Friday, March 29, 2024
More
    HomeMotivationalপ্লাস্টিক: পরিবেশের অভিশাপ, টেক্সটাইল এর আশীর্বাদ

    প্লাস্টিক: পরিবেশের অভিশাপ, টেক্সটাইল এর আশীর্বাদ

    একদিন একটা মেয়ে গ্রাম দেখতে গিয়ে দেখে সেখানের মহিলারা খুব সুন্দর কাঁথা সেলাই করছে।এমন সময় তার চোখে কিছু কাপড় পড়ল যা তার নিজ বাড়ির পুরাতন কাপড় ছিল। আর অনেকগুলো পুরনো কাপড় দিয়ে তারা কাঁথা তৈরি করছিল।তখন মেয়েটি বুঝতে পারল, একজনের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে তার অর্থ এই নয় যে সেই বস্তুর প্রয়োজন  ফুরিয়ে গেছে।একজনের  কাছে কোনো বস্তু মূল্যহীন হলেও অন্যজনের কাছে তা মূল্যবান।

    আজকের আর্টিকেলে আমরা রি-সাইকেল নিয়ে কথা বলব। বর্তমানে এই শব্দ ব্যাপক ভাবে সারা ফেলেছে। আর টেক্সটাইলও কোনো অংশে পিছিয়ে নেই।বর্তমানের সাথে তাল মিলিয়ে এবং প্রকৃতির অবস্থা বিবেচনা করে টেক্সটাইলও এগিয়ে চলেছে তার নিজ দিগন্তের দিকে।পৃথিবীর উন্নতির লক্ষ্যে  নিজের অবদান রেখে চলেছে এবং উন্নত প্রযুক্তি তৈরি করছে সাথে ব্যবহার করছে। 
    প্রকৃতির খনিজ সম্পদের মধ্যে একটা সম্পদ হচ্ছে পেট্রলিয়াম।দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে আস্তে আস্তে তা ফুরিয়ে যাচ্ছে।পেট্রলিয়াম থেকে তৈরি হচ্ছে প্লাস্টিক নামক পদার্থ,যা খুব চিরপরিচিত আমাদের সবার কাছে।প্লাস্টিক আমাদের জীবনের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জরিত।ঘুম থেকে জাগবার পর থেকে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমারা কোনো না কোনোভাবে প্লাস্টিক ব্যবহার করে থাকি।আমাদের জীবনের বড় একটা অংশ নিয়ে প্লাস্টিক রয়েছে।এত প্রয়োজন মেটানোর পর দিন শেষে প্লাস্টিক আমাদের পরিবেশের জন্য বিষ হিসাবে গন্য হয়।কারণ প্রত্যেক বস্তুর ভালো খারাপ ২দিক থাকে।প্লাস্টিক পরিবেশবান্ধব নয়।একারণে পরিবেশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। 
    আমরা আগে কিছু তথ্য জেনে নেই-১৮৬৩ সালে,জন ওয়াজলি হাইড নামে একজন প্লাস্টিক সাথে ১ম পরিচয় করিয়ে দেন অর্থাৎ পদার্থটি আবিষ্কার করেন।১৯৯৩সাল থেকে পলি-ইথিলিন ব্যবহার হচ্ছে আর তা আজ পর্যন্ত ব্যবহার চলে যাচ্ছে।২য় বিশ্বযুদ্ধে প্লাস্টিক নিত্যনতুন এবং বেশি ব্যবহার দেখা যায়।দিনদিন এর ব্যবহার বেড়ে  যাচ্ছে।২০০৭সালে ২৬০ মিলিয়ন মেট্রিকটন এবং ২০১৭সাল পর্যন্ত ৪০০ মিলিয়ন মেট্রিকটন প্লাস্টিক ব্যবহার হয়েছে।


    ★আমরা কোথাও গেলে পানির বোতল কিনে পান করি,তারপর সেই বোতল ফেলে দেই।কখনো ভেবে দেখেছি কি এতে পরিবেশের কত ক্ষতি আমরা করলাম।না,এত ভাবার সময় কই।খালি বলব এখানের পরিবেশ ভালো না,কিন্তু নিজে সচেতন হবনা।এমন ভাবে পরিবেশে প্লাস্টিকের পরিমান বাড়ছে যা প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করছে।আপনি যদি পানির বোতল না কিনে বাড়ির থেকে পানির বোতল নিয়ে ঘোরাঘুরি করেন তাইলে প্রকৃতির সুন্দর রাখতে একটা অবদান আপনারও থাকবে।এতে ব্যবহারকৃত প্লাস্টিকের পরিমান কিছুটা কমবে।
    আমরা অনেকক্ষণ ধরে বলছি প্লাস্টিক প্রকৃতির নানা ক্ষতি  করে,আসুন জেনে নেই যে যে উপাদানের এবং যেভাবে ক্ষতি  করে-


    মাটি দূষণ ;      প্লাস্টিক মাটির উর্বরতা নষ্ট করে।উদ্ভিদ জন্মাতে পারেনা।মাটিতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয় এবং পুষ্টি, গুনাগুন শোষণ করে নেই এতে মাটি দূষণ হয়। পানি দূষণ ;        প্লাস্টিকের ওপর বৃষ্টি হলে তাতে রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়ে ক্ষতিকর টক্সিন Leachate তৈরি হয় যা নদীর বা জলাশয়ের পানিতে মিশে পানি দূষণ করে।এতে পানিতে বসবাসকারী জীবনেরও মারাত্মক ক্ষতি হয়।  

      বায়ু দূষণ ;       প্লাস্টিক পুড়ানো হলে তার থেকে ক্ষতিকর মৌলিক পদার্থ বায়ুতে মিশে বায়ু দূষণ করে।এতে পরিবেশের প্রচুর ক্ষতি করে।


    খাদ্য শৃংখলা নষ্ট ;        এই প্লাস্টিক শেষ পর্যায়ে ল্যান্ডফিল্ড বা উপসাগড়ে নিষ্পত্তি করা হয় এবং নানা দূর্যোগের,মানুষের কারনে তা নদী, সমুদ্রে যায় এতে এগুলো মাছে খাদ্য হয়।ছোট মাছ খায়,ছোট মাছকে বড় মাছ খায়,আর বড় মাছ মানুষ খায়।এভাবে প্লাস্টিক আমাদের খাদ্য শৃংখলে প্রবেশ করে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। ইত্যাদি।    

      প্লাস্টিকের সবচেয়ে ক্ষতিকর গুন হচ্ছে এরা মাটিতে মিশতে কমে ৭০০ বছর বা তার থেকে বেশি সময় লাগে বিধায় পরিবেশের বছরের পর বছর পড়ে স্তুপাকার হচ্ছে।প্লাস্টিকের ব্যবহার যখন শুরু হয়, সাথে সাথে মানুষের মনে এবং জীবনে জায়গা করে নেই।কাঠের ফার্নিচারের থেকে শুরু করে অন্যান্য উপাদানের তৈরি বস্তুর স্থান নেয় প্লাস্টিকের জিনিসপত্র। দামে কম অর্থাৎ সস্তা হওয়ায়, ওজন কম হওয়ায় সহজে আনা নেওয়া করা যায়, মজবুত,আরামদায়ক হয়,নানা রঙের এবং আকর্ষণিয় হওয়ায় অল্পতেই মানুষের নজর কেড়ে নিয়েছে।কিন্তু যেহেতু প্লাস্টিক পরিবেশবান্ধব নয়।তাই পরিবেশে যে পরিমান প্লাস্টিক থাকার কথা তার থেকে বেশি আছে এবং দিন দিন এর পরিমান বেড়েই চলেছে।আর এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য আমাদের বিকল্প পরিকল্পনার প্রয়োজন, আর সেই বিকল্প পরিকল্পনা হচ্ছে রিসাইকেলিং।কমে ৭০০ বছর লাগবে প্লাস্টিককে মাটিতে মিশতে তাই আমরা যত পারি এদের ব্যবহারের পর পুনরুদ্ধার চালিয়ে যেতে হবে।

    ★রিসাইকেল অর্থাৎ কোনো বস্তুকে বারবার ব্যবহারযোগ্য বা পুনরুদ্ধার হিসাবে গড়ে তোলা।

    ★এবার আমরা জেনে নেই টেক্সটাইল শিল্প পুনরুদ্ধারে যেভাবে অবদান রাখছে;
    ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বা প্লাস্টিকের বোতল থেকে টেক্সটাইল শিল্প নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টেক্সটাইল ফাইবার তৈরি করছে।এবং তা থেকে পোষাক তৈরি হচ্ছে। মানসম্পন্ন,আরামদায়ক,এবং সবার কাছে গ্রহণ যোগ্যতা পেয়েছে।আর এই পোশাককে গ্রিন-ক্লোথিং বা সবুজ পোশাক বলে।
    ★সবুজ পোশাক বলতে এমন পোশাক বোঝায় যা হেম্প,বাঁশ,পুনরুদ্ধারকৃত বোতল থেকে প্রাপ্ত পোশাক।

    ★২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত নিউইয়র্ক ফ্যাশান সপ্তাহে ভেন্ডিং মেশিন চালু করা হয় বা জনগনের জন্য উন্মুক্ত করে একটা অভিনব ধারনা দেন।যেখানে আপনি একটা বোতলের মূল্যে একটি ডিজাইনার টি-শার্ট পাবেন।অর্থাৎ পুনরুদ্ধারকৃত প্লাস্টিক ফেব্রিক থেকে তৈরি ডিজাইনার টি-শার্টের সীমিত সংস্করণ ক্রয় করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।যার মূল্য ১টি বোতলের মূল্যের সমান।

    ★সব থেকে বড় এবং অবাক করা কথা,
    Nine World Cup Teams তাদের জার্সি তৈরি করা হয়েছিল রিসাইকেলিং থেকে অর্থাৎ পুনরুদ্ধারকৃত বোতল থেকে।যুক্তরাষ্ট এবং ব্রাজিল দলের সম্পূর্ণ পোশাক প্লাস্টিক বোতল থেকে তৈরি ছিল। এখন নানা ফ্যাশান সপ্তাহে মানুষদের সচেতন করার জন্য ডিজাইনাররা তাদের মূল বিষয়বস্তু রাখে প্লাস্টিকের তৈরি বস্তু। প্লাস্টিক থেকে তৈরি পলি এস্টার ফেব্রিকের তৈরি একটা সাদা সুট,”জন ট্রাভোল্ট” নামে এক অভিনেতা পড়েছিলেন, তার মুভি “Saturday Night Fever”।আর সে সুট বিক্রি হয়েছিল ৳৯৩০০০।আমরা প্লাস্টিক থেকে পলিএস্টার পাচ্ছি যা থেকে জিন্স, শার্ট, কোট,টিশার্ট ইত্যাদি তৈরি হচ্ছে।

    ★৫টা বোতল দিয়ে আমরা একটা জিন্স পাই।আমরা একবার যদি ভেবে দেখি তাইলে আমরা বুঝতে পারব আমরা একটা জিন্স না সাথে আরো কিছু জিনিস পাচ্ছি। জানতে চান কিভাবে? রিসাইকেলিং এর মাধ্যমে। যেমন,ফেলে দেওয়া বোতল থেকে জিন্স, অপ্রয়োজনীয় জিন্স থেকে কোটি বা ব্যাগ বা পাপোষ বা সাথে অন্যান্য জিনিস বানাতে পারেন এবং ব্যবহার করতে পারেন এতে আমাদের সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পাবে,পরিবেশ সুন্দর থাকবে,টাকা অপচয় কম হবে,দক্ষতা বাড়বে ইত্যাদি।
    এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি কোনো অপ্রয়োজনীয় বস্তুকে ফেলে দেওয়া আগে একটু ভেবে দেখেন তা আপনার অন্যভাবে কাজে লাগানো যায় কি-না।আর এভাবে আমি-আপনি সুস্থ সুন্দর পরিবেশ গড়তে সাহায্য করতে পারি।
    ★আমরা পলিথিন এর বদলে পাটের,কাপড়ের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার করি এবং সচেতন হই।পলিথিন থেকে দুরে থাকি আর টেক্সটাইলের পাশে থাকি।প্রাকৃতিক সম্পদকে প্রয়োজন এবং পরিবেশবান্ধব বস্তু ব্যবহার করি।পাটকে সোনালি আশ বলে।পাটজাত দ্রব্যকে প্রাধান্য দিয়ে দেশ ও প্রকৃতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখি।জানি প্লাস্টিককে পুরোপুরি বাদ দেওয়া যাবে না।কিন্তু আমরা সচেতন হলে কমানো সম্ভব।আর রিসাইকেলিং এর মাধ্যমে কাচামাল,শক্তি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার হ্রাস করা সম্ভব। এতে কার্বন নিঃসরন যথেষ্ট হ্রাস পাবে।টেক্সটাইলের রিসাইকেলিং এর ফলে নতুন কাচামাল থেকে পোষাক তৈরি করতে ৩০% শক্তি সঞ্চয় হয়।এভাবে পৃথিবীকে সুন্দর রাখা সম্ভব হবে এবং আমরা সবাই নিজ নিজ স্হানে থেকে অবদান রাখতে পারব।
    ★কথায় আছে ভালো কাজ নিজ থেকে শুরু করতে হয়।নিজে সচেতন হব অন্যকে সচেতন করব।

    তথ্য সুত্র: Wikipedia, youtube, textile Journal,Textbook chemistry(cls11-12)

    লেখিকা:
    মনিরা মওলা
    টিম মেম্বার, TES
    Dr. M A Wazed Miah Textile Engineering College

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments