Saturday, April 27, 2024
More
    HomePrintingAOP (All Over Printing) টেকনোলজিতে রোটারি স্ক্রিন প্রিন্টিং এর উপর সামান্য আলোকপাত

    AOP (All Over Printing) টেকনোলজিতে রোটারি স্ক্রিন প্রিন্টিং এর উপর সামান্য আলোকপাত

    বাংলাদেশের টেক্সটাইল সেক্টরে AOP (All Over Printing) টেকনোলজি এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৮০ টিরও বেশি ফ্যাক্টরিতে AOP টেকনলোজি রয়েছে। পূর্বে AOP টেকনোলজিতে রোটারি প্রিন্টিং মেশিন ও ফ্লাটবেড প্রিন্টিং মেশিন ব্যবহার হতো। কিন্তু বর্তমানে ডিজিটাল প্রিন্টিং মেশিনও জায়গা করে নিয়েছে। এখন জেনে নেওয়া যাক রোটারি স্ক্রিন প্রিন্টিং সম্পর্কে কিছু তথ্য।

    রোটারি স্ক্রিন প্রিন্টিং মেশিন:

     রোটারি স্ক্রিন প্রিন্টিং মেশিনের স্ক্রিনগুলো নিকেলের তৈরি এবং বৃত্তাকার। রোটারি স্ক্রিন এর ডায়ামিটার হল ৬৪১ মি.মি., ৮২০মি.মি., ৯১৪ মি.মি. ও ১০১৮ মি.মি.। স্ক্রিনে অসংখ্য ছোট ছোট ছিদ্র থাকে যা খালিচোখে দেখা যায় না। ফেব্রিকে যে ডিজাইন করা হবে সেটা রোটারি স্ক্রিনের ডায়ামিটারের সাথে ক্যালকুলেশন করে ডিজাইনের রিপিট তৈরি করতে হয়। ডিজাইন অনুযায়ী স্ক্রিনের কিছু ছিদ্র খোলা থাকে এবং কিছু ছিদ্র বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপর ফেব্রিকের উপর প্রিন্টিং এর সময় স্ক্রিনের খালা ছিদ্র থেকে রং বের হতে থাকে। ফেব্রিকে যে ডিজাইন করা হবে তাতে যে কয়টা কালার হবে সেই সংখ্যক রোটারি স্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। ফেব্রিকে যদি পাঁচটি কালার দরকার হয় রোটারি স্ক্রিন হবে পাঁচটি। তবে সর্বোচ্চ ১২ কালারের বেশি প্রিন্ট করা হয় না। যেকোনো ফেব্রিকের উপর রোটারি স্ক্রিন প্রিন্ট করা যায়। স্ক্রিন ডেভেলপ হবার পর রোটারি মেশিনে তোলার আগে প্রতিটি স্ক্রিনের কোটিং কেমিক্যালকে হার্ড করার জন্য ২০-৩০ মিনিট Polymerizar মেশিনে কিউরিং দিতে হয়। প্রিন্টিং এর সময় ফেব্রিক যাতে আপডাউন না করে সেজন্য মেশিনের ব্ল্যাঙ্কেট এর সাথে গাম লাগানো থাকে। কারণ ফেব্রিক যদি একটু সরে যায় তাহলে ডিজাইন ঠিকভাবে হবে না। ফেব্রিকে যে রং ব্যবহার করা হবে তা ড্রামের মধ্যে থাকে। একেকটা স্ক্রিনের সোজা একেক রঙের ড্রাম থাকে। Compressor মেশিনের সাহায্যে অটোমেটিক্যালি ড্রাম থেকে পাইপের মাধ্যমে কালার স্ক্রিনে পৌঁছে। ফেব্রিক প্রোডাকশনের সময় ক্রমাগত দ্রুতগতিতে স্ক্রিন রোটেশন হয় বলে স্ক্রিনের গায়ে মাঝে মাঝে পিনহোল বের হয়। তখন মেশিন থেকে স্ক্রিন নামিয়ে পিনহোল রিটাচিং করে বন্ধ করে পুনরায় মেশিন চালু করতে হয়।

    রোটারি স্ক্রিন বেশ ব্যয়বহুল। প্রতিটি স্ক্রিনের মূল্য বাংলাদেশে প্রায় ৫ হাজার থেকে আট হাজার টাকা। এটি নির্ভর করে রোটারি স্ক্রিনের ডায়ামিটার এর উপর। একটি রোটারি স্ক্রিন সর্বোচ্চ ৩/৪ বার পুনরায় ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই স্ক্রিন কেমিক্যাল এর মাধ্যমে ভালোভাবে ওয়াশ করতে হবে। কারণ প্রোডাকশনের পর স্ক্রিন ভালোভাবে ওয়াশ না করলে স্ক্রিনের ওপেন এরিয়া ব্লক হয়ে যায়। প্রিন্টিং এর সময় রোটারি স্ক্রিনগুলো কালার অনুযায়ী লাইট থেকে ডিপ অথবা ডিপ থেকে লাইটে সাজানো থাকে। রোটারি মেশিনে প্রিন্টিং ডিজাইন একবার ভুল হয়ে গেলে সেটা ঠিক করার কোনো উপায় নেই একেবারে বাদ হয়ে যাবে। পুনরায় নতুন করে সব করতে হবে। কারণ প্রিন্টিং এ একাধিক রং ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে ডায়িং একটি রং এর শেড থাকে। তাই ডায়িং এর চেয়ে প্রিন্টিং একটি জটিল প্রক্রিয়া। বিছানার চাদর,প্যান্ট শার্ট, হুডি, টি শার্ট, পলো শার্ট, বাচ্চাদের পোশাক, মেয়েদের টপ বটমস, ইনার গার্মেন্টস, পর্দাসহ আরো অনেক কিছুতে রোটারি স্ক্রিন প্রিন্ট ব্যবহৃত হয়।

    রোটারি স্ক্রিন Expose করতে অনেক ধরনের মেশিনারিজ ব্যবহার করা হয়। যেমন:

    • Exposing machine-Inkjet or Lesar
    • Cool dryer machine/Climatizer
    • Coating machine
    • Polymerizer machine
    • Light stand & developing stand
    • Water tank/Screen developing tank
    • Endring fixer/Endring gluring machine
    • Unpacking machine
    • Screen checking stand

      রোটারি মেশিনের কয়েকটি ব্র্যান্ডের নাম:
    • Reggiani—-Italy
    • Stork—-Netherland
    • Zimmer—-Austria
    • Buser—-Switzerland
    • MHMS—-Austria
    • Harish—-Indian
    • Ji-Jong—-China

      রোটারি স্ক্রিন প্রিন্টিং এর জন্য ৬ ধরনের প্রিন্টিং পেস্ট ব্যবহৃত হয়। রিয়েক্টিভ প্রিন্ট, পিগমেন্ট প্রিন্ট,  রেসিস্ট প্রিন্ট, ডিসচার্জ  প্রিন্ট, বার্নআউট প্রিন্ট এবং গ্লিটার প্রিন্ট। এখানে রিয়েক্টিভ প্রিন্ট সবচেয়ে হালকা এবং ডিসচার্জ প্রিন্ট হলো সবচেয়ে হার্ড। রিয়েক্টিভ প্রিন্ট ডায়িং এর উপর বা কালো রঙের ফেব্রিকের উপর করা যাবে না। ডিসচার্জ প্রিন্ট করা হয় ডিপ ডায়িং এর উপর।

      রোটারি স্ক্রিন প্রিন্টিং এর গুরুত্বপূর্ণ ধাপসমূহ:

    • ডিজাইন:  প্রিন্টিং এর জন্য বায়ার যে ডিজাইন করতে বলে সেটা ঠিক সেভাবেই ডিজাইনার এর মাধ্যমে ধারাবাহিক কিছু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডেভেলপ করতে হয়। ডিজাইন প্রিন্টিং এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ কারণ ডিজাইন অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রমগুলো সম্পন্ন হয়। এজন্য ডিজাইনকে প্রিন্টিং এর হার্ট বলা হয়। তাই ডিজাইন যাতে কোনোভাবে ভুল না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। ডিজাইনার এর টেক্সটাইল প্রিন্টিং ডিজাইন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে।
    • ম্যাশ:  ম্যাশ বলতে স্ক্রিনের ছিদ্রকে বোঝায়। ম্যাশ কম হলে স্ক্রিনের ছিদ্র বড় হবে, ম্যাশ বেশি হলে ছিদ্র ছোট হবে। ম্যাশ সিলেকশনের উপর নির্ভর করে প্রিন্টিং লাইনের thikness মোটা হবে নাকি চিকন। ম্যাশ যত বেশি হবে লাইনের thikness তত চিকন হবে। আর ম্যাশ কম হলে প্রিন্টিং লাইনের thikness মোটা হবে। লাইন হাফ মিলিমিটার হলে ম্যাশ হতে পারে ১৫৫, ১ মিলিমিটার হলে ৮০। যদি ১৫৫ ম্যাশ এর জায়গায় দেয়া হয় ৮০ তাহলে লাইন হাফ মিলিমিটার এর জায়গায় ১ মিলিমিটার হয়ে যাবে। তাই ডিজাইন সঠিকভাবে করার জন্য ম্যাশ সিলেকশন সঠিকভাবে করতে হবে। একটু কমবেশি হলেই সমস্যা হয়ে যাবে।
    •  প্রেসার:  অপারেটর প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। স্ক্রিন থেকে রং কি পরিমাণে বের হবে তা প্রেসারের উপর নির্ভর করে। প্রেসার কমবেশি হলে হবে না যতটুকু দরকার সেটাই দিতে হবে। প্রেসার যদি বেশি দেয়া হয় তাহলে রং বেশি বের হয়ে ছড়িয়ে যাবে আবার কম হলেও রং কম হবে।
    • স্পিড: রোটারি স্ক্রিনের মাধ্যমে প্রতি মিনিটে ৩০-৮০ মিটার ফেব্রিক প্রিন্ট করা হয়৷ মেশিনের স্পিড যদি বেশি হয় প্রোডাকশন বেশি হবে, স্পিড কম হলে প্রোডাকশন কম হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে স্পিড কখন বেশি হবে, কখন কম হবে? ফেব্রিকের কালারের সংখ্যা কম হলে মেশিনের স্পিড বেশি হবে, তখন প্রোডাকশন বেশি হবে। তবে ফেব্রিকের কালার সংখ্যা যদি বেশি হয় তাহলে স্পিড কম হবে, প্রোডাকশন তখন কম হবে। তাই স্পিড নির্ভর করে ফেব্রিকের কালার সংখ্যার উপর।
    • ভিসকোসিটি: Viscosity মানে ঘনত্ব । যদি রঙের ঘনত্ব কম হয় লিকুইডিটি বেশী হয়, ঘনত্ব বেশি হলে লিকুইডিটি কম হয়। প্রয়োজনের চেয়ে ঘনত্ব কম হয়ে গেলে ফেব্রিকের উপর প্রিন্টিং পেস্ট ছড়িয়ে যাবে। তাই রঙের ভিসকোসিটি যতটুক হওয়া প্রয়োজন ততটুকই হতে হবে।

      সম্পূর্ণ প্রিন্টিং প্রসেস সম্পন্ন হওয়ার পর যদি দেখা যায় বায়ার যেরকম ডিজাইন করতে বলেছে ঠিকভাবে হয়নি। যেমন ডিজাইনের লাইন হয়তো হাফ মিলিমিটার এর জায়গায় এক মিলিমিটার হয়ে গেছে। তখন ঠিক কোথায় সমস্যা হয়েছে বের করার জন্য ডিজাইন, ম্যাশ সিলেকশন, প্রেসার, স্পিড, ভিসকেসিটি সবকিছু চেক করতে হবে। শুধুমাত্র এক জায়গা যেমন ম্যাশ সিলেকশন দেখে এটা বের করা সম্ভব হবে না। ডিজাইন থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ প্রসেস চেক করতে হবে। তাই প্রিন্টিং হেড যিনি থাকবেন তার সবগুলো ধাপ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। ফেব্রিকে ডিজাইনের লাইনের thikness দেখে বুঝতে হবে ম্যাশ সিলেকশন কত নেয়া হয়েছে, কালারের সংখ্যা অনুযায়ী প্রেসার যা দেয়া হয়েছে তা ঠিক আছে কিনা, একইভাবে ভিসকোসিটি, স্পিড, ডিজা ইন সব ধাপের সম্পূর্ণভাবে জ্ঞান থাকলেই সমস্যা ঠিক কোথায় হয়েছে বের করা সম্ভব হবে।

      আর্টিকেলটি লিখতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেনঃ

      SHAWKAT HOSSAIN SOHEL
      Chief Designer
      Unifill Composite Dyeing Mills Ltd.
      General Secretary
      All-Over Printing Technology of Bangladesh

      Writer Information:
      Abida Ferdousi
      Department of Textile Engineering
      BGMEA University of Fashion & Technology (BUFT)
      Batch:201
      Campus Ambassador (Team-BUFT)


    RELATED ARTICLES

    2 COMMENTS

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments