Friday, March 29, 2024
More
    HomeTechnologyব্লাকহোল যখন রঙিন পর্দায়

    ব্লাকহোল যখন রঙিন পর্দায়

    আমরা ইন্টারস্টেলার মুভি নিয়ে কম বেশি সবাই পরিচিত। মুভিটির শেষের অংশে ব্লাকহোলের কাল্পনিক অংশ নিয়ে আমরা বেশ মাথা খাটিয়েছি। দেখে আমাদের তৃতীয় মাত্রা থেকে বের হয়ে পঞ্চম মাত্রায় প্রবেশ কিংবা প্রবেশের পর মেরসাস কোডের মাধ্যমে সংকেতের সাহায্যে তথ্য প্রেরনের ভিন্নতা। যদিও তখনো পর্যন্ত আমরা জানতাম না ব্লাকহোল আসলেই দেখতে কেমন, আকার কেমন? স্টিফেন হকিং এর ব্রিফিং থিউরি থেকে ব্লাক হোল সম্পর্কে সামান্য ধারনা পেলেও এতদিন পর্যন্ত বিজ্ঞান বা বিজ্ঞানীরা স্বচক্ষে বিশ্বাস করানোর মতো কিছু দেখাতে পারেন নি।

    কম্পিউটারে সিমুলেশনের মাধ্যমে তৈরি ব্ল্যাক হোল

    ব্ল্যাক হোল অবশ্য অদৃশ্য বস্তু, কারণ এর মাধ্যাকর্ষণ বল হতে আলোও বেরিয়ে আসতে পারে না। আলো না আসায় আমরা এটিকে দেখতে পাব না। কিন্তু এর একটি সীমা আছে। কেন্দ্র হতে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বের পর মাধ্যাকর্ষণের প্রভাব যথেষ্ট কম থাকায় সে পৃষ্ঠ হতে আলো নির্গত হতে পারে এবং তাই সেই অবধি দেখা যেতে পারে। এই নূন্যতম পৃষ্ঠটিকে বলা হয় ইভেন্ট হরাইজন। মূলতঃ ১০ এপ্রিল আমরা ইভেন্ট হরাইজনের ছবিই দেখতে পেয়েছি।

    ইন্টারস্টেলার ছবিতে দেখানো ব্ল্যাক হোল

    আমরা এখনো পর্যন্ত ব্লাকহোলের যা দেখেছি তা সবই কম্পিউটারে সিমুলেশন এর মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে এবং ইন্টারস্টেলার মুভিতে আমরা যে ব্লাকহোল দেখেছি তা ঐ আদলেই তৈরি করা হয়েছে।মজার বিষয় হচ্ছে ইন্টারস্টেলারে দেখানো ব্লাকহোলের আর কালকের প্রকাশিত ব্লাকহোলের ছবিটি প্রায় কাছাকাছি।

    ব্ল্যাক হোলের প্রকৃত ছবি বা বিম্ব

    এই ব্ল্যাক হোলটি M87 নামের ভার্গো -এ গ্যালাক্সির কেন্দ্রে অবস্থান করছে। এটি পৃথিবী হতে ৫.৩ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। গ্যালাক্সিটির ব্যস ৬০ হাজার আলোকবর্ষ। অবগতির জন্য জানানো যায় আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির ব্যস ১ লক্ষ আলোকবর্ষ। ছবিতে ব্ল্যাক হোলের চারপাশের রিংটি অসমভাবে বিন্যাস্ত মনে হচ্ছে। এর কারণ হলো ব্ল্যাক হোলের শক্তিশালী মাধ্যাকর্ষণ আলোকে এর চারপাশে বাঁকিয়ে দেয়। ফলে এই ঘুর্ণনরত ব্ল্যাক হোলের যে অংশটি ঘুরে আমাদের দিকে আসে তা অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল দেখায় আর যে অংশটি আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে থাকে তা অনুজ্জ্বল দেখায়। ব্ল্যাক হোলটির ভর প্রকান্ড। আমাদের সূর্যের কথা ভাবুন। ব্ল্যাক হোলটি আমাদের সূর্যের তুলনায় ৬৫০ কোটিগুণ ভারী! এই সম্পূর্ণ ভরটি অতিমাত্রায় সংকুচিত হয়ে একটি বিন্দুর মতো অবস্থায় আছে।

    ছবিটি তোলার পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নেদারল্যান্ডের র্যাডবাউড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেইনো ফ্যালকে। এই ধারনা তাঁর মাথায় আসে ১৯৯৩ সালে যখন তিনি পিএইচডি গবেষক ছিলেন। সেই সময় ব্ল্যাক হোলের ছবি তোলা সম্ভব এমনটি কেউ ভাবেননি। তিনিই সর্বপ্রথম উপলব্ধি করেন ব্লাক হোলের নিকটবর্তী অঞ্চল হতে কিছু রেডিও বিকিরণ নির্গত হয় যা পৃথিবী হতে টেলিস্কোপের মাধ্যমে সনাক্ত করার জন্য যথেষ্ট। তাছাড়া ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে তিনি দেখতে পান তীব্র মাধ্যাকর্ষণ বলের কারণে ব্ল্যাক হোল তার প্রকৃত আকারের চেয়ে আড়াইগুণ বড় দেখায়।

    ইন্টারস্টেলার ছবিতে দেখানো ব্ল্যাক হোল

    একক কোনো টেলিস্কোপ ব্ল্যাক হোলের ছবি তোলার জন্য যথেষ্ট ছিলো না। তাই হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার অব এস্ট্রোফিজিক্সের অধ্যাপক শেফার্ড ডোয়েলম্যান এর নেতৃত্বে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা আটটি টেলিস্কোপের একটি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়। বায়ুদূষণ এড়াতে এই টেলিস্কোপগুলো ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উঁচু স্থানে, পর্বত শীর্ষে স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে হাওয়াই ও মেক্সিকোর আগ্নেয়গিরি, অ্যারিজোনার পর্বতমালা, স্পেনের সিয়েরা নেভাদা, চিলির অ্যাটাকামা মরুভূমি এবং এ্যান্টার্কটিকা। এই টেলিস্কোপ নেটওয়ার্কের নাম ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ।

    দীর্ঘ দুই বছর ধরে জুম করে লক্ষ্য স্থির করার পর ২০০ বিজ্ঞানীর একটি দল এই টেলিক্সোপের নেটওয়ার্কটিকে M87 গ্যালাক্সির কেন্দ্রে তাক করেন এবং ১০ দিন যাবৎ সংকেত সংগ্রহ করেন। এই তথ্য এতোই বিশাল যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তা পাঠানো সম্ভব হয় নি বরং তথ্যগুলোকে অনেকগুলো হার্ডডিস্কে সংগ্রহ করে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন এবং জার্মানীর বনে কেন্দ্রীয় প্রসেসিং সেন্টারে পাঠানো হয়।

    সেখানকার তথ্য বিশ্লেষণ শেষে ব্ল্যাক হলের ছবি উন্মুক্ত করা হয়। গবেষকদের এই দলটি আমাদের নিজেদের গ্যালাক্সি মিল্কি ওয়ের কেন্দ্রের সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলটিরও ছবি তোলার চেষ্টা করছে। তবে আশ্চর্যজনকভাবে এত কাছে থাকা সত্ত্বেও ব্ল্যাকহোলটি চতুর্দিকের আলোর উজ্জ্বলতা অপেক্ষাকৃত কম।

    খালেদুর রহমান সিয়াম

    জাতীয় বস্ত্র প্রকৌশল ও গবেষনা ইন্সটিটিউট (৯ম ব্যাচ)

    তথ্য সংগ্রহেঃ বিজ্ঞান পত্রিকা

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments