ACETATE FIBER

0
926

আধুনিকতার আলোতে আলোকিত হয়নি এমন ক্ষেত্র খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ব্যবহার্য্য পোশাক থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রের গগনে আধুনিকতা নামক তারাটি জল জল করে আলো জালিয়ে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে মানব মনে। সেই সাথে নতুন নতুন উদ্ভাবন আধুনিকতা নামক প্রান্তরে এনে দিচ্ছে নবযাত্রার নিত্য নতুন ঠিকানা।পোশাকের রুচি সে যার যাই হোকনা কেনো,কিন্তু সকলের কাছে নিজের ব্যবহৃত পোশাক যে হতে হবে চমকপ্রদ এতে কমতি রাখতে চাননা কেউই।এই চাহিদা কে গুরুত্ব দিয়ে উদ্ভাবিত হয়েছে নতুন নতুন সব তন্তু।যে মানব সমাজে এসিড কথাটি শুনলেই মনের মাঝে নেমে আসে একরাশ আতংক,সে এসিডকেই পুঁজি করে একদল উদ্ভাবনি অভিযাত্রী তৈরী করছে “এসিটেড ফাইবার”।জি, নব উদ্ভাবিত এসিটেড ফাইবার কে নিয়েই প্রাথমিক ভাবে সাজানো আজকের লেখাটুকু৷

অ্যাসিটেট ফাইবার সম্পর্কে জানতে হলে শুরুতেই জানতে হবে সিন্থেটিক ফাইবার সম্পর্কে।সিন্থেটিক ফাইবার হলো এমন এক ধরনের মানব সৃষ্ট ফাইবার যেখানে অসংখ্য মনোমার থেকে পলিমার চেইন গঠনের এর মাধ্যমে ফাইবার প্রস্তুত করা হয় ।আর এসিটেড ফাইবার হলো সিন্থেটিক ফাইবার গুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি সিন্থেটিক ফাইবার।যেহেতু এসিটেড ফাইবার একটি ম্যান মেড ফাইবার সেই সাথে এসিড এর সাথে সংশ্লিষ্ট সুতরাং কিছুটা ধারনা করা যাচ্ছে এটির উপাদান থেকে শুরু করে প্রস্তুত প্রণালী কিছুটা জটিল প্রকৃতির।তাহলে এর গাঠনিক প্রাণালী সম্পর্কে কিছুটা জানি এবার। এসিটেড ফাইবার গঠনের প্রধান পদার্থ হল সেলুলোজ অ্যাসিটেট।যার মধ্যে কমপক্ষে ৯১% হাইড্রোক্সেল গ্রুপ অ্যাসিটাইলেট যুক্ত হয়ে থাকে।

এসিটেড ফাইবারকে আবার ট্রাইসেটেট বা ট্রাইসেটেট সেলুলোজ ও বলা হয়। সেকেন্ডারি অ্যাসিটেটে প্রায় ৭৬ শতাংশ এসিটাইলেটেড সেলুলোজ গ্রুপ রয়েছে।আবার এটিও জানা দরকার যে, ডায়াসেটেট ফাইবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাসিটেট বলা হয় এবং ট্রায়াসেটেট সেলুলোজকে ট্রাইসেটেট বলা হয়।প্রচলিত ভাবে মাধ্যমিক অ্যাসিটেট ফাইবার অ্যাসিটিক অ্যাসিডের সাথে উড পাল্প এবং সেলুলোজ বা সুতির লিন্টের ট্রিটমেন্টের পরে উৎপাদন করা যায়।এদিকে আবার অ্যাসিড কে নির্দিষ্ট এনজাইমের উপস্থিতিতে এসিটিক অ্যানহাইড্রাইডের সাথে বিক্রিয়া করানো হলে সেকেন্ডারি অ্যাসিটেট ট্রায়াসেটেট এ রূপান্তরিত হয়।অ্যাসিটেট ফাইবার প্রধানত প্রচলিত অ্যাসিটেট সিল্ক ফাইবার এর জৈব দ্রাবকে সেলুলোজ অ্যাসিটেটের দ্রবণ থেকে উদ্ভূত হয়। উক্ত জৈব দ্রাবক সাধারণত মিথাইলিন ক্লোরাইড এবং এসিটেট বা এসিটোন এর মিশ্রণ থেকে প্রস্তুত করা হয়ে থাকে।

এবার জানা যাক অ্যাসিটেট ফাইবার এর কিছু সাধারন বৈশিষ্ট্যর একাংশ। এসিটেড ফাইবার সচরাচর নরম সেই সাথে আকর্ষণীয় হয়ে থাকে। এসিটেড হওয়ার দরুন এ ফাইবার গুলিকে কেবল বিশেষ ধরণের রঞ্জক দিয়ে রঞ্জিত করা হয়, যা কিনা অন্যান্য ফাইবারের ক্ষেত্রে কম পরিলক্ষিত হয়। আর্দ্র পরীক্ষা করলে জানা যায় অ্যাসিটেট ফাইবারগুলির আর্দ্রতা ৪৫ শতাংশ এবং ট্রাইসেটেট ফাইবারগুলির আর্দ্রতা ২০ শতাংশ হয়ে থাকে।অ্যাসিটেট ফাইবারগুলির তাপ ধারন ক্ষমতা তুলনামূলক ভাবে কম হয়ে থাকে। যার ফলসরূপ অ্যাসিটেট ফাইবার দিয়ে প্রস্তুতকৃত পোশাক কিছুটা স্যাঁতসেঁতে মাধ্যমে রেখে আয়রন করতে হয়।এসিডিক মাধ্যমে অ্যাসিটেট ফাইবারগুলি প্রস্তুত হওয়ার কারণে এই ফাইবার থেকে প্রস্তুতকৃত পোশাকের বড় অসুবিধা এটিতে বিদ্যুৎ প্রবাহের খানিক প্রবণতা রয়েছে।তবে বর্তমানে এ বিষয়টিকে প্রাধন্য দিয়ে সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে ফাইবারটি প্রস্তুত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন গবেষকরা।

এবার ফাইবার থেকে প্রস্তুতকৃত সামগ্রী বা প্রায়োগিক দিক সম্পর্কে জানা যাক। অ্যাসিটেট ফাইবার থেকে সাধারণত পোশাক, পোশাকের আস্তরণ,গৃহসজ্জার নানা রকম চোখ ধাঁধানো সব সামগ্রী, মাদুর, ছাতা,নামাজ পড়ার জায়নামাজ সহ সাধারণ দৈনন্দিন জীবনে নানা ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে আসিটেড ফাইবার।এছাড়াও স্ট্যাপল অ্যাসিটেট ফাইবারগুলো থেকে সূক্ষ্ম কাপড় এবং বিভিন্ন ধরণের নিটওয়্যার তৈরিতে উলের আংশিক বিকল্প হিসাবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।দিন দিন এসিটেড ফাইবারের ব্যবহার বেড়েই চলেছে।পৃথিবীর একদিকে চলছে প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের বিধ্বংসী খেলা, আবার অন্য দিকে এই বিধ্বংসী খেলার প্রভাব যাতে পোশাক শিপ্লে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য গবেষণাগারে চলছে নিত্যনতুন সব ফাইবার উদ্ভাবনের লুকায়িত প্রতিযোগিতা।উদ্ভাবনী মানুষ গুলোর যুগান্তকারী উদ্ভাবনে মানবসভ্যতা পাবে নতুন মাত্রা সাথে পোশাক শিল্প পাবে নবরূপে এগিয়ে যাবার চাবিকাঠি, এই প্রত্যাশাই সকলের।

তথ্যসূত্র : britannica.com

লেখক:

মুনতাসির রহমান
Department Of Textile Engineering
Batch:201
BGMEA UNIVERSITY OF FASHION AND TECHNOLOGY

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here