Thursday, April 18, 2024
More
    HomeRMGRMG এবং বাংলাদেশের অবদান এবং প্রভাব

    RMG এবং বাংলাদেশের অবদান এবং প্রভাব

    বর্তমান সময়ে আমাদের চিন্তাধারা যেমিনই আধুনিক তেমনই আমাদের জীবনযাত্রায়ও এসেছে আধুনিকতার ছোয়া আর নানা পরিবর্তন। হাতের নাগালেই সবকিছু পেতে চাই আমরা কারণ আমাদের হাতে সময়ের অভাব৷ ঘড়ির কাঁটার সাথে পাল্লা দিয়ে যেন আমাদের ছুটে চলা। এই পরিবর্তন আমদের পোশাক পরিচ্ছদের ধরনের পাশাপাশি সমগ্র বস্ত্রশিল্পে এনে দিয়েছে নতুন এক যুগ, এক সম্ভাবনাময় দিগন্ত। যা সমগ্র বিশ্বে রেডি মেইড গার্মেন্টস বা তৈরী পোশাক শিল্প নামে পরিচিত।

    আপনার হঠাৎ কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন। ধরে নেয়া যাক, বিয়ের আনুষ্ঠান অথবা অফিসিয়াম কোনো প্রোগ্রামে। কিন্তু সেই প্রোগ্রামে যাওয়ার মতো যথাযথ আউটফিট নেই আপনার কাছে। যেহেতু হঠাৎই সিদ্ধান্ত তাই তৎক্ষনাত সেই আউটফিট বানিয়ে নেওয়াও সম্ভব না এখন। কি করবেন আপনি এই পরিস্থিতিতে?
    খুব সাহজ সমাধান। পছন্দমতো রেডি মেইড পোশাকের আউটলেটে যাবেন। দেহের মাপ অনুযায়ী কিনে নিবেন।

    কিন্তু ইতিহাস ঘাটলেই দেখা যায় আজ থেকে দু’শত বছর আগেও এমন ব্যবস্থা ছিল না। তাই চাইলেই আপনি নতুন পোশাক পরতে পারতেন না তখনকার সময়ে। তবে এখন তা খুব সহজেই সম্ভব রেডি মেইড গার্মেন্টস এর কল্যাণে।

    এবার তাহলে এর পরিচয় জানা যাক, যার আবির্ভাবের পর পোশাক শিল্পের এতোটা পরিবর্তন। রেডি মেইড গার্মেন্টস বা তৈরী পোশাক শিল্প হলো পরিধান করার মতো পরিপূর্ণ পোশাক বা ফিনিশ্ট টেক্সটাইল যা বহুল পরিমানে উৎপাদন করা হয়। হরেক রকমের ডিজাইন ও দৈহিক মাপ অনুসারে এবং বহুল পরিমানে তৈরী করা হয় এ সকল পরিধেয় পোশাক।যা বিশ্বের ক্লোথিং ইন্ডাস্ট্রির এক নতুন সেক্টরে পরিনত হয়েছে।

    চিরায়ত পদ্ধতির বাইরে গিয়ে টেক্সটাইল সেক্টরে বিশেষ পরিবর্তন আনে এই আর এম জি। দেহের মাপ নিয়ে সেই অনুযায়ী ফেব্রিক্স থেকে পোশাক তৈরী করার বদলে, বিভিন্ন দেশের নানা মানুষের দেহের মাপে তৈরী করা হয় এসকল পোশাক। সাধারণ মাপের গড় করে, বেশ কিছু মাপে তৈরী হয় এই পোশাক গুলো৷

    বাংলাদেশ সহ অনেক দেশই এই শিল্পে বেশ এগিয়ে। আর এম জি সেক্টরে বাংলাদেশের অবদান ও উল্লেখ করার মতো। বাংলাদেশ UK, USA, CANADA, প্রায় সব ইউরোপীয় দেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশেই এই তৈরী পোশাক রপ্তানি করছে।যার ফলশ্রুতিতে এই সেক্টরে বাংলাদেশের প্রভাবও উল্লেখ করার মতো। খুব ক্ষুদ্র পরিসরে শুরু হলেও বাংলাদেশের টেক্সটাইল সেক্টরকে প্রতিনিধিত্ব করে এখন এই তৈরী পোশাক শিল্প। বিশ্বে রয়েছে এদেশের পোশাকের বিশেষ কদর।
    স্বল্প মূল্যে তৈরী করায়, পোশাকের মূল্য অনেক টুকুই কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে আমাদের দেশে। তাই এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবদান প্রশংসার দাবিদার। তবে এখন এই খাত যেমন আছে শুরুতে মোটেই এমন ছিল না।

    জেনে নেওয়া যাক এই শিল্পের ঐতিহাসিক সূচনা।সব কিছু সৃষ্টির পিছনে একটি ইতিহাস থাকে ঠিক তেমনি রেডিমেইড পোশাক তৈরির পিছনেও একটি ইতিহাস রয়েছে, আর এই ইতিহাস বেশি পুরোনো নয় মাত্র ১৮০ বছর আগের কাহিনী। আর এই পোশাক সেলাই করতে যে সেলাই মেশিন দরকার তার ইতিহাস ২৬০ বছর আগের কথা। ১৭৫৫ সালে ইংল্যান্ড এর চার্লস ফ্রেডরিক প্রথম যান্ত্রিক সেলাই মেশিন আবিষ্কার করেন। এই মেশিন দিয়ে শুধু হ্যান্ড স্টিচ এর মত স্টিচ করা যেতো। পরবর্তীতে ১৮৫১ সালে ইসাক মেরিট সিজ্ঞার সফল ভাবে সেলাই মেশিন আবিষ্কার করতে সক্ষম হন। কিন্তু এই সেলাই মেশিন আবিষ্কার এর আগেই ১৮৩১ সালে ৮০ টি পুরোনো সেলাই মেশিন নিয়ে প্যারিসে বিশ্বের প্রথম গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি স্থাপিত হয় যেখানে মিলিটারিদের ইউনিফর্ম তৈরি করা হয় যা দিয়ে মূলত রেডিমেইড পোশাক এর সূচনা হয়। এরপর ১৮৫৬ সালে জন বেরেন ৩ টি সেলাই মেশিন নিয়ে প্রথম গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি চালু করেন।এরপর পর্যায়ক্রমে অনেক আধুনিক সেলাই মেশিন তৈরি করা হয় যেমন বর্তমান বিশ্বে জাপানের নামকরা সেলাই মেশিন প্রস্তুতকারী কোম্পানি জুকি ১৯৪৭ সালে তাদের প্রথম সেলাই মেশিন তৈরি করেন।

    বাংলাদেশের রেডিমেইড পোশাক তৈরি শুরুর ঘটনা তো ১৯৬০ সালে রিয়াজ গার্মেন্টস এর হাত ধরেই। ১৯৬০ সালে ঢাকায় রিয়াজ স্টোর নামে একটি ছোট টেইলারিং প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৫ বছর ধরে এটি দেশীয় বাজারেই কাজ করত, ১৯৭৩ সালে এই রিয়াজ স্টোর নাম পরিবর্তন করে মোর্সাস রিয়াজ গার্মেন্টস লিমিটেড নামকরণ করে রপ্তানী বাজারে এর কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৭৮ সালে একটি প্যারিস কোম্পানির কাছে ১৩ মিলিয়ন শার্ট রপ্তানি করে যা ছিল বাংলাদেশের রপ্তানিকারক প্রথম পোশাক। এরপর প্রথম নন – ইক্যুইটির যৌথ উদ্যোগে ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশ গার্মেন্টস লিমিটেড। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত তিন জন মহিলা সহ প্রায় ১২০ জন অপারেটর এই প্রতিষ্ঠানে ছিল। ১৯৮০ সালের শুরুর দিকে এই প্রতিষ্ঠান রেডিমেইড পোশাক উৎপাদন শুরু করে। এরপর অনেক কোম্পানি আসলেও বাংলাদেশের ইতিহাসে রেডিমেইড পোশাক তৈরির সূচনা কিন্তু রিয়াজ গার্মেন্টস লিমিটেড এর মাধ্যমেই।

    মহিলাদের কাজের সু্যোগ সৃষ্টি ও অর্থনীতি তরান্বিত করতে তৈরি পোশাক শিল্প সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে সবচেয়ে বড় দাগ রাখে এই মহিলারাই। ১৯৮০ সাল থেকেই, পোশাক শিল্প বাংলাদেশের মহিলাদের বড় পরিসরে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে আসচে। তাই তৈরি পোশাক শিল্প বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়নে সবচেয়ে বড় ভুমিকা রাখে। প্রতি ৫ জনের ৪ জন লাইন কর্মীরাই মহিলা।

    বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড বলা হয় এই তৈরি পোশাক শিল্পকে যেটি সর্বমোট রপ্তানি শিল্পের ৮৪% কন্ট্রিবিউট করে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে। করোনা কালে এটি ২.৯৯% থেকে ১৫.৫৪ বিলিয়ন ডলার নেমে যায়। এছাড়া রপ্তানি শিল্পে নীটওয়্যার ৮.৫২ বিলিয়ন ডলার আয় করে, যেটি ৩.৯% ঊর্ধ্বমুখী। ওবেন পোশাকে ৭.০১ বিলিয়ন ডলার আয় করে, যেটি ১০.২২% নিম্নমুখী। ( From Export Promotion Bureau, EPB)
    সর্বমোট রপ্তানি: ৩৩.৬৭ বিলিয়ন ডলার (২০১৯-২০২০)
    RMG রপ্তানি : ২৭.৯৫ বিলিয়ন ডলার ( ২০১৯-২০২০)

    বাংলাদেশ বিশ্ব পোশাক শিল্পখাতে চায়নার পর দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে। ২০১৯ সালে বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের বাজারের শেয়ারের পরিমাণ 7% এর কাছাকাছি। তাই বিশ্ব পোশাক খাতে বাংলাদেশের অবস্থান অনেকটা মজবুত।

    বাংলাদেশের টেক্সটাইল সেক্টরে আর এম জি (রেডি মেইড গার্মেন্টস) এক অনন্য ভুমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পের অগ্রগতি ধরে রেখেছে মুলত আর এম জি সেক্টর। টেক্সটাইল সেক্টর থেকে যে বৈদেশিক মূদ্রা আমরা আয় করি তার বেশির ভাগ অংশই আমরা পাই এই তৈরী পোশাক শিল্প থেকে। এছাড়া মোট বৈদেশিক আয়ের ৮১ শতাংশ আমরা এই খাত থেকে পাই। এই খাত আমাদের দেশের নারীদের দিয়েছে নতুন কর্মসংস্থান। দেশের কর্মজীবী নারীদের ৯১ শতাংশ এই সেক্টরে কাজ করে নানা শ্রেণীভেদে।
    যার ফলে দারিদ্র্যতার হার কমেছে বহুলাংশে। ২০১৯ এর হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের অতিদারিদ্র মানুষের পরিমান কমে হয়েছে ২০.৫০ শতাংশ। যা মুলত এদেশের পোশাক শিল্প তথা আর এম জি সেক্টরের সফলতার প্রমান। বর্তমানে ৪০লক্ষ এর বেশি লোক এই খাতেও আওতায় জীবিকা নির্বাহ করছে। এমনকি বাংলাদেশের জিডিপি তে এ খাত উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে। দেশের জিডিপির ১৪.১ শতাংশ পাওয়া যায় শুধুমাত্র আর এম জি সেক্টর থেকে। সর্বপরি দেশে উন্নয়ন, দেশের মানুষের জীবীকা ও জীবনধারা সব কিছুতেই প্রভাব বিস্তার করছে আর এম জি সেক্টর। বর্তমানে আরও যেসব প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার, তার দ্বারা এই খাত সমগ্র বাংলাদেশের চালিকা শক্তিতে যে সুদুরপ্রসারি প্রভাব রেখে যাবে তা শুধুমাত্রই সময়ের অপেক্ষা।

    বাংলাদেশে COVID-19 সংক্রমণের সংখ্যা প্রতিদিন বৃদ্ধি হওয়ার কারণে, সরকার ২০২০ সালের 20 শে মার্চ থেকে দেশে লকডাউনের একটি রাষ্ট্র ঘোষণা করে, যা ২০২০ সালের ৩০ মে অব্যাহত ছিল। লকডাউনের ফলে বিজিএমইএ তাদের কারখানাগুলি বন্ধ করে দেয় সরকারের লকডাউন নির্দেশ মোতাবেক। কিন্তু, COVID-19 দ্বারা প্রভাবিত লকডাউনের কারণে পোশাক শিল্প চালানের প্রক্রিয়াগুলি সমস্যায় পড়ে যায় এবং তার ফলে অনলাইনে ক্রয়ের চাহিদা বাড়তে থাকে, কিন্তু সাপ্লাই চেইন এর বিকল্পগুলি পরিবর্তনের কারণে চাহিদা পূরণ করতে পারে না। ফলস্বরূপ, RMG কর্মীরা সহ প্রায় ১০ কোটি শ্রমজীবী ​​লোকেরা ঢাকা থেকে নিজ শহরে ফিরে এসেছিল, কারণ তারা কাজ না করে ঢাকায় নিজেদের আর্থিক ব্যয় বহন করতে সক্ষম হবে না। দুর্ভাগ্যক্রমে, COVID-19 প্রতিরোধ সম্পর্কিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেমন অন্যের থেকে ন্যূনতম নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম সেভাবে মানা হয়নি। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বজায় না রেখে বাস, ফেরি এবং ট্রেনে প্রচুর জনসমাগমের খবর পাওয়া গেছে, যা মারাত্মক সংক্রমণ ঝুঁকির দিকে নিয়ে যায়।

    কেবলমাত্র বাংলাদেশের আরএমজি খাত পুরো বিশ্বকে তৈরি পোশাক সরবরাহ করে না, এই খাতটি ইতিমধ্যে কয়েকটি বিশ্বব্যাপী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিল।
    বাংলাদেশ ২০১ F ফিফা বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া 32 টি দেশের জন্য এক বিলিয়ন ডলার মূল্যের ফ্যান জার্সি রফতানি করেছে, যা এই দেশের গার্মেন্টস রফতানিকারীদের জন্য একটি উত্তেজনাপূর্ণ উদ্বোধন হিসাবে দেখা যেতে পারে। রাশিয়ায় ১৪ ই জুন থেকে শুরু হওয়া বিশ্বকাপের ফ্যান জার্সি তৈরিতে প্রায় 100 টি পোশাক কারখানা জড়িত ছিল। বিশ্বকাপ ছাড়াও রিয়াল মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনার মতো ইউরোপের বিভিন্ন ফুটবল ক্লাবের জন্য সারা বছর জার্সি রফতানি করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের একটি চট্টগ্রাম-ভিত্তিক কারখানাটি আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, স্পেন এবং জার্মানির খেলোয়াড় এবং সমর্থকদের জন্য 30,000 পিস জ্যাকেট প্রেরণ করেছিল।

    উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি টেক্সটাইল জগতের এই নতুন দিগন্তে বাংলাদেশের রয়েছে অপরিসীম অবদান। সেদিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন আমরা এই আর. এম. জি সেক্টর দ্বারা সমগ্র বিশ্বের টেক্সটাইল জগতে প্রতিনিধিত্ব করবো । রেডিমেইড গার্মেন্টস বা তৈরি পোশাক শিল্প তাই নতুন সম্ভাবনার নাম। বিশ্ব বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই সেক্টরে বাংলাদেশের প্রভাব আরো বৃদ্ধি পাবে।কিছু প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে অবদান রেখে যাচ্ছি এবং যার ফলে সমগ্র বিশ্বের আর. এম. জি সেক্টর এ প্রভাব বিস্তারে সফল হচ্ছি।

    Writer’s information:

    Munthaha Alam Mumu
    Naimul Hasan Anas,
    Muntasir Ahmed Toufik,
    Md. Hashibul Hossain

    Semester: 2nd year, 2nd semester.
    Batch: 39
    University : Ahsanullah University of Science and Technology.

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments