Thursday, March 28, 2024
More
    HomeBusiness২৫টি রাষ্ট্রায়াত্ব পাটকল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কারণ কিন্তু ‘করোনা’ নয়!-পর্ব ২

    ২৫টি রাষ্ট্রায়াত্ব পাটকল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কারণ কিন্তু ‘করোনা’ নয়!-পর্ব ২

    ✍সরকারী পাটকলের কর্মকর্তারা সবার সম্মুখে উপস্থাপন করছে নতুন তাজা খবর। সেটা হলো- “কাঁচা পাট বেশি দামে কেনার কারণ উৎপাদনের পর বেসরকারী মিলের রেটের সাথে পাল্লা দিয়ে বিক্রি করা যাচ্ছে না।” এর কুচক্রী মনোভাবের দৃশ্যটা ঠিক এরকম-

    (i)এই বিজেএমসি’র কর্মকর্তা, পাট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, আমলা সিন্ডিকেট খুব পরিকল্পিতভাবে পাটের সিজনে যখন কাঁচা পাটের দাম কম থাকে, তখন পাট কেনে না! তারা তখন বিভিন্ন কারণ দর্শায়,বিভিন্ন অজুহাত তুলে ধরে। তার মধ্যে অন্যতম হলো সরকারের টাকা আসেনি! টাকা আসবে করতে করতে সকল কাঁচা পাট পাইকার,বেসরকারী মিলের মালিকরা এবং স্টকিস্টরা কিনে গুদামজাত করার পর দ্বিগুণ দামে এরা কাঁচা পাট কেনে। সেই দিগুণ দামের পাটের উৎপাদন খরচ আগেই বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারী মিলের সাথে প্রতিযোগীতায় টিকতে পারে না। ফলে পরবর্তীতে পরোক্ষভাবে নিজেদের বিরুদ্ধে নিজেরাই অভিযোগ তোলে।

    ✒“বছরের পর বছর পাট ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ব্যর্থ হচ্ছে খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ৯টি পাটকল। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে পাটকলগুলোর জন্য ৭ লাখ ৪৮ হাজার ৫৯৬ কুইন্টাল পাট ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু গত অর্থ বছরে ক্রয় করা হয় ২ লাখ ২৭ হাজার ১৩৩ কুইন্টাল। এছাড়াও ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৬৩ শতাংশ পাট ক্রয় করা হয়। এদিকে চলতি অর্থ বছরের চাহিদার বিপরীতে পাট ক্রয় করা হয়েছে মাত্র ১৭ শতাংশ। এরমধ্যে পাটকল এজেন্সিগুলোর কাছে ৯টি পাটকলের দেনা রয়েছে ১৮৩ কোটি ১৫ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। যথাসময়ে অর্থ বরাদ্দ না দেয়ায় পাটকলগুলোতে এ অর্থ সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান পাটকল কর্মকর্তারা (সময় সংবাদ, ১১.১০.২০১৯)।”

    (ii)কোন রাষ্ট্রের অর্থনীতির যেকোন একটা খাতের উপর ভাটা পড়লে তা নতুন করে ঢেলে সাজানোর জন্য উদ্যােগ গ্রহণ করা হয় বা বাজেট পাশ হয়। আর সেজন্য BMRE (ব্যালেন্সিং, আধুনিকায়ন, বিস্তার এবং প্রতিস্থাপন) করার কথা বলে বছর বছর কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ নেওয়া হয়। সেই টাকার বড় অংশ তারা মেশিনারি দেখার নাম করে বিদেশ ভ্রমণে খরচ করে। উৎসুক জনতার মত আমোদ-প্রমাদে মেতে ওঠে। যখন এসব মহামান্য ব্যক্তিবর্গগণ দেশে ফিরেন তখন কোনো বছর কিছু BMRE হয়, কোনো বছর কিছুই হয় না।

    (iii)গুরুদায়িত্বে থাকা এই সিন্ডিকেট অদ্ভুত কিছু নিয়ম তৈরি করে। শ্রমিকদের ‘স্থায়ী’ এবং ‘খণ্ডকালিন’ বা ‘এ্যাপ্রেন্টিস’ বলে যে পরিমান বেতন ব্যয় করে তার দ্বিগুণ দেখায়। তার পরও অস্থায়ী শ্রমিকদের মাসের পর মাস বেতন বাকি পড়ে থাকে। জীবিকার তাগিদে,একটুখানি করুণায় প্রত্যাশায় তারা মাঝে মাঝেই ভূখা মিছিল, রাস্তায় অবরোধ-এর মত আন্দোলন করে।

    (iv)বহুকাল আগে থেকেই পাট এবং পাটজাত পণ্য আমদানি-রপ্তানির বাজার সারা বিশ্বে বিস্তৃত। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলেন,আপাতদৃষ্টিতে সেই বাজার গার্মেন্টস পণ্যের বাজারের চেয়েও বড় আর ব্যাপক। এখন প্রশ্ন উঠবে তাহলে পাট এবং পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয় না কেন? এর সহজ উত্তর হচ্ছে- বেসরকারী পাটকলগুলো যেভাবে পরখ করে,গবেষণা করে,নিজস্ব বুদ্ধি খাটিয়ে বাজার ধরে, সেই কাজটা সরকারি পাটকলের কর্মকর্তারা করেন না। তারা চেয়ারে তোয়াল ঝুলিয়ে দিনে কয়েক হাজার টাকা চা-নাশতার বিল করে, একে ধমকে-ওকে বকে, এই করব, সেই করব বলে দিন পার করে। মাস গেলেই তো গ্রেড-টু’র বেতন এবং অন্যান্য ভাতা সমেত বিরাট অঙ্কের টাকা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের ন্যায় পকেটে এসে ঢুকবে। তাই তারা পূর্ব রাজ-রাজাদের মত গজে’র ন্যায় তাদের ভুড়িওয়ালা উদরখানি নিয়ে সারাবছর এক চেয়ারে বসেই অলস সময় কাটায়।

    (v)সরকারি পাটকলের কর্মকর্তারা বিনা পারিশ্রমিকে হয়তো অনেক কিছু করায়ত্ত্ব করতে পারেন তাই পরিশ্রম দিয়ে ভালো কিছু তৈরী হবে সে ভাবনা বা প্রত্যাশা কোনো কালেই করেন না।পুরনো আমলের মটর চালিত মেশিনারী দিয়ে সরকারী পাটকলগুলো যে হারে উৎপাদন করে, বেসরকারী আধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত পাটকলগুলো তার চেয়ে বেশি উৎপাদন করে। পুরনো আমলের মটর চালিত মেশিনের মত সরকারী পাটকলের কর্মচারীরাও হয়তো নবাব সিরাজদ্দৌলা’র যুগে পড়ে আছেন। তাই তাদের সঙ্গে এই ক্ষেত্রেও প্রতিযোগীতায় সরকারী পাটকল হেরে যায়। স্ব-ইচ্ছায় এই হেরে যাওয়ার অন্তরালে যে অনেক নির্মম বাস্তবতার গল্প লুকায়িত আছে তা বলার অপেক্ষা থাকে না।

    ✍সরকারী কর্মচারীদের অধীনে পাটকলগুলোর জরাজীর্ণ অবস্থা অকল্পনীয়। তার উপর এখন আরোপিত হয়েছে করোনা ভাইরাসের এক তুচ্ছ অজুহাত। যখন সরকার বলেই দিয়েছে তারা ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকল বন্ধ করবে, তখন তা কারো সমর্থন ছাড়াই পাশ হয়ে গেছে। অথচ একটু পেছনের ইতিহাস মনে করিয়ে দেন পাটকল শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা মোঃ খলিলুর রহমান। একটি টিভি চ্যানেলে তিনি বলেন “আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন বিরোধীদলে ছিলেন সে সময় বিএনপি-জামাত সরকার আদমজী জুট মিল বন্ধ করে দিলে তিনি বলেছিলেন- ‘মাথা ব্যথা হলে কি মাথা কেটে ফেলতে হবে’?” সেই বিরোধীদলীয় নেত্রী এখন প্রধানমন্ত্রী। খলিলুর রহমান সরল মনে আশা করছেন, হয়ত তাঁর হাত দিয়ে ২৫টি পাটকল বন্ধ হবে না!

    চলবে……

    নাম:বাঁধন মজুমদার
    ডিপার্টমেন্ট:টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার
    প্রতিষ্ঠান:জাতীয় বস্ত্র প্রকৌশল ও গবেষণা ইনস্টিটিউট

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments