আধুনিক সভ্য সমাজে নিজেকে সুন্দর ও আকর্ষণীয়ভাবে উপস্হাপন করার জন্য পোশাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে৷ তাই মানুষ নিজেদের ব্যক্তিত্বকে অন্যের সামনে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন পোশাক ব্যবহারের দিকে আগ্রহী হচ্ছে৷ বর্তমান বিশ্বে জনসংখ্যা প্রায় ৭৮৭.৫০ কোটি৷ এই বিপুল পরিমান মানুষ যদি প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন ফ্যাশনেবল পোশাকের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে তাহলে তা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরুপ হয়ে উঠবে৷ কারণ নিত্য নতুন ফ্যাশনেবল পোশাকের চাহিদা পুরন করার জন্য গড়ে উঠেছে বিশাল ফ্যাশন শিল্প৷

এই পোশাক ও ফ্যাশন শিল্পের দরুন গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরন হচ্ছে ভয়াবহ মাত্রায়৷ পরিবেশকে পোশাক ও ফ্যাশন শিল্পের ভয়াবহ ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষার জন্য সাসটেইনেবল ফ্যাশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷”সাসটেইনেবল ফ্যাশন” হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা কিছু শর্তাবলী মেনে পরিবেশের উপর ক্ষতিকারক প্রভাবক কমিয়ে সমাজের উপকার এবং শিল্পের বিস্তার করে থাকে৷ সাসটেইনেবল ফ্যাশন হলো ফ্যাশন শিল্পকে টেকসই করার আন্দোলন৷সাসটেইনেবল ফ্যাশনের শর্তাবলীগুলো হলো:-
* পরিবেশবান্ধব
* জৈব চাষ
* অপচয় রোধ এবং তা পুনর্ব্যবহার
* নৈতিকভাবে সঠিক এবং গ্রহনযোগ্যসাসটেইনেবল ফ্যাশন বর্তমান পৃথিবীকে আমাদের উপযোগী রাখার জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ তা নিচে কয়েকটি বিষয়ের মাধ্যমের তুলে ধরা হলো:-বর্তমান সময়ে সবকিছুই আমাদের হাতের নাগালে তারপর ও আমরা কোনো কিছু না ভেবেই অযথা অপ্রয়োজনীয় পোশাক ক্রয় করে থাকি৷

সাসটেইনেবল ফ্যাশনের আসল লক্ষ্যই হলো পোশাকের দীর্ঘ মেয়াদি ব্যবহার এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন৷ উদাহরনস্বরুপ, আপনি যদি নয় মাস নতুন জামা কাপড় না কিনে, সংগ্রহের পোশাকই ব্যবহার করেন, তাহলে আপনি কার্বনের ব্যবহার, শক্তির অপচয় এবং বর্জের পরিমান ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনতে পারবেন৷মানুষের নিত্যনতুন ফ্যাশনেবল পোশাকের চাহিদা মেটানোর জন্য গঠিত বিশাল ফ্যাশন বাণিজ্যের জন্য শিশুশ্রম এবং পশুর ব্যবহার বাড়ছে৷

খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে, প্রতি বছর ৩.৮ বিলিয়নের ও বেশি গরু এবং অন্যান্য গবাদি পশুর চামড়া পোশাকশিল্পে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ সাসটেইনেবল ফ্যাশনের ফলে শিশুশ্রম এবং পশুর ব্যবহার হ্রাস পেয়ে থাকে৷ফ্যাশন শিল্পে যে রাসায়নিক রং ব্যবহার করা হয় তা পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর৷ যেমন ডেনিমে সবচেয়ে বেশী ব্যবহার হয় কেমিক্যাল ইন্ডিগো৷ এগুলো বিভিন্ন রকমের ক্ষতিকারক রাসায়নিক তেল এবং ইদুরের বিষ থেকে তৈরি৷ ডেনিমে কেমিক্যাল শুধু রঙের জন্য নয়, কাপড় নরম করার কাজেও লাগে৷ এটি যেখানে উৎপাদন করা হয়, বিশেষকরে ধোয়া হয়, তারআশপাশের জমির উর্বরতা কমে যায়৷পাশাপাশি এর তরল বর্জ্য জলাশয় ও পানির অন্যান্য উংসকে দূষিত করে৷
অপরদিকে সাসটেইনেবল ফ্যাশন শিল্পে প্রাকৃতিক রং ব্যবহারকে উংসাহিত করা হচ্ছে৷ শুধু তাই নয়, অনেক টেকসই পোশাকের ব্র্যান্ড এখন ফেব্রিকের বর্জ্য রিসাইকেল করে ব্যবহার করছে৷জাতিসংঘের এক হিসাবে দেখা যায়, একজোড়া জিন্সের প্যান্ট তৈরিতে এক কেজি তুলা লাগে৷ আর তুলা যেহেতু শুষ্ক আবহাওয়ায় উৎপন্ন হয়, তাই এক কেজি তুলা উৎপাদনে ৭০০ হাজার ৫০০ থেকে ১০ হাজার লিটার পানির দরকার হয়৷

একজন পূর্নবয়স্ক মানুষের ১০ বছরে এই পরিমান পানির প্রয়োজন হয়৷ এর মানে একটা জিন্স তৈরিতে নষ্ট হয় একজন মানুষের ১০ বছরের খাবার পানি৷ এছাড়া ৬৯ মাইল গাড়ি চালানোর পর যে পরিমান কার্বন নির্গত হয় একই পরিমান কার্বন বের হয় একজোড়া জিন্স উৎপাদনে৷ তবে , কয়েক বছর ধরে পরিবেশ রক্ষায় সাসটেইনেবল ফ্যাশনের চর্চা শুরু হওয়ার সুবাদে ফ্যাশন বিশ্বে এনেছে আমুল পরিবর্তন৷

শামীমা ইয়াছরাত
প্রভাষক,
বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়নশিল্প,
বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here