Thursday, March 28, 2024
More
    HomeTextile Manufacturingটেক্সটাইল রিসাইক্লিং ও বাংলাদেশ

    টেক্সটাইল রিসাইক্লিং ও বাংলাদেশ

    টেক্সটাইল রিসাইক্লিং হলো ব্যবহৃত পোশাক বা কাটিং এর সময় অতিরিক্ত ফাইবার, ইয়ার্ন, ফ্যাব্রিক ইত্যাদি থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ব্যবহারযোগ্য নতুন উপাদান তৈরি করা। বর্তমান বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন সংস্কৃতিতে টেক্সটাইল রিসাইক্লিং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।বিশ্বায়নের ফলে ফাস্ট ফ্যাশন বা দ্রুত পরিবর্তনশীল ফ্যাশনে গ্রাহক রা এখন ফ্যাশন পণ্য সল্প সময় ব্যবহার করে।যার ফলে টেক্সটাইল বর্জ্যের পরিমাণ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, এই অবস্থা মোকাবেলায় টেক্সটাইল পুনর্ব্যবহারের কৌশলগুলি তৈরি করা হয়েছে এবং এখনও নতুন সমাধান নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে।

    টেক্সটাইল রিসাইক্লিং প্রধানত দুই ধরনের,

    ১) Pre-consumer: Consumer বা গ্রাহকের ব্যাবহার ছাড়া যেসব টেক্সটাইল রিসাইক্লিং হয়ে থাকে সেগুলো এই ধরনের মধ্যে পরে।যেমন প্রোডাকশনের সময় অতিরিক্ত কাচামাল,ওয়েস্টেজ বা উপজাত কে পুনর্ব্যাবহারযোগ্য করে তোলা।

    ২) Post-Consumer: গ্রাহকের ব্যবহৃত পন্য গুলো পুনর্ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা।ব্যাবহৃত পন্য গুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেয়া হয়, বা অনেকক্ষেত্রে সেকেন্ড হ্যান্ডে বিক্রি করা হয়।

    টেক্সটাইল রিসাইক্লিং প্রক্রিয়া বিভিন্ন ভাবে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে।যেমন:

    সেকেন্ড-হ্যান্ড পোশাক বাজারঃ

    গ্রাহকের ব্যবহৃত পোশাক সেকেন্ড হ্যান্ডে বিক্রিয় করার মাধ্যমে এই বাজার গঠিত।বর্তমানে এই বাজার বিশ্ববাজারে অন্যতম বর্ধনশীল।শুধুমাত্র ২০০৭-২০১২ এর মধ্যে সেকেন্ড হ্যান্ড পোশক রপ্তানি দুইগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।যুক্তরাষ্ট্র এই বাজারের ৪৫% পোশাক রপ্তানী করে।আফ্রিকাতে প্রতি বছর ৬১.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাক আমদানি করা হয়।

    নতুন প্রোডাক্ট উৎপাদনঃ

    যেসকল টেক্সটাইল আইটেম পুনঃবিক্রয় সম্ভব নয় সেসকল আইটেম থেকে নতুন পণ্য উৎপাদন করে টেক্সটাইল রিসাইক্লিং এর ধারা অব্যাহত রাখা হয়।বিভিন্ন ভাবে নতুন প্রোডাক্ট বা পণ্য উৎপাদন হয়।Shoddy, Mungo হলো এই প্রক্রিয়ার দুইটা পুরাতন উদাহরণ। Shoddy হলো এক ধরনের পুরাতন টেক্সটাইল প্রোডাক্ট থেকে পুনঃউৎপাদিত নতুন সুতা বা ইয়ার্ন। উত্তর ভারতের পানিপথ Shoddy ইয়ার্ন এর বৃহত্তম প্রস্তুতকারক,সেখানে প্রায় ৩০০ মিল ফ্যাক্টরি রয়েছে Shoddy ইয়ার্ন এর।
    যুক্তরাষ্ট্র,ইটালি,সুইডেন…ইত্যাদি দেশে এসব পুনঃউৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করা হয়।এছাড়াও গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং এর সময় অতিরক্তি ফ্যাব্রিক থেকে নতুন গার্মেন্টস প্রোডাক্ট ও বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত ও রপ্তানি হচ্ছে।

    Wiping and Polishing:

    Damaged বা ক্ষয়গ্রস্থ প্রোডাক্ট কে এই প্রক্রিয়ায় পুনঃব্যবহারযোগ্য করে বিক্রয় করা হয়। এছাড়াও টেক্সটাইল বর্জ্য বা ওয়েস্টেজ থেকে জ্বালানী উৎপাদন ও করা হয়ে থাকে। Patagonia, Everlane, H&M, Lindex, Pure Waste ইত্যাদি বৃহৎ ফ্যাশন ব্র‍্যান্ডে বর্তমানে রিসাইক্লিং টেক্সটাইল প্রোডাক্ট এর চাহিদা ব্যাপক।

    বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টেক্সটাইল রিসাইক্লিং একটি সম্ভবনাময় শিল্প। Textile Today ম্যাগাজিন এর তথ্যমতে বাংলাদেশ বর্তমানে টেক্সাইল রিসাইক্লিং এর মাধ্যমে প্রায় ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে।যদি দেশের সব টেক্সটাইল ফ্যাক্টরির ওয়েস্টেজ বা উপজাত কে টেক্সটাইল রিসাইক্লিং এ যথাযথ কাজে লাগানো যায় তাহলে এই শীল্প থেকে প্রতিবছর প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করা সম্ভব, যা বর্তমান আয় এর প্রায় ৮০ গুণ।

    বাংলাদেশে সৈয়দপুর, নীলফামারি, টঙ্গি,.. বিভিন্ন জায়গায় গার্মেন্টস ওয়েস্টেজ বা ঝুট কাপড় থেকে বিভিন্ন ধরনের বেবি ওয়ার, মুজা, টিশার্ট…অন্যান্য বিভিন্ন পোশাক সামগ্রি উৎপাদন করে বিক্রি করা হয়।কিন্তু সেসব এলাকায় ঝুট ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ভ্যাট-ট্যাক্স লাঘব,ফায়ার সার্ভিস,ডেলিভারি… অন্যান্য সেবামূলক সহযোগিতা গুলো তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে পাচ্ছেন না যেগুলো একটি শীল্প এলাকায় থাকে।

    এছাড়াও দেশে এই ঝুট বা গার্মেন্টস ওয়েস্টেজ থেকে বিভিন্ন ধরনের টাই, ক্যাপ, হ্যাট, মাস্ক, শার্ট/টি-শার্ট/প্যান্ট ইত্যাদির বিশেষ বিশেষ অংশ, স্নিকার্স, কনভার্স- ইত্যাদির বাণিজ্যিক উৎপাদন সম্ভব। বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের শুধুমাত্র কটন ও অন্যান্য টেক্সটাইল ফাইবার আমদানি করে থাকে। সে জায়গায় টেক্সটাইল রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ায় গার্মেন্টস ওয়েস্টেজ ও পুরাতন প্রোডাক্ট থেকে নতুন ফাইবার উৎপাদনের মাধ্যমে এই চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণ করা সম্ভব।

    অথচ দেশের ৪০% গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি গুলোতে গার্মেন্টস ওয়েস্টেজ বা ঝুট কাপড় সংগ্রহের কোনো ব্যাবস্থা নেই।বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই ঝুট কাপড়ের অবস্থান হয় ময়লার ডাস্টবিন। দেশে বর্তমানে টেক্সটাইল রিসাইক্লিং এর চাহিদা ও সম্ভবনা কে কাজে লাগিয়ে ঝুট কাপড় ও পুরাতন কাপড় থেকে নতুন ফাইবার ও গার্মেন্টস প্রোডাক্ট উৎপাদন,সেকেন্ড হ্যান্ড টেক্সটাইল মার্কেট এর ধারণা বিস্তৃতিকরণ করলে,সকল টেক্সটাইল ফ্যাক্টরিতে ঝুট কাপড় ও টেক্সটাইল বর্জ্য সংগ্রহের ব্যাবস্থা করলে কয়েকবছরের মধ্যেই বাংলাদেশে টেক্সটাইল রিসাইক্লিং থেকে ব্যাপকহারে আয় করা সম্ভব।

    Writer information:
    Abdullah Mehedi Dipto
    Primeasia University
    Batch-181

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments