Super Car Industry তে কার্বন ফাইবারের ব্যবহার (পর্ব-৪)

0
331

“সুপার কার ইন্ডাস্ট্রিতে কার্বন ফাইবার” এর প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্বে যথাক্রমে আমরা জানতে পেরেছিলাম যে, পৃথিবীর কোন কোন কোম্পানি গুলো কার্বন ফাইবার সাপ্লাই দিয়ে থাকে, কোন কোন পদ্ধতি অনুসরণ করে কার্বন ফাইবার ব্যবহারের মাধ্যমে সুপার কারের আউটার বডি প্যানেল তৈরি করা যায় এবং পৃথিবীর কোন কোন সুপারকার কোম্পানিগুলো তাদের সুপারকার গুলোর বডি প্যানেল তৈরিতে কার্বন ফাইবার ব্যবহার করে থাকে। আজকে আমাদের “সুপার কার ইন্ডাস্ট্রিতে কার্বন ফাইবার” এই সিরিজের চতুর্থ এবং সর্বশেষ পর্বে কার্বন ফাইবারের মার্কেট ভ্যালু, ট্রেন্ড ইত্যাদি সম্পর্কে বিশদ আকারে জানতে পারবো।

পারফর্মেন্স এবং দীর্ঘ স্থায়িত্ব এর কথা চিন্তা করলে, বর্তমানকালে সুপার কার ইন্ডাস্ট্রির ডিমান্ড অনুযায়ী কার্বন ফাইবার তার নিজস্ব স্বকীয়তা সবার নিকট উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। বিগত বছর গুলোর দিকে তাকালে দেখতে পাবো যে, কার ইন্ডাস্ট্রি গুলোতে ফুয়েল এফিশিয়েন্সি বৃদ্ধি এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমন কমাতে কার ম্যানুফেকচারার কোম্পানিগুলো কারের হালকা ওজনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। আর এই কারনেই, পূর্ববর্তী মেটাল শিটের বদলে কোম্পানিগুলো এখন হালকা ওজনের কার্বন ফাইবারের শিট দিয়ে কারের বিভিন্ন পার্টস এবং বডি প্যানেল তৈরি করছে।

সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্কের বিখ্যাত অটোমোবাইল ম্যানুফেকচারার (যারা যানবাহনের বিভিন্ন অংশ তৈরি করে থাকে), Kordsa, কারের বিভিন্ন পার্টস তৈরির ক্ষেত্রে, কার্বন ফাইবার প্রসেসিং এ তাঁদের CM11 সিস্টেম ডেভেলপ করেছে। এই সিস্টেমের দৌলতে, প্রতিটি কার্বন ফাইবার শিট প্রসেসিং এ মাত্র ৩ থেকে ৫ মিনিট সময় ব্যয় হয়। আর কারের আউটার বডি প্যানেলেও পুরো A+ ক্যাটাগরির সার্ফেস ফিনিশিং পাওয়া যায়। যা দিন শেষে কারের ভ্যালু অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত কিছু রিপোর্ট অনুযায়ী ধারনা করা হচ্ছে যে, অটোমোবাইল ম্যানুফেকচারিং এ কার্বন ফাইবারের ব্যবহার ২০২৫ সাল নাগাদ দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পাবে। আর এতে করে, সারা বিশ্ব জুড়ে, কার ম্যানুফেকচারিং হারে ১১০ মিলিয়ন এ উন্নীত হবে। যা ২০১৫ সাল নাগাদ ৮৮.৭ মিলিয়ন এ ছিল। আর এর বেশির ভাগ অংশই তৈরি হবে চীন থেকে।

Figure: অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে ম্যানুফেকচারার কোম্পানিগুলো যে হারে কার্বন ফাইবার ব্যবহার করছে, তার ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন

JEC Group এর রিসার্চ অনুযায়ী, মেটাল ইন্ডাস্ট্রিতে শুধু কার্বন ফাইবারের মত হেভি ডিউটি ফাইবার শিটের মার্কেট ভ্যালু ৩৫ বিলিয়ন ডলারেরও অনেক অধিক। আর একই সাথে অটোমোবাইল কার ইন্ডাস্ট্রিতে এই কার্বন ফাইবারের ভ্যালু ৬ বিলিয়ন ডলারের মত। তবে, এই অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি এর ক্ষেত্রে কার্বন ফাইবার গুলো শুধু মাত্র রেসিং কার এবং স্পোর্টস কার গুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। সাধারন ভোক্তা বা এই ধরনের ক্যাটাগরির কার গুলোতে এই কার্বন ফাইবার ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন অটোমোবাইল কোম্পানি এবং কার্বন ফাইবার সাপ্লায়াররা একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। বলে রাখা ভালো যে, একই সাথে এই ইন্ডাস্ট্রিতে সাপ্লাই ভ্যালু চেইনও কিন্তু দিনকে দিন অনেক দ্রুত গতিতে ডেভেলপ করছে। আর এই জন্যই আমরা যত সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, কারের আউটার বডি প্যানেল তৈরিতে ততোই কার্বন ফাইবার প্রসেসিং এর নতুনত্ব এবং ভিন্নতা দেখতে পাচ্ছি। আমরা আমাদের পূর্ববর্তী ব্লগ গুলোতে জেনেছি যে, কারের আউটার বডি প্যানেল তৈরির জন্য কার্বন ফাইবারের শিটকে রেজিন কোটিং করতে হয়। আর এই রেজিন কোটিং যাতে আরও ইন্ডাস্ট্রি সুলভ হয় তার জন্য বিশ্ব খ্য্যাত কার ম্যানুফেকচারার কোম্পানি BMW এবং উড়োজাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান Boeing একসাথে কাজ করছে।

Figure: স্পোর্টস কার ম্যানুফেকচারার কোম্পানিগুলোও আউটার বডি প্যানেল তৈরিতে কার্বন ফাইবার ব্যবহারে পিছিয়ে নেই।

এখন একটা কথা তো আমরা সবাই জানি যে, জ্বালানি গুলো কিন্তু মজুদকৃত। এক সময় এই জ্বালানি কিন্তু আর পাওয়া যাবে না। আর এই ক্ষেত্রে যদি আমাদের ব্যবহারকৃত কার গুলোর ফুয়েল ইকোনমি বা এফিশিয়েন্সি বৃদ্ধি করা যায়, তাহলে তা আমাদের জন্যই ভালো। আর এই ক্ষেত্রে কারের ওজন যত কমানো যায়, ঐ কারের ফুয়েল ইকোনমি ততোই ভাল হিসেবে বিবেচিত হয় যা আমরা আগেই বলেছি। গড়ে হিসেব করলে, কারের ১০ শতাংশ এর মতও যদি ওজন কমানো যায় তাহলে প্রায় ৬ থেকে ৮ শতাংশের মত বেশি ফুয়েল ইকোনমি পাওয়া যায়। আর এই ক্ষেত্রেই, কার্বন ফাইবারের কম্পোজিট শিট আমাদেরকে কম ওজনের কার তৈরিতে সাহায্য করতে পারে। আর কার্বন ফাইবার নিয়ে বর্তমান সময়ে ব্যাপক আকারে রিসার্চ হওয়ার কারনে এক রকম ধরে নেওয়া যায় যে, আগামি ১০-১২ বছরের মধ্যে আমরা এই ফাইবারের নতুন কোনো ফিউশন দেখতে পাবো। তখন এই কারের প্রোডাকশন খরচ কিন্তু অনেক কমে আসবেই। Tesla এর নাম শুনে নি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া টাই অনেক কঠিন। তাঁদের ইলেক্ট্রিক কারের জন্য তারা সারা বিশ্ব জুড়ে আজ সমাদৃত। এই ইলেক্ট্রিক কার গুলোতেও কিন্তু ব্যাপক আকারে কার্বন ফাইবারের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। আর উপরোক্ত আলোচনা থেকেই এই বিষয় সু-স্পষ্ট যে, ভারী লোহা শিল্পে কার্বন ফাইবারের বিপ্লব ইতিমধ্যে শুরু হয়েই গিয়েছে।

Writer information:

Name: Badhon Saha
Institute: Primeasia University
Batch: 181
Technical News Coordinator (T.E.S.)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here