Thursday, April 25, 2024
More
    HomeTraditional Textileজুম শাড়ি (পাহাড়িদের তাঁতে বোনা ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন)

    জুম শাড়ি (পাহাড়িদের তাঁতে বোনা ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন)

    আবহমান বাংলার ইতিহাসে শাড়ির স্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চল তার সতন্ত্র ইতিহাস ও ঐতিহ্যে পরিপূর্ণ। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী এসব অঞ্চলে লুকিয়ে রয়েছে জনপ্রিয় সব শাড়ির ইতিহাস। জনপ্রিয়তায় মুখরিত এমনই একটি ঐতিহ্যবাহী শাড়ি হচ্ছে সিলেটের জুম শাড়ি।

    জুম শাড়িঃ
    পাহাড়িদের তাঁতে বোনা সিলেটের ঐতিহ্যবাহী একটি শাড়ি হচ্ছে জুম শাড়ি। এটি মূলত পাহাড়িদের শাড়ি। পাহাড়ে বাস করা আধিবাসী মেয়েদের ওড়নার মতো একটা পোশাককে মোডিফাইড করে এই শাড়িটি বানানো।

    উৎপাদনঃ
    জুম শাড়ির উৎপাদন প্রথমে শ্রীমঙ্গলের তাঁতীরা শুরু করলেও এখন বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও টাঙ্গাইলের তাঁতীরাও জুম শাড়ি তৈরি করে থাকেন। ত্রিপুরাতে চাকমা জাতির অন্তর্গত যারা, তারাও তৈরি করেন জুম শাড়ি।

    গঠনঃ
    জুম শাড়ির সম্পূর্ণ জমিন হয় এক রঙের। আঁচলে সোনালি জরির স্কাইপ ও টারসেল করা থাকে। পাড়টা জমিনের তুলনায় সফট এবং ৪ ইঞ্চির মতো মোটা হয়ে থাকে। এই শাড়ির গঠন কিছুটা জাল অর্থাৎ নেট জাতীয় বলে অনেকে একে মোটা কোটাও বলেন।

    জুম শাড়িগুলো হ্যান্ডলুম হলেও এর সুতো দেশীয় নয়। মনিপুরী তাঁতীরা জুম শাড়ি বুনতে এক ধরনের সুতো ব্যবহার করে যা কোরিয়া থেকে আমদানি করা হয়। আমদানিকৃত এই সুতোগুলোতে মূলত কৃত্রিম সিল্ক বা রেয়ন (যাকে অনেকে ভিসকোস সুতোও বলে) এবং লিলেন সুতোর মিশ্রণ থাকে। এ সুতোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে হাত দিয়ে ঘষলে হাতে ঠান্ডা অনুভূত হয়।

    জুম শাড়ির বুননটা হয় ফাঁকা ফাঁকা। তবে অরিজিনাল সুতোর শাড়িগুলো ট্রান্সপারেন্ট বা ফ্যালফ্যালে হবে না।

    বিশেষত্বঃ
    জুম শাড়ির মূল বিশেষত্ব হলো এগুলো খুবই নরম তন্তুর এবং হালকা হয়ে থাকে। দেখতে অনেকটা সিল্ক শাড়ির মতোন হলেও আরাম পাওয়া যায় লিলেনের মতোই। হালকা-গাঢ় টেকসই রঙের এই শাড়িগুলো যেকোনো ঋতুর জন্যই মানানসই ও আরামদায়ক হওয়ায়, সব বয়সের নারীরাই এটি স্বাচ্ছন্দ্যে পরতে পারেন। পুরো বাংলাদেশজুড়ে কদর পাওয়া এই শাড়িগুলো যেমন চট করে পরে নেওয়া যায় তেমনি খুব সহজেই সামলানোও যায়।

    যেভাবে যত্ন নিতে হয়ঃ
    বর্তমানে তাঁতে বোনা জুম শাড়িগুলো বেশ জনপ্রিয়। যেকোনো শাড়িই (সুতি কাপড় ব্যতীত) যত কম ধোয়া যায় তত ভালো। জুম শাড়িগুলো অনেকদিন সুন্দর এবং ভালো রাখতে হলে, এই শাড়ির যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অনুসরণ করা প্রয়োজন-

    ০১) জুম শাড়ি ধোয়ার ক্ষেত্রে ড্রাই ওয়াশ সবচেয়ে ভালো। এতে শাড়ির তন্তু ভালো থাকে।

    ০২) ঘরে পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে অধিক ক্ষারযুক্ত ডিটারজেন্টের পরিবর্তে শ্যাম্পু ব্যবহার করা ভালো।

    ০৩) জুম শাড়ি ধোয়ার ক্ষেত্রে গরম পানি ব্যবহার করা যাবে না। গরম পানিতে কাপড়ের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়।

    ০৪) জুম শাড়ি আয়রণ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে হিট যেন একদম লো থাকে। যেমন; ১ পয়েন্ট বা সিল্ক ফেব্রিক আয়রণের নির্দিষ্ট হিটে শাড়ি আয়রণ করতে হবে।

    ০৫) শাড়ি হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখা ভালো।

    শেষ কথাঃ
    কালের বিবর্তনে বিভিন্ন ফ্যাশন ধারার বিলুপ্তি ঘটলেও, রঙে ঢঙে বিভিন্ন সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে নিজের অবস্থানকে টিকিয়ে রেখেছে শাড়ি। তাই শুধুমাত্র ঐতিহ্যের কারণে হলেও পাহাড়িদের তাঁতে বোনা- ঐতিহ্যবাহী এই জুৃম শাড়ি টিকিয়ে রাখা আমাদের দায়িত্ব।

    তথ্যসূত্রঃ
    Eproyojonbd.com
    Odhikar.news
    Jagonews24.com
    Songbadprokash.com

    লেখিকাঃ
    আছিয়া আক্তার
    ২য় বর্ষ, ব্যাচ-২৪
    বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়নশিল্প বিভাগ
    বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ।

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments