Friday, March 29, 2024
More
    HomeTechnical Textileস্পেস স্যূট সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন? :পর্ব-০২

    স্পেস স্যূট সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন? :পর্ব-০২

    আচ্ছা একটা মাছকে যখন পানি থেকে বের করে আনা হয়,তখন তার কি অবস্থা হয় সেটা কি কখনো খেয়াল করেছেন?সে তখন অক্সিজেনের অভাবটা খুব ভালো কতে টের পায়।যার কারণে সে ছটফট করতে করতে একটা সময় মারা যায়।তেমন একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে হয়তো আপনি পৃথিবীতে অক্সিজেনের মাধ্যমে বেশ ভালোভাবেই জীবন যাপন করছেন।যখন আপনাকে এই পৃথিবী থেকে আপনাকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে,তখন ঐ পানি থেকে বের হওয়া মাছ এবং অক্সিজেন ছাড়া আপনার অবস্থার মধ্যে তফাৎটুকু আপনি নিজেও বের করতে পারবেন না।মানুষকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জীব বলার কারণ কি জানেন? একমাত্র মেধা, যেটা অন্য প্রানীদের থেকে মানুষকে আলাদা করেছে।যার কারণে আপনি অক্সিজেন ছাড়া মহাকাশে কিভাবে বাচবেন,তার সমাধান মানুষ আবিষ্কার করেছে।যে জটিল সমীকরণের সমাধানের নাম হলো স্পেস স্যূট।

    প্রথমপর্বে আমরা জেনেছিলাম স্পেস স্যূটের বাইরের অংশ পোর্টেবল লাইফ সার্পোট সিস্টেম নিয়ে ।এই পর্বে থাকছে পোর্টেবল লাইফ সার্পোট সিস্টেমের গঠন ও তার কাজ এবং স্পেস স্যূট বনাম একজন সাধারণ মানুষের প্রেক্ষাপট।
    সবশেষে থাকছে স্পেস স্যূট তৈরীতে টেক্সটাইলের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা।

    ★পাচটি সাবসিস্টেম নিয়ে পোর্টেবল লাইফ সার্পোট সিস্টেম গঠিতঃ

    ১)প্রাইমারি অক্সিজেন সাপ্লাই

    ২)ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট লুপ

    ৩)অক্সিজেন ভেন্টিলেটিং সার্কিট

    ৪)ফিড ওয়াটার লুপ

    ৫) স্পেস কমিউনিকেশন সিস্টেম

    এই সাব-সিস্টেমের কন্ট্রোল,রিমোট কন্ট্রোল ইউনিট(RCU) এর সাহায্যে HUT এ সংযুক্ত DCM এর সাথে যুক্ত।

    এখন পোর্টেবল লাইফ সার্পোট সিস্টেমের ৫ টি গঠন সর্ম্পকে বিস্তারিত জানা যাক।

    ১)প্রাইমারি অক্সিজেন সাপ্লাইঃ

    আগেই বলা হয়েছে যে,অক্সিজেন এর যোগান দেওয়াই স্পেস স্যূটের প্রথম কাজ। ১৭” লম্বা এবং ৬” ব্যাসের সিলিন্ডারে ১৩৮০-১৪৪০ PSI Pressure এ থাকা প্রায় ১.৫ পাউন্ড অক্সিজেন গ্যাস থাকে।যার মাধ্যমে একজন নভোচারী অক্সিজেন গ্রহন করতে পারে।সিলিন্ডার থেকে অক্সিজেন হেলমেটের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করে।

    ২)অক্সিজেন ভেন্টিলেটিং সার্কিটঃ

    এই ব্যবস্থায় প্রাইমারি অক্সিজেন সাপ্লাই সিস্টেম থেকে প্রতি মিনিটে ৫.৫ ঘনফুট অক্সিজেন স্পেস স্যূটের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়।মূলত শ্বাস প্রশ্বাস কার্যকর রাখার জন্য স্যূটের ভেতর থেকে আর্দ্রতা, তাপ ও কার্বন ডাই অক্সাইড নিয়ে সিস্টেমের ভেতরে পরিশোধিত হয়।

    ৩)ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট লুপঃ

    লিকুইড কুলিং এন্ড ভেন্টিলেশন গার্মেন্টের মধ্যে পানি প্রবাহিত করা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট লুপের প্রধাণ কাজ।যার মাধ্যমে শরীরে তাপমাত্রা ঠিক থাকে। এটি প্রতি ঘন্টায় ১৬০০-২০০০BTU তাপ অপসারণ করতে পারে।

    ৪)ফিড ওয়াটার লুপঃ

    এটি তাপীয় সমতা রক্ষার আরেকটি অংশ।মোট ১১.৮ পাউন্ড পানি রাবার ব্লাডার ও রিসার্ভার ট্যাংকে থাকে।যার মাধ্যমে তাপীয় সমতা বজায় থাকে।

    ৫)স্পেস স্যূট কমিউনিকেশন সিস্টেমঃ

    যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখাই একজন নভোচারীর প্রথম কাজ।বাইরের জগৎ সম্পর্কে জানার জন্যই নভোচারীদের প্রেরণ করা হয়।আর এ যোগাযোগের সামগ্রিক ব্যবস্থা সংযুক্ত থাকে PLSS এ অথ্যাৎ পোর্টেবল লাইফ সার্পোট সিস্টেমে। PLSS এ এক ধরণের রেডিও সিগন্যালও ট্রান্সমিশন সিস্টেম।

    ★স্পেস স্যূট তৈরির কাচামালঃ

    স্পেস স্যূট ব্যবহার করার জন্য অনেক কাচামাল ব্যবহার করা হয়।
    ১)ভেতরের স্তরটি নাইলন ট্রাইকোট উপাদান দিয়ে তৈরি।
    ২)আরেকটি স্তর স্পানড্যাক্স এর সমন্বয়ে তৈরি,যা একটি ইলাস্টিক পরিধানযোগ্য পলিমার।
    ৩)ইউরেথেন কোর্টিং – যা প্রেশার প্রয়োগের সাথে যুক্ত।
    ৪)ড্যাক্সন-একধরনের পলিস্টার.
    ৫)নিওপ্রিন-স্পঞ্জ রাবার।
    ৬)গর্টেক্স
    ৭)কেভলার
    ৮)নোমেক্স ইত্যাদি।

    ★মহাকাশে স্পেসস্যূট না পরলে কি হবে??

    বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে,আপনি নিশ্চয়ই বের হতে হলে রেইনকোর্ট অথবা ছাতা নিয়ে বের হবেন।ঠিক তেমনিভাবে পৃথিবীর বাইরে তো আর ছাতা নিয়ে বেচে থাকা সম্ভব নয়,তাই আপনাকে স্পেস স্যূট পরিধান করতে হবে।
    মহাকাশের যেকোনো স্থানে স্পেস স্যূট আমদের লাইফ সার্পোট দিয়ে থাকে।যদি আপনি স্পেস স্যূট ছাড়া মহাকাশে যান,আপনি বড়জোর ৯০ সেকেন্ড বাচবেন!
    যেখানে আপনি মাত্র ১৫ সেকেন্ডেই নিজের জ্ঞান হারিয়ে ফেলবেন!পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাবে এবং বায়ুচাপ না থাকার কারণে রক্ত জমাট বেধে যাবে।অতিরিক্ত তাপের কারণে আপনার চামড়া এমনকি হার্ট ও গলে যেতে পারে।এছাড়াও বিভিন্ন রেডিয়েশন যেমন কসমিক রেডিয়েশনের মুখোমুখি হতে হবে।এছাড়াও আপনার শরীরের তরল অংশ গুলো বাষ্পীভূত হয়ে যাবে।যেখানে একটি গরম পাত্র ১০ সেকেন্ড নিজের হাতে রাখাই কষ্টকর,সেখানে স্পেস স্যূট ছাড়া মহাকাশে থাকার কথা তো না বলাই ভালো।

    ★একটি স্পেস স্যূট এর মুল্যঃ

    মহাকাশচাওরীদের জন্য বিশেষ তৈরিকৃত পোশাকের নাম হলো স্পেস স্যূট ।এর পেছনে রয়েছে বিভিন্ন প্রকৌশলীদের অক্লান্ত মেধা এবং শ্রম।অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বচ্ছল ডিভাইসের মাধ্যমেই স্পেস স্যূট তৈরী হয়।এর কাজের কথাগুলো জানার পর,বোঝা ই যায় যে এর দাম একজন সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাহিরে।একটি স্পেস সূটের দাম ১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার! বাংলাদেশের একজন মানুষকে এই স্যূট কিনতে হলে ব্যয় করতে হবে ৭৮ কোটি টাকা!

    সময়ের সাথে সাথে বিজ্ঞানের আবিষ্কারে অনেক মাত্রা যুক্ত হয়েছে।আবিষ্কৃত কোন বস্তুর ত্রুটি বের করে তা সংশোধন করাই বিজ্ঞানের মূল লক্ষ্য।প্রায়ই পৃথিবীর বেশ কয়েকটা রাষ্ট্র মহাকাশে রকেট পাঠিয়েছে,নতুন নতুন তথ্য সংগ্রহের জন্য।
    স্পেস স্যূটে আজ পর্যন্ত অনেক নতুন কিছু ফিচার যুক্ত করা হয়েছে।মহাকাশে যাতে একজন নভোচারী স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারে তার জন্য সেজন্য জি-১ স্যূটের সন্ধিস্থল গুলো নমর করা হয়েছে।আগে এই স্যুট রুপার তৈরি ছিল। আমেরিকার SpaceX কোম্পানি স্পেস স্যূট তৈরী করে থাকে।

    তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া, গুগল।

    লেখক পরিচিতিঃ
    ভুবন কান্তি দে
    ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
    ড.এম এ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ,রংপুর।

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments