Thursday, April 25, 2024
More
    HomeSustainabilityপ্যাচওয়ার্ক (বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন বর্জ্য নিরসনে সাসটেইনেবল ফ্যাশন)

    প্যাচওয়ার্ক (বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন বর্জ্য নিরসনে সাসটেইনেবল ফ্যাশন)

    স্টাইল এবং ফ্যাশন সদা পরিবর্তনশীল। পরিবর্তনশীল সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফ্যাশনে প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে নতুনত্ব। সময়ের পালাক্রমে একেক সময়ে একেক ট্রেন্ড চলাই ফ্যাশনের ধর্ম। কথায় বলে যত ভিন্নতা তত বেশি নান্দনিকতা। এরই ধারাবাহিকতায় হালের ফ্যাশনে পোশাক পুনর্ব্যবহারের মাধ্যম হিসেবে যোগ হয়েছে প্যাচওয়ার্ক।

    প্যাচওয়ার্কঃ

    টুকরো টুকরো বিভিন্ন আকৃতি, রং, প্যাটার্ন ও টেক্সচারের কাপড় পাশাপাশি জুড়ে দিয়ে নতুন একটি বড় কাপড় বানিয়ে নেওয়ার পোশাকি নামই প্যাচওয়ার্ক।

    পুরোনো বাতিল কাপড়ের অংশবিশেষ কিংবা কোনো নতুন কাপড়ের বাড়তি টুকরো কোনোটাই ফেলনা নয় এখানে। জোড়াতালি কাজের কদর কম হলেও ফ্যাশনে ব্যবহৃত এই জোড়াতালির বেশ নামডাক এখন। আর জোড়াতালি প্রক্রিয়ায় নতুন কিছু বানিয়ে নেওয়ার কায়দা, চলমান ফ্যাশন দুনিয়ায় সামনের তালিকায় এখন, যাকে আধুনিক পরিভাষায় প্যাচওয়ার্ক বলা হয়।

    ইতিহাসঃ

    ইতিহাস বলে প্রায় ৫০০০ বছর আগে নাকি এ ধরনের কাজ হতো কাপড়ে। মধ্যযুগে যোদ্ধাদের বর্মে উষ্ণতা ও সুর পাওয়ার জন্য দেওয়া হতো জোড়াতালির কাপড়। বিশ শতকের চরম অর্থনৈতিক মন্দার সময় ব্যবহৃত পুরোনো কাপড় জোড়া দিয়ে, প্যাচওয়ার্কের মাধ্যমে আরামদায়ক উষ্ণতার কুইল্ট তৈরী হতো আমেরিকায়।

    ১৯৬০ সাল নাগাদ হাই এন্ড ফ্যাশনে জায়গা করে নিয়েছিলো এই আর্টফর্ম। বলা যায় হিপি আন্দোলন প্যাচওয়ার্ককে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়। আশির দশক থেকে নামী ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো এই আর্টফর্ম অর্থাৎ প্যাচওয়ার্ক ব্যবহার করতে শুরু করে।

    বর্তমানে এশিয়া মহাদেশের কিছু দেশে প্যাচওয়ার্ক বেশ জনপ্রিয়। এর মধ্যে ভারতের কর্ণাটক এবং পাকিস্তানের কিছু জায়গায় এর প্রচলন অনেক। পাকিস্তানিরা প্যাচওয়ার্ককে রাল্লি বলে থাকে। এমনকি বাংলাদেশেও এখন জোড়াতালির এই নকশায় মেতে উঠেছেন ফ্যাশনপ্রেমীরা।

    প্যাচওয়ার্কের প্যাটার্ন যেমন হয়ঃ

    প্যাচওয়ার্ক করার সময় কাপড় টুকরো করে নেওয়ার সময় প্যাটার্নে ভিন্নতা দেখা যায়। প্যাটার্নগুলো বিভিন্ন ধরনের হয়। যেমন;

    • প্যাচ ব্লক
    • লগ কেবিন ব্লক
    • স্টার ব্লক
    • চারকোণা
    • আয়তাকার
    • ত্রিভুজ
    • স্ট্রিপ শেপড
    • ডায়মন্ড শেপড
    • হেক্সাগণ
    • ক্লামশেলস ইত্যাদি
      এছাড়াও প্যাচওয়ার্কের বেশ কিছু টেমপ্লেট রয়েছে, যেগুলো ব্যবহার করেও নকশা করতে দেখা যায়।

    যেভাবে করা হয় প্যাচওয়ার্কের কাজঃ

    অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও সময়সাপেক্ষ এই প্যাচওয়ার্কের কাজটি মনোযোগী ও দক্ষ কারিগরদের দিয়ে করানো হয়। এখন অবশ্য অনেকেই মেশিন ও ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করেই সারছেন এই কাজ। প্যাচওয়ার্ক করার জন্য –

    ০১) প্রথমেই কোন কোন কাপড়ের টুকরো ব্যবহার করা হবে তা বেছে নিতে হবে। পুরোনো কাপড় ব্যবহার একদমই আবশ্যিক নয়। তবে অষ্টাদশ শতাব্দীতে যখন প্যাচওয়ার্ক করা হতো, তখন ব্যবহৃত হয়েছিল পুরোনো কাপড়। সেক্ষেত্রে খুঁজে নিতে হবে ঠিক কোন কোন পোশাক আর পরা হবে না সেগুলো।

    ০২) কাপড় নির্বাচন করার পর নির্বাচিত কাপড়টি ধুয়ে নিতে হবে।

    ০৩) তারপর পছন্দমতো আকৃতিতে কেটে নিতে হবে কাপড়গুলো। কাপড় কাটার সময় মাপ দেওয়ার জন্য মেজারমেন্ট টেপ অথবা স্কেল ব্যবহার করা যায়।

    ০৪) এরপর পাশাপাশি সেলাই করে একটি কাপড়ের সঙ্গে একটি কাপড় জুড়ে দিতে হবে।

    ০৫) কাপড় সেলাইয়ের ক্ষেত্রে চেইন স্টিচ, স্ট্রিপি পিসিং, দুটি ট্রায়াঙ্গল ইউনিট একত্রীকরণ, সমারসেট টেকনিক, রিভার্সিবল প্যাচওয়ার্ক, সেমিনোল প্যাচওয়ার্ক ইত্যাদি পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়।

    ০৬) সেলাই এর জন্য রঙিন ও বিপরীতধর্মী বা কন্ট্রাস্ট রঙের সুতা বেছে নিলে সেলাই উজ্জ্বল হয়ে ফুটে থাকবে।

    ০৭) সবশেষে কাপড় জোড়া লাগানো শেষ হলে পুরো কাপড়টি এবার আয়রন করে নিতে হবে। এতে করে টানটান এবং দৃষ্টিনন্দন হয়ে ফুটে থাকবে প্যাচওয়ার্ক করা কাপড়টি।

    প্যাচওয়ার্ক করার জন্য যে শুধু সুতি, লিনেন, সিল্কের কাপড় ম্যাটেরিয়াল হিসেবে ব্যবহৃত হবে ব্যাপারটা এমন নয়। পশমিনা, ভেলভেট, জুট, লেদারসহ যেকোনো কাপড়ই প্যাচওয়ার্কে ব্যবহার করা যায়।

    ফ্যাশনে প্যাচওয়ার্কঃ

    বাংলার সংস্কৃতিতে প্যাচওয়ার্ক আদি ও অকৃত্রিম। কেননা বাউল ফকিরদের কথা মনে করলে দেখা যায় পোশাকের ফুটোফাটা ঢাকতেই নকশাদার কাপড় দিয়ে তাপ্পি দিতেন তারা। এই তাপ্পির স্টাইলই পরবর্তীকালে বিশ্বের তাবড় ফ্যাশন ডিজাইনাররা আপন করে নিয়েছেন। ভিন্নধর্মী এই স্টাইলে এখন পাওয়া যাচ্ছে ;

    • শাড়ি
    • ব্লাউজ
    • টপ
    • স্কার্ট
    • স্কার্ফ
    • হুডি
    • কোটি
    • শাল
    • শ্রাগ
    • পাঞ্জাবি-পায়জামা
    • ফতুয়া
    • ট্রাউজার
    • জিন্স
    • প্যান্ট
    • ব্যাগ
    • জুতো
    • কাঁথা
    • বিছানার চাদর
    • কুশন কভার
    • টেবিল ম্যাট ইত্যাদি।

    ফ্যাশন দুনিয়ায় জায়গা করে নিতে প্যাচওয়ার্কের সময় লেগেছিল ঠিকই, কিন্তু জায়গা করে নেওয়ার পরে এই আর্টফর্ম তার আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে তুমুলভাবে।

    শেষ কথাঃ

    ফাস্ট ফ্যাশনে কেনাকাটার তালিকায় পোশাকের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। কারণ নানারকম অপশনের ভিড়ে একই কাপড় বহুদিন ব্যবহারের আগ্রহ হারাচ্ছেন ফ্যাশন সচেতনরা। ফ্যাশন বর্জ্য তাই এখন চিন্তার বিষয়। প্যাচওয়ার্কের মাধ্যমে এক্ষেত্রে শক্তিশালী ইতিবাচক ভূমিকা রাখা সম্ভব। নতুন করে ব্যবহার করা যায় বাতিলের খাতায় তুলে রাখা পোশাকগুলো। নিয়ন্ত্রণ করা যায় ফ্যাশন বর্জ্য।

    সাম্প্রতিক সময়ে প্যাচওয়ার্ক এতোটা জনপ্রিয় হওয়ার একটি অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় যে, পৃথিবী সাসটেইনেবল ফ্যাশনের মর্ম বুঝেছে। তাই বলা যায় ফ্যাশন বর্জ্য থেকে পৃথিবী সুরক্ষিত রাখতে প্যাচওয়ার্ক বা সাসটেইনেবল ফ্যাশন টিকিয়ে রাখা আমাদের দায়িত্ব।

    তথ্যসূত্রঃ
    Prothomalo.com
    Samakal.com
    Canvasmagazine.com.bd
    Anandabazar.com

    লেখিকাঃ
    আছিয়া আক্তার
    ২য় বর্ষ, ব্যাচ-২৪
    বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়নশিল্প বিভাগ
    বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ।

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments