প্রকৃতি, প্রযুক্তি ও ধৈর্যের মিলন
সাধারণত বস্ত্র বলতে কটন, জুট, ফ্লাক্সসহ বিভিন্ন সিনথেটিক ফাইবার দিয়ে তৈরি উপাদান কে বোঝানো। যা কেবল মাত্র প্রয়োজনীয়তার কাজে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বস্ত্র যে ইতিহাস ও শিল্পের এক অপূর্ব নিদর্শন হতে পারে তা কেবল ” Golden Silk Cape” খ্যাত সোনালী রেশমের আবরণ দিয়ে তৈরি কেপ দেখলেই জানা যায়। প্রকৃতি, প্রযুক্তি ও ধৈর্যের এক চমৎকার রূপ হচ্ছে গোল্ডেন সিল্ক কেপ, এর পিছনে রয়েছে চমকপ্রদ এক গল্প।
একজন ইংরেজ সাইমন পিয়ার্স ও একজন আমেরিকান নিকোলাস গডলি দীর্ঘদিন ধরে মাদাগাস্কারে বাস করতেন। তাঁরা ১৯ শতকের সোনালী সিল্ক ফাইবারের বর্ণনা ও চিত্রকর্মের গল্প শুনে তা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ২০০৪ সাল নাগাদ সিল্ক নিয়ে পরীক্ষা শুরু করেন, যার মাধ্যমে তারা চেষ্টা করে দেখেন সিল্কের এই বিস্মৃত শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করা যায় কি-না।
এই শিল্প পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে ৮০ জন কর্মী নিয়োগ দেন। কর্মীদের কাজ ছিল মাকড়সা সংগ্রহ করা এবং মাকড়সা থেকে সিল্ক সংগ্রহ ও বয়ন করা, মাকড়সার নকশা কেপে সুন্দর ভাবে বসানো। যা পোশাকটির জটিল নকশা তৈরি করেছে।
২ জনের নেতৃত্বে ৮০ জন কর্মী পাঁচ বছরে ১.২মিলিয়ন মাকড়সা থেকে সিল্ক সংগ্রহ করে। এই বস্ত্র তৈরিতে, প্রতিদিন সকালে মাকড়সাদের বিশেষ ভাবে তৈরি সিল্ক উত্তোলনের যন্ত্রে বসানো হয়। প্রশিক্ষিত কর্মীরা একবারে ২৪ টি মাকড়সা থেকে সিল্ক সংগ্রহ করে। প্রতিদিনের কাজ শেষে মাকড়সাদের প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হতো।

সোনালী সিল্ক সংগ্রহ করা হতো একটি বিশেষ প্রজাতির মাকড়সা থেকে যাঁরা প্রাকৃতিক ভাবে সোনালী রঙের রেশম উৎপন্ন করে। প্রতিটি মাকড়সা থেকে খুবই অল্প পরিমাণ সিল্ক পাওয়া যেত, তাই লক্ষ লক্ষ মাকড়সার প্রয়োজন হয়েছে।
মাকড়সা থেকে সিল্ক সংগ্রহের এই পদ্ধতিকে বলা হয় “milking“। সিল্ক সংগ্রহ তুলনামূলক জটিল ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। প্রতিটি মাকড়সা থেকে যত্ন সহকারে ধরে বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে সিল্ক সংগ্রহ করে আবার প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এই মাকড়সার তৈরি রেশম অত্যন্ত হালকা, শক্তিশালী এবং প্রাকৃতিকভাবে সোনালী আভাযুক্ত। এইটা অত্যন্ত টেঁকসই এবং বিজ্ঞানীদের মতে এটি একই পরিমাণ ইস্পাত থেকেও মজবুত হতে পারে। এই কারণেই এই কেপটি শুধু নান্দনিক নয়, বরং একটি টেকনিক্যাল টেক্সটাইলের চমৎকার উদাহরণ।

সোনালী সিল্কের শুধু ফ্যাশন সামগ্রী নয় বরং কেপটি ইতিহাস, বিজ্ঞান ও শিল্পের সম্মিলিত এক চমৎকার প্রতিফলন। এর মধ্যে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, পরিবেশ বিজ্ঞান ও মানব মননের এক অসাধারণ সংমিশ্রণ রয়েছে।
চুড়ান্ত পোশাকটি লন্ডনের বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হয়েছিল। যেখানে হাজার হাজার দর্শনার্থীরা প্রতিদিন এই বিষ্ময়কর প্রদর্শনীর কাজের সৌন্দর্য ও পরিশ্রমের মূল্যয়ন করে চলেছেন।
এই বিষ্ময়কর বস্ত্র প্রমাণ করে যে ধৈর্য্য, প্রযুক্তি, প্রকৃতি ও ইতিহাসের সংমিশ্রণ শিল্পক্ষেত্রকে দিতে পারে নতুন এক রূপ। যা ভবিষ্যতের জন্য চমৎকার প্রদর্শনী হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠে।
Writer:
Khadija Khatun
Deputy Sub-Leader Content Writing Team
Textile Engineers Society