মধ্যে বসে অনুভব করতে পারছি না আমরা এখন কোথায় আছি! পুরো শরীর শীতল হয়ে আছে।

    সবকিছু নিয়ে চিন্তা করছি,এমন সময় একটা রোবটের ডাকে স্তম্ভিত ফিরে পেলাম। সে এসে বলল,
    -আপনাদের স্বাগতম। আর মাত্র ৪৮ঘন্টার মধ্যে আমরা পৃথিবীর বুকে অবতরণ করতে যাচ্ছি।

    পরবর্তী ২৪ঘন্টা নানা কাজে চলে গেল। আমরা ইতিমধ্যে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। অবশেষে মহাকাশযানটিকে পৃথিবীর কক্ষপথে রেখে একটা স্কাউটশিপে করে পৃথিবীর নগরীতে প্রবেশ করলাম।

    কাউন্সিলের প্রধান চতুর্থ মাত্রার রোবট ক্যাপ্টেন জ্যাক। সে এসে আমাদের স্বাগতম জানালো। রোবট হলেও এটি মানুষের থেকে দুই মাত্রা উপরে। আমি আর আরশিল মুখে মাস্ক,হাতে গ্লাভস পরে বের হলাম। ভিনগ্রহের প্রানিগুলোকে নিয়ে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পোশাক শিল্পের দেশে অবস্থান করলাম।  ক্যাকো ক্যাঁকোরা এই দেশের মানুষের পোশাকের বাহারী দেখে রীতিমতো অবাক! তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে লাগলো-

    -ক্যাপ্টেন জ্যাক! দেখো দেখো পৃথিবীর মানুষ কতটা বুদ্ধিমান। পোশাকের মধ্যেও তারা প্রযুক্তি মিশিয়েছে।

    তাদের মধ্যে অনর্গল কথা বলা চলতে থাকলো… মাঝখানে আরশিল তাদের সাথে যুক্ত হলো। পোশাকের বর্ণনা দিতে গিয়ে সে বলতে লাগলো-

    -এই পোশাক এমন প্যারাফিন দ্বারা আবৃত যা তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। গরম অনুভূত হলে এটি তরলে রূপান্তরিত হয়ে তাপ বের করে দেয় আর শীত অনুভূত হলে এটি কঠিন হয়ে যায় এবং পরিধানকারীর শরীরের তাপ ধরে রাখে।
    তাদের মধ্যে কথপোকথন চলতে থাকলো…

    পৃথিবীতে পনেরো দিন কাটানোর পর আজ আবার আমাদের পোশাকের স্যাম্পল নিয়ে স্পেকটোকোরাল গ্যালাকটিক গ্রহে ফিরে যেতে হচ্ছে। যাত্রা শুরু হওয়ার ২৪ঘন্টা পর জ্যাক এসে আমাদের জানালো-

    -কিছুক্ষন আগে পৃথিবী নামক গ্রহটি সৌরজগৎ থেকে ধ্বংস হয়ে গেছে।

    কথাটা শোনামাত্র আমি আর আরশিল চিৎকার করে উঠলাম। কথাটা যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! একটু আগে যে পৃথিবীটাকে সুস্থ দেখে আসলাম সেই পৃথিবীটা এখন নিশ্চিহ্ন হয়েগেছে।  

       চলবে….

    Sajjadul Islam Rakib

    National Institute of Textile Engineering and Research-NITER (10th Batch)         

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments