Friday, April 19, 2024
More
    HomeTraditional Textileঐতিহ্যবাহী পোশাক

    ঐতিহ্যবাহী পোশাক


     
    পোশাক এমন একটি জিনিস যা শুধু মানুষের লজ্জা নিবারণের জন্যেই ব্যবহার হয় তা নয় বরং এটি একটি জাতির পরিচিতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধারন করে এবং সংরক্ষণ করে। যদিও এই যুগে বিদেশি ফ্যাশনের মিশ্রনে জাতির ঐতিহ্য অটুট নেই তবে তা বিলুপ্তও হয়ে যায় নি। এখন এমন কিছু দেশের কথা বলবো যাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক এখনো প্রচলিত আছে।


    বাংলাদেশ: শাড়ি এবং পাঞ্জাবি
    এখানে বাংলাদেশের কথা বলা হলেও ভারতের কথাও চলে আসে কেননা ভারতের ঐতিহ্যবাহী পোশাকও শাড়ি এবং দূতি।এসব পোশাক দৈনন্দিন জীবনে পরা না হলেও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বা বিশেষ আয়োজনে পরা হয়। এই পোশাক পরিধান কারীকে মনে করিয়ে দেয় বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং গৌরবকে।  এই পোশাক পরিধান কারী কিছু বলা ছাড়াই তার পরিচিতি সবার কাছে ফুটে ওঠে যে সে একজন বাঙালি।


    ভূটান: খো এবং কিরা
    খো নামক পোশাকটি পুরুষরা পরিধান করে এবং কিরা নামক পোশাকটি মহিলারা পরিধান করে। এগুলো এতোই জনপ্রিয় পোশাক যে শহরে বসবাসকারী মানুষেরাও দৈনন্দিন জীবনে পরে থাকে। এই পোশাক তৈরিতে মোটা তুলো ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের পোশাক শীতের সময়ে বেশি পরিধেয়।এটি অনেক আরামদায়ক এবং শরীর উষ্ণ রাখে।


    ফারেও দ্বীপ: সোয়েটার ভেস্ট
    সোয়েটার ভেস্টের উৎপত্তি হয়েছে এই ফারেও দ্বীপ থেকে। এই‌ ডিজাইন এতোই সাদামাটা ছিল যে তা ২০০০ সালেই হারিয়ে যায়। পরবর্তীতে সোয়েটার ভেস্ট আবার ফিরে আসে আরো রঙীন, সুন্দর এবং আকর্ষণীয় ডিজাইনে। বর্তমান বাজারে এটি অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।


    চীন: মোসুও এবং হমোং
    মোসুও এবং হমোং হলো চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটো জাতি। ওদের নিজস্ব বিশ্বাস এবং ঐতিহ্য রয়েছে এবং ওদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকই চীনের সর্বত্র বিরাজমান। এই পোশাকটি বাহারি রঙের ও নতুনত্বের ছোঁয়ায় তৈরি। এই পোশাক ভারতের জাম্মু এবং কাস্মিরের মানুষরাও পরিধান করে। এছাড়াও পাহাড়ী এলাকায় বসবাসকারী মানুষেরাও এই পোশাক পরে।
    ইন্দোনেশি

    য়া: ব্লাউজ, ব্রোচ, এবং সরাং
    ইন্দোনেশিয়ার প্রধান অর্থ উপার্জনের ক্ষাত হলো পর্যটন শিল্প। তাই পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে স্থানীয় লোকজন আকর্ষণীয় পোশাক পরিধান করে যা ওদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক। যা সাধারণ তবে অভিযাতপূর্ণ। আকর্ষণীয় তবে বেশি জাঁকজমকপূর্ণ নয়। হালকা রেশমী কাপড় ইন্দোনেশিয়ার মেয়েদের কাছে বেশি জনপ্রিয়।
    কেনিয়া: কানগা
    কেনিয়া হলো আফ্রিকার এমন একটি জায়গা যেখানে কোনো প্রাশ্চাত্য বিশ্বের বা আধুনিকতা পৌঁছাতে পারেনি। তাই এখানকার মানুষ অনেক সাদামাটা, সাধারণ এবং বিলাসীতা ছাড়া জীবনযাপন করে। এরা সারা বিশ্বের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এদের ঐতিহ্য কোনো বিকৃতি ছাড়াই সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। এই পোশাকটি অনেক রঙিন এবং পাতলা যেহেতু এ দেশে গরম অনেক বেশি। তবে এই পোশাকের প্রতিটি অংশ, রং এবং ডিজাইনের পিছনে রয়েছে গভীর অনুভূতি ও মনের ভাবনা।


    ভিয়েতনাম: আও দাই
    ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার পোশাক সাদৃশ্যপূর্ণ। এই দেশগুলোর ঐতিহ্যবাহী পোশাক হলো রেশমী কাপড়ের তৈরি গাউন যা আরামদায়ক ও আকর্ষণীয়। ভিয়েতনামীদের জন্য তাদের ঐতিহ্য বজায় রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তাই তারা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক খুব গর্বের সাথে এবং নিয়মকানুন মেনে পরিধান করে। পুরো পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র ভিয়েতনামীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক তাদের কর্মসংস্থানে পরে রায়।


    মঙ্গোলিয়া: ডীল
    মঙ্গোলিয়ার পরিবেশ কঠোর ও প্রানহীন প্রকৃতির। তবে মঙ্গোলিয়ার মানুষরা হাঁসি খুশি হয় এবং বন্ধুসুলভ আচরণ করে। তাদের উষ্ণ হৃদয় এবং মজবুত ঐতিহ্যই তাদের পরিচয়। তাদের দেশের শীতল পরিবেশ তাদেরকে পশ্চিমা বিশ্বের সংস্কৃতি থেকে রক্ষা করে। শীতল পরিবেশ থেকে রক্ষা পেতে তারা এসকিমোদের মতো পোশাক পরিধান করে।


    মাদাগাস্কার: লামবা
    মাদাগাস্কার হলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার। এই দেশটি শুধু যে গাছপালা ও বনজঙ্গলে ঘেরা তা না এছাড়াও এখানে রয়েছে রঙের মেলা। সৌন্দর্য কাকে বলে জানতে হলে এখানে ভ্রমন করাটা জরুরি। এই রঙের খেলা ওদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকেও ছড়িয়ে গিয়েছে। মাদাগাস্কারের পোশাক নামিবিয়ার ও কেনিয়ার পোশাকের সংমিশ্রণে তৈরি। এই পোশাকটি হালকা ওজনের, ওয়ান পিস এবং গরম আবহাওয়ায় শরীরকে শীতল রাখে।


    জাপান: কিমোনো
    কিমোনো জাপানের ঐতিহ্যবাহী পোশাক হলেও এর জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপী। জাপানিরা তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে অনেক আন্তরিকতা ও গুরুত্বের সাথে বজায় রাখে। বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী পোশাক হিসেবে কিমোনো অনেক আরামদায়ক ও ত্বকের সুরক্ষায় ভালো ভূমিকা পালন করে। জাপানিরা কিমোনো আনুষ্ঠানিক পরিবেশ ছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করে থাকে।
    পরিশেষে বলতে চাই যে যদিও ঐতিহ্য প্রত্যেক জাতির নিজস্বতাকে প্রকাশ করে এখনকার যুগে তা বিকৃত হয়ে তাদের নিজস্বতাকে হারিয়ে নতুনত্বের সাথে মিশ্রিত হচ্ছে। নতুনত্ব ভালো তবে তা যদি আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে হয় তবে তা কারোই কাম্য নয়। তাই latest trend এর পাশাপাশি আমাদের জাতির ঐতিহ্য বজায় রাখা আমাদেরই দায়িত্ব ও কর্তব্য।

    AFSANA FERDOUS.

    Ahsanullah University Of Science and Technology(AUST)
    34TH BATCH.

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments