Saturday, April 20, 2024
More

    Sea silk

    হ্যাঁ ঠিকই দেখছেন। নতুন নতুন আবিষ্কার এর নেশা মানুষকে যে কতদূর নিয়ে যায় তা হয়তো আমরা কল্পনাও করতে পারবো না। আর এই আবিষ্কার এর নেশার’ই এক অনন্য প্রাপ্তি হলো সি সিল্ক বা সামুদ্রিক রেশম। বিরল এ সিল্ক কখনো আবিষ্কার হবে এ নিয়ে আয়াদের কোন ধারনাই ছিলো না কিন্তু তাই বলে কি নতুন কিছু আবিষ্কার হবে না? হবে এবং সেই আবিষ্কার চমকে দেয় পুরো বিশ্ব কে।

    আমরা শুধু জানতাম সাধারন রেশম এর কথা। যা তুঁত গাছ এ রেশম পোকা চাষ করে পরবর্তীতে তা থেকে রেশমি সুতো সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু আমাদের অনেকেরই জানা নেই সামুদ্রিক রেশম এর কথা। জানা নেই কিভাবে পাওয়া যায় এই রেশম। সামুদ্রিক কোন দ্বীপের তুঁত গাছ থেকে এ রেশম পাওয়া যায় এমন ধারণা করাটা বোকামি হবে। তাহলে কিভাবে পাওয়া যায় এই বিরল সামুদ্রিক রেশম? তাই জানার কিছুটা চেষ্টা করবো।
    সমুদ্রে তো অনেক রকমেরই সামুক, ঝিনুক পাওয়া যায়। আমারা অনেকেই আবার তা শোভা বর্ধনের জন্য সংগ্রহ করি। আবার আরো একধরনের সামুদ্রিক ঝিনুক আছে যার খোলস থেকেই মূলত এই সামুদ্রিক রেশম সংগ্রহ করা হয়। এই সামুদ্রিক রেশম পাওয়া খুবই কঠিন। সেই সাথে পৃথিবী তে এর অস্তিত্ব রয়েছে সেই ব্যাপার টি অনেকে বিশ্বাস করতে চায় না।মূলত কিয়ারা ভিগোর নামের একজন ব্যাক্তির কল্যাণে আজও পৃথিবীতে টিকে আছে সামুদ্রিক রেশমের অস্তিত্ব। সামুদ্রিক রেশম এতটাই সূক্ষ্ম যে এটি চুলের চেয়েও তিনগুণ চিকন , আবার তুলোর মতো হালকা। এই রেশমের রঙ সাধারণত বাদামী হয়ে থাকে। সামুদ্রিক রেশমের এই তন্তুগুলোকে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ইতালির সার্দিনিয়া দ্বীপে এবং যে ঝিনুক থেকে বিরল সামুদ্রিক রেশমের তন্তু পাওয়া যায় সেটির নাম হলো “পিনা নোবিলিস”। সাধারণত এই ঝিনুকগুলোর আকৃতি তুলনামূলক ভাবে অনেক বড় হয়, ঝিনুক গুলো দৈর্ঘ্যে ১ গজের উপরে হয়ে থাকে। সমুদ্রের পানিতে থাকা এই ঝিনুকগুলোর শক্ত খোলস ঢাকা থাকে” বাইসাস “নামক একপ্রকার সূক্ষ্ম তন্তু দ্বারা। আর এই বাইসাস নামক তন্তু থেকেই পাওয়া যায় কাংখিত সেই বিরল সামুদ্রিক রেশম।

    পিনা নোবিলিস নামক যে ঝিনুকের খোলস থেকে মেলে এই রেশম তন্তু তা পানির তলদেশে গুহায় পাওয়া যায়। সূক্ষ্ম বাইসাস তন্তুগুলো লম্বায় ছয় ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রাপ্ত সেই ঝিনুক থেকে রেশম তন্তু সংগ্রহ করার পরে সেগুলো প্রথমে সমুদ্রের পানি এবং এর পরে স্বাদু পানিতে ধুয়ে নিতে হয় এরপর, সুঁচালো একরকমের চিরুনি দিয়ে সেই তন্তুগুলোকে ভালোভাবে আঁচড়ানো হয়। পরবর্তীতে চরকার সাহায্যে সেই তন্তুগুলো থেকে সূক্ষ্ম সুতা কাটা হয় এবং সবশেষে প্রাপ্ত তামাটে বা সোনালী রঙের মাঝামাঝি কোনো এক বর্ণের সুতাগুলোকে লেবুর রসে পরিষ্কার করলে সেগুলোতে চকচকে ভাব দেখা দেয় । এরপরই এই সুতাগুলো প্রস্তুত হয় কাপড় বা বিভিন্ন সামগ্রী সামগ্রী তৈরীর জন্য

    এবার এর ইতিহাস সম্পর্কে কিছুটা ধারনা নেয়া যাক। এই সামুদ্রিক রেশম নিয়ে ইতিহাসে কিছুটা দোটানা আছে। প্রাচীনকালে ল্যাটিন ভাষায় ‘বাইসাস’ বলতে বোঝাতো লিনেন কে আর সামুদ্রিক রেশম দু’ ধরনের তন্তুকেই বোঝাতো।আর এই জন্যই গবেষকদের কাছে ইতিহাসের অনেক লিখিত বাণী ব্যাখ্যা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রাচীন কালে মিশরীয় মমি গুলো যে কাপড় দিয়ে মোড়ানো হতো, সেই কাপড় নাকি অনেকসময় বাইসাসের তন্তু দিয়ে তৈরি হতো।বর্তমানে অনেক ইতিহাসবিদ সে বাইসাস কি সাধারণ কোনো রেশম, নাকি বিরল সামুদ্রিক রেশম তা ব্যাখ্যা করতে পারেন না।

    ইতিহাস যাই বলুক, এই সামুদ্রিক রেশম যে কতটা বিরল এবং দুর্লভ তা অস্বীকার কোন অবকাশ নেই। এই দুর্লভ রেশমটি পাওয়া কিছুটা কষ্টসাধ্য বলে সময়ের তাগিদে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি রা। কিন্তু চাওয়া থাকবে যদি এই সম্ভাবনাময় রেশমটি আলোর মুখ দেখে তাহলে নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হবার অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

    তথ্যসূত্র : “দ্যা গার্ডিয়ান”

    Writer information:
    Muntachir Rahman
    Department Of Textile Engineering
    Batch:201
    BGMEA UNIVERSITY OF FASHION AND TECHNOLOGY

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments