দৈনন্দিন জীবনে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা প্লাস্টিক ব্যবহার করে থাকি। পানি খাওয়ার বোতল থেকে শুরু করে বাজার করার ব্যাগ পর্যন্ত প্লাস্টিকের হয়ে থাকে। কিন্তু এই প্লাস্টিক আমাদের পরিবেশ এর জন্য অনেক ক্ষতিকর। কেননা এই প্লাস্টিক সম্পূর্ণরূপে পরিবেশের সাথে মিশতে সময় লাগে প্রায় ২০০ বছর। কিন্তু বর্তমানে এই প্লাস্টিক থেকে ও সুতা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।
শেরপুর, মানিকগঞ্জ, চাঁদপুর সহ আরও অনেক স্থানে গড়ে উঠেছে এই ব্যতিক্রমধর্মী সুতা তৈরির কারখানা।
সুতা তৈরির প্রক্রিয়াঃ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পানি খাওয়ার পর ফেলে দেওয়া হয় পানির বোতলটি কে। সুতা তৈরির জন্য সেই স্বচ্ছ বোতল সংগ্রহ করা হয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে। সংগৃহিত বোতল কে ছোট ছোট করে কাটা হয়, যা ফ্লেক্স নামে পরিচিত। এরপর গরম পানি দিয়ে সেই ফ্লেক্স ভালভাবে ধোয়া হয় যাতে কোনো জীবানু না থাকে। উচ্চ তাপ ও চাপে পরিষ্কার করা সেই ফ্লেক্সকে আট ঘণ্টা বায়ু নিরোধক ড্রামে রাখা হয়, একে ভ্যাকুয়াম ড্রাম বলা হয়। এই ভ্যাকুয়াম ড্রামে সঠিক পরিমাণ তাপ দেওয়ার পর তৈরি হয় পেস্ট। তৈরিকৃত পেস্টটি কে স্পিনারেট দিয়ে স্নাইবার করা হয়। এরপর এই স্নাইবার থেকে বেরিয়ে আসে সূক্ষ্ম সুতা। এই সুতাটি কেঁকড়া সুতা নামে পরিচিত।
সুতা থেকে তুলা তৈরির প্রক্রিয়াঃ তৈরিকৃত সুতাকে বিভিন্ন আকারে কেটেগ মেশিনে ঢোকানো হয়। যা পরে পলেস্টার স্ট্যাপল ফাইবার (পি.এস.এফ) হিসেবে সাদা তুলার আকারে বেরিয়ে আসে। এই প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত তুলা অনেকটা কার্পাস তুলার মতো মোলায়েম ও মসৃণ। প্লাস্টিকজাতীয় পন্য থেকে তুলা তৈরির এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর বিদেশে তা রপ্তানির উদ্দেশ্যে মেশিনেই এই তুলা প্যাকেজিং করা হয়। তুলা উৎপাদনের সময় সুতার মতো যে বর্জ্য বের হয় সেটি পুনরায় রি-সাইকেল পদ্ধতিতে তুলা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
প্লাস্টিক থেকে তুলার চাহিদাঃ প্লাস্টিক থেকে তৈরি তুলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে চীনসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশগুলোতে। পুর্বে চীন কাঁচামাল হিসেবে সরাসরি প্লাস্টিক পেট বোতল আমদানি করতো এবং নিজেরা ই এই ধরনের তুলা উৎপাদন করতো। কিন্তু সম্প্রতি দেশটি প্লাস্টিক বোতল আমদানি নিষিদ্ধ করার ফলে এখন ফিনিশড পণ্য হিসেবে তুলা আমদানি করছে দেশটি। যার ফলে রপ্তানি পণ্য হিসেবে এ ধরণেন প্লাস্টিক থেকে তুলার কদর বেড়েছে অনেকাংশে।
কেনো প্লাস্টিক থেকে তুলা উৎপাদন করবোঃ কয়েকটি কারণে আমরা প্লাস্টিক থেকে তুলা উৎপন্ন করবো। তুলা তৈরির কাঁচামাল হিসেবে প্লাস্টিকের পন্য ব্যবহার করায় পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে বাংলাদেশ। কারণ তুলা উৎপাদনে যে ধরনের বোতল ব্যবহার করা হয় তা মাটির সঙ্গে সহজে মিশে না। ফলে পরিবেশের ব্যাপক দূষণ করে এই প্লাস্টিক। তাই পরিবেশের সুরক্ষায়, ফেলে দেওয়া এই প্লাস্টিককে কারখানায় ব্যবহার করা হচ্ছে তুলা তৈরির কাঁচামাল হিসেবে। এই বর্জ্য থেকে উৎপাদিত তুলা বিদেশে রপ্তানি করার মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
প্লাস্টিক থেকে উৎপন্ন পোশাকঃ
- শার্ট
- টি-শার্ট
- প্যান্ট
- জ্যাকেট
- ট্রাউজার ইত্যাদি।
প্লাস্টিক থেকে তুলা তৈরির ভবিষ্যৎঃ দৈনন্দিন জীবনে আমরা অনেক প্লাস্টিক ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু প্লাস্টিক আমাদের পরিবেশ এর জন্য অনেক ক্ষতিকর। যদি এই পরিবেশ দুষনকারী প্লাস্টিককে কাজে লাগিয়ে তুলা উৎপাদন করা যায় তবে অনেকাংশে পরিবেশ দুষন রোধ করা সম্ভব হবে।
Reference:
- Wikipedia.
Writer Information:
Faysal Mahmud Sezan
NITER 10th batch
Department of Textile Engineering


good