Tuesday, April 16, 2024
More
    HomeTextile Manufacturingটাঙ্গাইলের ঐতিহ্য "বাজিতপুর হাট"

    টাঙ্গাইলের ঐতিহ্য “বাজিতপুর হাট”

    “চমচম, টমটম ও শাড়ি, এই তিনে টাঙ্গাইলের বাড়ি। “

    শুধু কথিত নয় বাস্তবেও তাই । বহু অতীত ঐতিহ্য আর বাংলার চির পরিচিত লোক-সংস্কৃতি ইতিহাসে ক্রমধারার উত্তরাধিকারী। প্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্যে আর লোক-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যে টাঙ্গাইল জেলার অবস্থান অনেক উঁচুতে।টাঙ্গাইলের জনপদে রাজা-জমিদারদের বাড়িরও একটা ঐতিহ্য আছে তেমনি আছে একেক রাজা-জমিদার তাদের মনের মাধুরী দিয়ে তার  নির্মাণ করা  বাসস্থান । আর রয়েছে কালিয়া, মহানন্দপুর, কীর্ত্তন খোলা, প্রতিমা বংশী, দাড়িয়াপুর, শহর গোপিনাথপুর, রতনগঞ্জ, বেহুলা, লক্ষ্ণিদর, গড় গোবিন্দপুর প্রভৃতি স্থানগুলো ঐতিহ্যের শিরোনাম।তবে আজ কথা হবে বাংলাদেশের তাঁত শিল্পের ইতিহাসে অতি প্রাচীন আর টাঙ্গাইল জেলার তাঁত শিল্প সেই সর্ব বৃহৎ শিল্পের অন্যতম একটি অংশীদার “বাজীতপুর হাট” নিয়ে ।

    প্রাচীন কাল থেকে টাঙ্গাইলের দক্ষ কারিগররা তাদের বংশ পরম্পরায় তৈরি করছেন নানা জাতের কাপড়। তাঁত শিল্পের বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে টাঙ্গাইলের সফট সিল্ক ও কটন শাড়ি। এই শাড়ি বুনন ও ডিজাইন দৃষ্টি কাড়ে। টাঙ্গাইলের শাড়ির বৈশিষ্ট্য হলো- পাড় বা কিনারের কারু কাজ। রেশমী সূতী মিশ্রনের সূতো শাড়ি ও লুঙ্গি প্রস্ত্তত হয়ে থাকে। এ ছাড়াও টাঙ্গাইলের তাঁতিরা তাঁতের শাড়ির, লুঙ্গি, গামছা ও চাদর তৈরি করে থাকে।আর সারা বাংলায় সেটা পৌছে দিতে টাঙ্গাইল জেলার অন্যতম প্রধান পাইকারি হাট বাজিতপুর হাট।

    দেশ ভাগের পর হতে টাঙ্গাইল তাঁতের প্রধান হাট হচ্ছে টাঙ্গাইলের বাজিতপুর। হাটটি টাঙ্গাইল মূল শহর থেকে দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। সপ্তাহের প্রতি সোম ও শুক্রবার বাজিতপুর বটতলায় হাট বসে। ভোর রাত হতে এখানে হাট শুরু হয়, সকাল ৯-১০টা পর্যন্ত চলে হাটের ব্যতিব্যস্ততা এবং বেচাকেনা। এ হাটের বেশির ভাগ ক্রেতারাই মহাজন শ্রেণীর। মহাজনরা এই হাট থেকে পাইকারি দরে কাপড় কিনে নিয়ে সারা দেশের বিভিন্ন বড় বড় মার্কেটে, শপিং মলে, ফ্যাশন হাউস গুলোতে সাপ্লাই দেন। মহাজনদের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও আমলাদের স্ত্রী-কন্যারাও এ হাট থেকে তাদের পছন্দের শাড়ী কিনে নিয়ে যান। তবে ঢাকা ও বিভিন্ন বিভাগীয় শহর ভিত্তিক ফ্যাশন হাউস গুলোই টাঙ্গাইল শাড়ির বড় ক্রেতা ও সরবরাহকারী।

    শুক্র ও সোমবার বসে বাজিতপুর শাড়ির হাট। ভোরে শুরু হয়ে সকাল নয়টা থেকে সাড়ে নয়টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। এই হাটের মূল পণ্য তাঁতের শাড়ি। পাইকারি দরে বলে শাড়ি আসে পেটি হিসেবে। প্রতি পেটি তে থাকে ছয় থেকে দশটি শাড়ি। আর শীতে উঠে চমৎকার সব নকশা করা চাদর। 

    শাড়ির বিভিন্ন নাম ও মান, হাতের কাজ, শাড়ির জমিনের রঙভেদে দাম ও ভিন্ন রকম-সর্বনিম্ন দু’শত টাকা থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়ে থাকে। এর মধ্যে জামদানি বা সফ্ট সিল্কের দাম সবচেয়ে বেশি। জামদানি শাড়ি তৈরি করা হয় আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন ভাবে। এ শাড়ি তৈরি করার জন্য তাঁতিরা ১০০ কাউন্টের জাপানি সুতা ব্যবহার করে থাকেন। এ ছাড়া অন্যান্য শাড়ি তৈরি করতেও ১০০ কাউন্টের সূতা ব্যবহার করা হয়। মাঝে মাঝে নারায়নগঞ্জের সংযোগ শিল্পে প্রস্তুতকৃত ৮০, ৮২ ও ৮৪ কাউন্টের সূতাও ব্যবহার করে থাকে।আর এসব সুতা বেচা কেনার পাইকারি বাজার বাজিতপুর হাট। সাধারনত জোলা ( মুসলিম তাতী)  এই হাটে শাড়ি বিক্রি করতে আসেন আর সুতা কিনতে আসেন।
    বাজিতপুরের আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম বহুকাল থেকেই তাঁতপ্রধান এলাকা হিসেবে পরিচিত। অন্তত ১০০ বছর আগে গড়ে ওঠে এই হাট। বাজিতপুর হাটে মূলত টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি বিক্রি হয়। ২০ থেকে ২৫ হাজার পেটি (প্রতি পেটিতে ৫টি শাড়ি থাকে) শাড়ি এখানে বিক্রি হয়। শাড়ি তৈরির সুতা, তাঁতের বিভিন্ন উপকরণও বিক্রি হয়।

    টাঙ্গাইল শাড়ির পাইকারি বাজার মানেই বাজিতপুর হাট। তাঁতের শাড়ির রাজধানী হিসেবে পরিচিত বাজিতপুর হাট। এই হাটে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসছেন ব্যবসায়ীরা। জেলার বিভিন্ন স্থানে শাড়ি তৈরি হলেও টাঙ্গাইলের বাজিতপুর শাড়ি তৈরি ও ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

    তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। প্রথম আলো।

    Writer information:

    Md. Abir Hasan
    Department Of Textile Engineering, 
    BGMEA University Of Fashion & Technology (BUFT)

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments