Tuesday, March 19, 2024
More
    HomeTechnical Textileস্পেস স্যূট সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন?

    স্পেস স্যূট সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন?

    নিউটন এবং আপেল গাছের গল্পটি শুনেছেন নিশ্চয়ই? অভিকর্ষজ ত্বরণের কারণে যে আপেলটি তার মাথায় পড়েছিল,তা হয়তো আপনার জানা হয়ে গেছে।আচ্ছা কেমন হতো যদি আপেলটি তার মাথায় না পড়ে,ভাসমান অবস্থায় থাকতো?বাস্তবে কি আদৌও এটা সম্ভব?পৃথিবীর প্রতি কোনো বস্তুর আকর্ষনের কারণেই আপেলটি নিচে পড়েছিল।কিন্তু মহাকাশে এই ঘটনাটা ঘটা আর মানুষের পক্ষে আকাশে কোন কিছুর সাহায্য ছাড়া উড়তে পারাটা একই কথা! কারণ অভিকর্ষজ ত্বরণ একটি উল্লেখ যোগ্য ভূমিকা পালন করে।আর তার জন্যই তৈরি করা হয় স্পেস স্যূট।

    মানুষের মহাকাশ যাত্রার শুরু থেকেই স্পেস স্যূট একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ভূমিকা রাখছে।মহাকাশে এই স্পেস স্যূট ব্যতীত বেচে থাকা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।পৃথিবীতে অভিকর্ষজ ত্বরণ এবং অক্সিজেনের কারণে আমরা কোনো চিন্তা ছাড়াই ঘুরতে পাচ্ছি।কিন্তু আপনি জানেন কি?? মহাকাশে অভিকর্ষজ ত্বরণ এবং অক্সিজেন কোনোটিই নেই! আর সেজন্যই তৈরী করা হয়েছে স্পেস স্যূট।

    স্পেস স্যূট বা স্পেসুইটি বাইরের স্থান,ভ্যাকুয়াম এবং চরম তাপমাত্রার পরিবেশে মানুষকে জীবিত রাখার জন্য পরিধিত এক পোশাক।Space suit নভোচারীদের এক্সেস এর সাথে অক্সিজেন সরবরাহ করে যখন তারা মহাকাশে থাকে।এছাড়াও স্যূট গুলোতে স্পেসওয়াকের সময় পানীয় জল থাকে।তারা মহাকাশচারীদের স্থানের ধূলিকণার ছোট বিটের প্রভাব থেকে আহত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।

    স্পেস স্যূট কি?

    ব্যবহারিক ভাষায় স্পেস স্যূট বলা হলেও এটি শুধুমাত্র একটি পোশাক বা একগুচ্ছ পোশাকের সমষ্টি-ই নয়,এটিকে ওয়ান পার্সন স্পেস ক্রাফটস ও বলা হয়ে থাকে।স্পেস স্যূটের দাপ্তরিক নাম”এক্সট্রাবিহিকুলার মোবাইলিটি ইউনিট”, যাকে সংক্ষেপে EMU বলা হয়ে থাকে।মূলত স্পেস স্টেশনের বাইরে বিভিন্ন ত্রুটি মেরামতের জন্য নভোচারীরা এটি ব্যবহার করে থাকেন।প্রতিকূল পরিবেশে বেচে থাকার জন্য-ই স্পেস স্যূট বা EMU ব্যবহার করা হয়ে থাকে।মহাকশের মতো প্রতিকূল পরিবেশের ভয়াবহ রেডিয়েশন, এলিয়েন রোগ জীবাণু থেকে রক্ষা করতেই স্পেস স্যূট ব্যবহার করা হয়।

    এতক্ষণে নিশ্চয়ই আন্দাজ করা যায় যে,এটি কোন সাধারণ পোশাক নয়।তাহলে এই পোশাকটি সম্পর্কে আরেকটু জেনে নেওয়া যাক।

    স্পেস স্যূট এর গঠনঃ-

    অনেক গুলো ছোট বড় অংশের মাধ্যমে স্পেস স্যূট তৈরী করা হয়।এটি এমন ভাবে বানানো হয় যাতে মহাকাশে একজন মানুষ সর্বাধিক সুরক্ষা পেতে পারে।

    একটি স্পেস স্যূটের বাইরের অংশটি শক্ত আবরণ দিয়ে গঠিত।যার ভেতরের অংশে থাকেঃ

    ১) কমিউনিকেশন ক্যারিয়ার আসেম্বলি (CCA)

    ২)লিকুইড কুলিং এবং ভেন্টিলেশন গার্মেন্ট(LCVG)

    ৩)ম্যাক্সিমাম এবসোরবেন্সি গার্মেন্ট(MAG)

    এখন এই ডিভাইসগুলো সম্পর্কে জানা যাকঃ

    ১)কমিউনিকেশন ক্যারিয়ার আসেম্বলি(CCA):-

    নভোচারীরা মহাকাশে অবস্থান করেন,যাতে বাইরে জগৎ সম্পর্কে তারা জ্ঞান আহরণ করতে পারেন।প্রতিনিয়ত তারা এ নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন।এই গবেষণার ফলাফল গুলো পৃথিবীতে প্রেরণ করতে হয়।মূলত CCA এর মাধ্যমে এই যোগাযোগ ব্যবস্থা রক্ষা করা হয়ে থাকে।মহাকাশচারীর ব্যবহৃত হেলমেট এর ভেতরে একটি টেফলন ও নাইলন ফেব্রিক্সের তৈরি ক্যাপ থাকে।যাকে communication cap বলে।এখানে যোগাযোগ করার জন্য এয়ারফোন,মাইক্রোফোন এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ ব্যবস্থা থাকে।নভোচারীর ব্যাকপ্যাক এর রেডিও ট্রান্সমিশন ও রিসিভার অংশের সাথে এই অংশ যুক্ত থাকে।

    ২)লিকুইড কুলিং এবং ভেন্টিলেশন গার্মেন্ট (LCVG):-

    মহাকাশের তাপমাত্রা এবং আমাদের পৃথিবীর তাপমাত্রা এক নয়।তাই তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করাও স্পেস স্যুটের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।আর এ ব্যবস্থাটির নাম হলো LCVG।স্পেস স্যূটের বাইরে একটি আবরণ থাকে,যা তাপ নিয়ন্ত্রন করে থাকে।এটি মূলত পাতলা,ফাপা ও নমনীয় টিউবের তৈরি।এই টিউবের মধ্য দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়,যা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করে।এছাড়াও বাতাস প্রবাহেরও ব্যবস্থা থাকে,যা ভেন্টিলেশনে সহায়তা করে।এই নলাকার অংশটি ব্যাকপ্যাকের সাথে যুক্ত থাকে।যার মাধ্যমে নিরবিচ্ছিন্ন পানি ও বাতাসের প্রবাহ বজায় থাকে।

    ৩)ম্যাক্সিমাম এবসরবেন্সি গার্মেন্ট(MAG):

    MAG অর্থাৎ ম্যাক্সিমাম এবসরবেন্সি গার্মেন্টকে একজন নভোচারীর বিশেষ আন্ডারওয়্যারও বলা যেতে পারে।মূলত এটি আন্ডারওয়্যার হিসেবে পরতে হয়।এখানে নভোচারীর মূত্র জমা হয় এবং পরে তা বের করে দেয়।ম্যাগ ইন-স্যুট ড্রাংক ব্যাগ যাকে IDB বলা হয়,এটি একটি পানির ব্যাগ।যা নভোচারীর তৃষ্ণা মেটায়।IDB থেকে একটি নল মুখের সামনে আসে,যার মাধ্যমে সহজেই পানি পান করা যায়।

    আগেই বলা হয়েছে যে,স্পেস স্যূট অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে তৈরি করা হয়।অনুকূল পরিবেশ থেকে প্রতিকূল পরিবেশে বেচে থাকাটা অনেক কঠিন।মহাকাশের মতো প্রতিকুল পরিবেশে বেচে থাকার জন্যই স্পেস স্যূট তৈরী করা হয়েছে।

    একটি স্পেস স্যূট এর বহিঃভাগ নিম্নলিখিত অংশ নিয়ে গঠিতঃ

    ১)হেলমেট এবং এক্সট্রাভিহিকুলার ভাইসর আসেম্বলি(HEVA)

    ২)হেড আপার টর্সো উইত আর্ম আসেম্বলি(HUT)

    ৩)ডিস্পলে এন্ড কন্ট্রোল মডিউল(DCM)

    ৪)আর্ম এন্ড গ্লোব আসেম্বলি

    ৫)লোয়ার টর্সো আসেম্বলি(LTA)

    ৬)পোর্টেবল লাইফ সার্পোট সিস্টেম(PLSS)

    ৭)PLSS উইথ OPS

    ৮)অক্সিজেন পার্জ সিস্টেম

    এখন এই part গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানবোঃ

    হেলমেট এন্ড এক্সট্রাভিহিকুলার ভাইসর আসেম্বলি:

    Space suit এর সবচেয়ে বাইরের উপরের দৃশ্যমান অংশটি একটি বিশেষ হেলমেট।এই hহেলমেটটিকে মাথায় পরার পর মূল স্পেস স্যূট এর সাথে যুক্ত করা হয়।
    HEVA দুটি অংশ নিয়ে গঠিতঃ
    ১)হেলমেট আসেম্বলি
    ২)এক্সট্রাভিহিকুলার আসেম্বলি

    হেলমেট আসেম্বলি মূলত পলি কার্বনেট পদার্থের তৈরী একটি স্বচ্ছ হেলমেট,যা নেক রিং এর মাধ্যমে স্পেস-সূটের সাথে যুক্ত থাকে।

    এক্সট্রাভিহিকুলার আসেলুপ
    একটি শক্ত আবরণ দিয়ে তৈরী। হেলমেট আসেম্বলি এর বাইরের স্থানের সাথে এক্সট্রাভিহিকুলার আসেম্বলি যুক্ত থাকে।সূর্যালোক এবং রেডিয়েশন থেকে নভোচারীকে রক্ষা করাই এর প্রধাণ কাজ।

    এক্সট্রাভিহিকুলার আসেম্বলি এর উপর একটি অস্বচ্ছ আবরণ থাকে।এটি নভোচারীর দৃষ্টদর্শনে সহয়তা করে থাকে সূর্যালোককে বাধা দেওয়ার মাধ্যমে।

    ২)হেড আপার টর্সো উইথ আর্ম আসেম্বলি(HUT):

    HUT মুলত ফাইবার গ্লাসের তৈরি।যা স্পেস স্যূটের ভেস্ট অংশ জুড়ে থাকে।স্পেস স্যূটের বুকের এবং হাতের অংশ HUT এ সং্যুক্ত।অভ্যন্তরীন যন্ত্রপাতির কন্ট্রোল সেকশন এবং সুইচ এর সমন্বয়ে গঠিত ডিস্পলে এন্ড কন্ট্রোল মডিউল।

    ৩)ডিসপ্লে এন্ড কন্ট্রোল মডিউল(DCM):

    HUT এর মধ্যে থাকা কন্ট্রোলl সেকশন এবং সুইচ এর সমন্বয়ে গঠিত ডিসপ্লে নভোচারীর নিজের পক্ষে দেখা সম্ভব নয়।স্পেস স্যূটে রিস্ট মিরর নামে একটি অংশ থাকে,যা প্রতিফলনের মাধ্যমে নভোচারীর DCM এর ডিসপ্লে দেখতে সক্ষম হন।DCM স্পেস স্যূটের অনেক মেজর অংশ গুলো নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।যেমনঃLCVG,ওয়াটার লাইন,এয়ার এন্ড অক্সিজেন সিস্টেম।

    ৪)আর্ম এন্ড গ্লোভ আসেম্বলি:

    HUT এর সাথে আর্ম এন্ড গ্লোব আসেম্বলি যুক্ত থাকে। নভোচারীর হাত নিয়ন্ত্রন করার জন্য বিশেষ সংযুক্তকরণ ব্যবস্থা ও বিয়ারিং এর সাহায্যে আর্ম আসেম্বলি ও HUT যুক্ত থাকে। গ্লোব আসেম্বল,আর্ম আসেম্বল এর শেষ অংশে যুক্ত থাকে।রোটারি বিয়ারিং এর সাহায্যে নভোচারী তার কজ্বি ঘুরাতে পারেন।

    ৫)লোয়ার টর্সো আসেম্বলি:

    “লোয়ার টর্সো আসেম্বলি” এই শব্দ শোনার পর সহজেই আন্দাজ করা যেতে পারে যে,এটা স্পেস স্যূটের নিচের অংশ।LTA এবং HUT পরস্পর সংযুক্ত থাকে বডি সিল ক্লোজার অংশের সাহায্যে।নভোচারীকে স্বাচ্ছন্দ্যে চলা-ফেরা করার জন্য LTA এর ওয়েস্ট বেয়ারিং ব্যবহৃত হয়।যার সাথে যুক্ত থাকে বিশেষ বুট।

    ৬)পোর্টেবল লাইফ সার্পোট সিস্টেম(PLSS):

    মহাকাশে অক্সিজেন নেই,যার অনুপস্থিতিতে মানুষের পক্ষে বেচে থাকা সম্ভব নয়।আর এ অক্সিজেন সরবরাহ করার জন্য একটি সিস্টেম থাকে,যা ব্যাকপ্যাকে থাকে।এটি সাধরণত HUT এর পেছনের অংশে যুক্ত করা হয়।এই সমগ্র ব্যবস্থাপনাকেই বলা হয় পোর্টেবল লাইফ সার্পোট সিস্টেম।

    EMU এর PLSS এর গঠনঃ
    ->এটির আকার ২৬” × ২০.৫” × ১০.৫”।
    ->এর ওজন ১০৪ পাউন্ড।
    ->১৬.৮ ভোল্ট Ag-Zn ব্যাটারির সাহায্যে চলে।

    এতটুকু পড়ার পর আপনার সাধারণ মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে,
    space suit যেটি একটি পোশাক তা কিভাবে মহাকাশচারীকে অক্সিজেনের যোগান দেয়?
    সেই সাথে শরীরের তাপমাত্রা কিভাবে ঠিক রাখে?
    এই বিস্ময়কর পোশাকটির দাম কত হতে পারে?
    আপনি আরেকটু গভীর চিন্তাধারার মানুষ হলে এটিও জানতে চাইবেন যে, একজন কেউ স্পেস স্যূট না পরে মহাকাশে গেলে কি হবে?
    কতটুকু সময় সে বেঁচে থাকতে পারবে?

    হাজির হবো এইসব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আগামী পর্বে।

    Source: উইকিপিডিয়া।

    Writer Information:

    Bhuban Kanti Dey
    Department of Fabric Engineering
    Dr.M A Wazed Miah Textile Engineering College

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments