ওয়াইন থেকে পোশাক

0
368

🖋 সভ্যতা বিকাশের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে পোশাক। তাছাড়া আমাদের সন্মান, ব্যক্তিত্ব ও রুচিশীলতা প্রকাশের অন্যতম মাধ্যমও, সেই মৌলিক চাহিদার দ্বিতীয় স্থানরত খাত বস্ত্র অর্থাৎ পোশাক। আর সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে আমাদের পরিধানের উদ্দেশ্যও পরিবর্তন হচ্ছে। আমরা কি কখনও কল্পনা করেছি যে হার্ডড্রিংক অর্থাৎ ওয়াইন!! থেকে পোশাক তৈরি হবে? সব জল্পনা – কল্পনা অবসান ঘটিয়ে বিজ্ঞানী ও ফ্যাশন ডিজাইনাররা এমন ধরনেরই পোশাক তৈরি করেছেন। বিস্ময়কর! হলেও এটাই সত্য। সমস্ত বিশ্বে ওয়াইন সবচেয়ে বেশি চাহিদাপূর্ণ ড্রিংক তাতে তো কোন সন্দেহ নেই? সেই ওয়াইন এখন শুধুই পানীয়র বিষয় নয়, এখন পরিধানেরও বিষয় বস্তু !!!

🖋 অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্নের বিজ্ঞানী ডোনা ফ্রাঙ্কলিন ও ফ্যাশন ডিজাইনার গ্যারি কেস দীর্ঘ ৮ বছর গবেষণার পর ফার্মেন্টেশন করা  বিয়ার থেকে সফলভাবে পোশাক তৈরি করে দেখিয়েছেন।এই গবেষণার কাজটি পরিচলনা করা হয় অস্ট্রেলিয়ার পার্থ অঙ্গরাজ্যের ছোট্ট শহরতলী নলমারাতে।

🖋 হার্ডড্রিংক অর্থাৎ ওয়াইন থেকে ফেব্রিক তৈরিতে মূল্যবান ভুমিকা পালন করে থাকে এক ধরনের বিশেষ প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া। এই বিশেষ প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার নাম হচ্ছে অ্যাসিটো ব্যাকটেরিয়া/এসিটোব্যাক্টর। প্রথমে বিয়ার/ওয়াইনকে ভ্যাট ডাইয়ের মধ্যে রাখা হয় এবং তাতে অ্যাসিটো ব্যাকটেরিয়া যোগ করা হয়। অ্যাসিটো ব্যাকটেরিয়া/এসিটোব্যাক্টার যোগের ফলে ভ্যাট ডাইয়ের দ্রবণটি ভিনেগারের মত পরিবর্তিত হতে থাকে। যার মধ্যে বিয়ারের সাথে বিক্রিয়া করে ওপরে এক ধরনের স্তর পড়ে যা রাসায়নিকভাবে তুলার মত ফেব্রিক দিতে সক্ষম হয়। আর এই প্রক্রিয়াকে গাঁজন প্রক্রিয়াও বলা হয়ে থাকে।

🖋এই ফেব্রিকের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এতে কোন ধরনের সেলাইয়ের দেখা পাওয়া যায় না। মানব দেহের আদর্শ মাপ নিয়ে, সেই আদর্শ মাপ অনুসারে ডামি (মূর্তি) তৈরি করে। তার ওপর ফেব্রিক তৈরির ঘন দ্রবণটিকে ডামির গায়ে বিছিয়ে দেওয়া হয়। এরপরে শুকানোর ব্যবস্থা করা হয়। শুকানো হয়ে গেলে সেটি অনেকটা টিস্যু পেপারের মত দেখা যায়। ফেব্রিকটা যেন সহজে ছিঁড়ে না যায় সেই জন্য পরিধানের পূর্বে কিছু সময় ধরে ভিজিয়ে রাখা হয়।

🖋 ২০০৭ সালের দিকে তারা পরিকল্পনা করেন এবং ২০১৪ সালে সমস্ত বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়ে তার বাস্তবরূপ প্রদান করেন। সফল ভাবে ওয়াইন/বিয়ার থেকে কাপড় তৈরি করতে সক্ষম হন। সেইসাথে তারা জানিয়েছেন বিয়ার ও ওয়াইন তৈরির কারখানা থেকে যে বর্জ্য নিষ্কাশিত হয় সেইগুলোকে কাজে লাগিয়ে এই ফেব্রিক তৈরি করা সম্ভব। বলতেই হয় নিঃসন্দেহে আবিষ্কার এক অনন্য কৃতিত্ব। সেই ৮,৮৪৮ মিটার (২৯,০২৯ ফুট) মাউন্ট এভারেস্ট জয় করার চেয়েও অনেক কিছু !!!!

রেফারেন্স: টেক্সটাইল ম্যানিয়া

🖊 লেখক:
মোঃ সন্ধান কবির
পবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার কলেজ,পাবনা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here