Friday, April 26, 2024
More
    HomeLife Style & Fashionপৃথিবীর সবথেকে লাক্সারিয়াস ফেব্রিকঃ পর্ব-০১

    পৃথিবীর সবথেকে লাক্সারিয়াস ফেব্রিকঃ পর্ব-০১

    পৃথিবীর সবথেকে লাক্সারিয়াস পোশাকটির দাম কত হতে পারে চিন্তা করে দেখেছেন কি কখনো??
    আচ্ছা, আমি ই বলে দেই! এক্সপেনসিভ এবং রেয়ার একটি ফেব্রিক রয়েছে যেটি থেকে প্রস্তুতকৃত একেকটি কোটের মূল্য ২১,০০০ ডলারেরও অধিক। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকার সমান!!

    এতক্ষণে সকলের মাথায় হয়ত নামীদামী কোনো ব্র‍্যান্ড বা বিখ্যাত কোনো কাপড় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম মাথায় আসছে! তবে না, নামীদামী কোনো ফ্যাশন ব্র‍্যান্ড নয়, আদিকাল থেকে ব্যবহৃত একটি ফেব্রিক থেকে উৎপন্ন হয় বিশ্বের অন্যতম দামী পোশাক। আজকে আমরা এটি নিয়েই জানবো….

    বিশ্বের সবথেকে দামী,উষ্ণ ও আরামদায়ক কাপড় উৎপাদিত হয় “ভিকুনা (Vicuna)” নামক এক দূর্লভ প্রজাতির পশুর পশম থেকে। একইরকম আরেক প্রজাতির এক প্রাণী রয়েছে যার পশম থেকে উৎপাদিত পোশাকও অনেক দামী এবং মানসম্মত। সেটি হচ্ছে কাশ্মীরি ছাগল,যার পশম থেকে তৈরী করা হয় “কাশ্মীরি শাল”। তবে “Finest Natural Fiber” ভিকুনার পশম থেকে উৎপাদিত পোশাক কাশ্মীরি শালের থেকেও বহুগুণে দামী ও পরিধানে আরামদায়ক।

    ▪”ভিকুনা”র সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ

    ভিকুনার সায়েন্টিফিক নাম “Vicugna vicugna” বলে পরিচিত। ‘Auquenidos’ এর চার প্রজাতির মধ্যে ভিকুনা অন্যতম। এদের দুটি প্রজাতি: ‘The Alpaca’ এবং ‘The Ilama’ সাধারণত গৃহপালিত হয় আর অন্যদুটি প্রজাতি ‘The Guanaco’ এবং ‘The Vicuna’ সাধারণ বন্যপ্রজাতির হয়ে থাকে।
    দূর্লভ এই প্রাণিটির সন্ধান পাওয়া যায় দক্ষিন আমেরিকার গুটিকয়েক দেশে। সাধারণত চিলির অ্যান্ডিস আলটিপ্লানো পর্বতে এসকল প্রানীর বিচরন রয়েছে। ছোট দৈহিক গঠন ও মায়াবী গড়নের হয়ে থাকে নিরীহ এই প্রাণিটি। এর দেহের উপরিভাগ কমলা এবং নিচের অংশ সাদা পশম দ্বারা আবৃত থাকে। এদের ওজন ৩৫-৬৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং এরা ঘন্টায় ৪৫ কিঃমিঃ গতিবেগ সম্পন্ন। দিনের বেলায় এদের দেহ সূর্য থেকে তাপ সংরক্ষণ করে রাখে যা রাতের অত্যন্ত ঠান্ডা আবহাওয়ায়ও এদের সমস্যা করতে পারেনা। তাই তো সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০,০০০-১৫,০০০ ফুট উঁচু পর্বতভূমিতে এরা অনায়াসেই বসবাস করতে পারে।এদের কে মূলত চিলি,আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া ও পেরুতে বসবাস করতে দেখা যায়। এরা সাধারণত ২০-২৫ বছর বেচে থাকে।

    ▪লাক্সারিয়াস ফেব্রিক হবার কারনঃ

    ভিকুনার পশম দিয়ে তৈরি একেকটি কোটের মূল্য ২১,০০০ ডলারেরও অধিক। এটিকে বাংলাদেশি টাকায় রূপান্তর করলে এর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকার সমান। 
    এই ফেব্রিকটি এতই দামী, যার থেকে তৈরী একজোড়া মোজার দাম ১০০০ ডলার এবং স্যুটের দাম প্রায় ২৪,০০০ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে। 
    ভিকুনার পশম দিয়ে তৈরি একেকটি মাফলারের দাম গড়ে ৪,০০০ ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকার সমান। ভিকুনার পশম দিয়ে তৈরিকৃত পোশাকের ফিনিশিং এতটাই মসৃণ হয় যে, এর চেয়ে অভিজাত পোশাক আর কোনো উল দ্বারা তৈরি করা সম্ভব হয় না। একটি ওভারকোট তৈরীর জন্য প্রায় ২৫-৩০ টি ভিকুনার পশমের প্রয়োজন হয়। প্রতি কেজি ভিকুনা উল, কাশ্মীরি উলের চেয়ে প্রায় ছয়গুণ মানসম্মত।

    পৃথিবীর সবথেকে দামি পোশাক হবার পেছনের মূল কারন হচ্ছে ভিকুন অনেক দূর্লভ প্রজাতির প্রানী। তাছাড়াও,ভিকুনার দেহ থেকে বছরে মাত্র এক পাউন্ড পরিমান পশম উৎপন্ন হয়। প্রতি তিন বছর পর পর এর শরীর থেকে সামান্য পরিমানে পশম সংগ্রহ করা হয়। এদের দূর্লভতার আরেকটি কারন হচ্ছে এরা গৃহপালিত নয়। এরা সাধারণত পর্বতাঞ্চলে বিচরন করব বেড়ায় এবং প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে। তাই এদের ফার্মিংও করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা।

    মূলত এর পশম পাওয়া মহাদূর্লভ ও কষ্টসাধ্য হওয়ায় এবং প্রস্তুতকৃত ফেব্রিকটি অত্যধিক মানসম্মত ও ফ্লেক্সিবল হওয়ায় এটি সবথেকে দামী একটি ফেব্রিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। একে “Fabric of the God’s” নামে আখ্যায়িত করা হয়।

    ▪ফেব্রিকটির বৈশিষ্ট্যঃ

    ♦এটি বেশ উষ্ণ ফেব্রিক। 
    ♦”Hypoallergenic” বৈশিষ্ট্য দেখায়। 
    ♦এটি ন্যাচারালি সফট। 
    ♦অন্যান্য ফেব্রিকের মত খসখসে নয়।
    ♦”Dyed fabrics” এর মত পরিবেশের কোনো
    ক্ষতি করেনা
    ♦ফেব্রিকটি Natural, Sustainable এবং 
    Bio- degradable বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।
    ♦মানুষের চুলের চেয়ে আটগুণ পাতলা ফেব্রিক।
    ♦এর থেকে তৈরী পোশাক অনেক আরামদায়ক। 

    ▪”Vicuna” থেকে উৎপাদিত পোশাকঃ

    🔸ওভারকোট
    🔸স্যুট-কোট
    🔸সোয়েটার
    🔸শাল
    🔸মাফলার
    🔸হ্যাট
    🔸নীটওয়্যার 
    ভেকুনা ফেব্রিক থেকে সাধারণত এসকল পোশাক প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। 

    সবথেকে দামি এই ফেব্রিকটি যুগ যুগ ধরে আভিজাত্যের পরিচায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রয়্যাল ফ্যামিলির লোকজন তৎকালীন সময়ে এই পোশাক ব্যবহার করত। 
    উত্তম ব্যবহারের ফলে এটি সম্ভাবনাময়ী একটি শিল্প হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারে সমগ্র বিশ্বে।

    চমকপ্রদ কিছু অংশ বাকি থাকছে।সেই অংশগুলো নিয়েই হাজির হব দ্বিতীয় পর্বে…… 

    Source: RoarMedia,Culture Trip, Magazine Horse, Business Of Fashion

    Writer Information:
    Md Rashid
    B.Sc in Textile Engineering
    Research Assistant
    Textile Engineers Society 
    Dr. M A Wazed Miah Textile Engineering College.

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments