Saturday, April 20, 2024
More
    HomeTextile Exihibitionটেক্সলাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর আদ্যোপান্ত

    টেক্সলাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর আদ্যোপান্ত

    • প্রাথমিক ধারনা:
      বর্তমান বিশ্ব প্রযুক্তি নির্ভর এক বিশ্ব। যেখানে প্রতিটা পদক্ষেপ এ প্রয়োজন প্রযুক্তির। সেখানে নিশ্চয়ই প্রযুক্তি ও প্রকৌশল এর ছোয়া থেকে কেউ দূরে থাকতে চাইবে না। এরই ধারাবাহিকতায় চর্কায় সুতো কাটার পদ্ধতি আজ পরিণত হয়েছে স্পিনিং পদ্ধতি তে, তাঁত পদ্ধতি আজ পরিণত হয়েছে আধুনিক সব কাপড় তৈরির মেশিনে। একসময় মানুষ তাঁতে বুনে কাপড় তৈরি করতো, কিন্তু বর্তমানে আর তাতে কাপড় তৈরি করে চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না কিংবা যাবেও না। সময়ই মানুষকে প্রযুক্তি নির্ভর করতে বাধ্যা করেছে। তাই মানুষ সাহায্য নিচ্ছে যন্ত্রের। তাই আমরা সহজ ভাবে বলতে পারি সুতা থেকে পোশাক বানানোর প্রযুক্তিনির্ভর পুরো প্রক্রিয়াটিই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং / বস্ত্র কৌশলের বিষয়। সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম আঁশ থেকে সুতা, বস্ত্র এবং নানা রঙের মিশ্রনে অনেক কম সময়ে অনেক বেশি উপযোগী জিনিস বানানোর যে প্রযুক্তি সহসভাবে সেটিই হলো টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং । টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বর্তমান সময়ের অনেকের কাছেই একটি পছন্দনীয় সেই সাথে আকর্ষণীয় বিষয় এবং একটু খেয়াল করলেই বোঝা যাবে যে, বেশ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী বর্তমানে এই বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে নতুন কিছু উদ্ভাবনের জন্য আগ্রহী।

    • *টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর শাখাসমূহ:
      টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কথাটি শুনলে মনে হতে পারে এটি একটি শাখাতেই বিস্তৃত। কিন্তু বাস্তবে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং মূলত ৪ টি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ার সমন্বয়।
      *প্রক্রিয়াগুলো হলঃ
      *ইয়ার্ন ম্যনুফ্যাকচারিং বা স্পিনিং : প্রাথমিক একটি ধাপ হলো এটি। পরিধানকৃত পোশাক এর মূল উপাদান হল সুতা। মাঠ পর্যায় থেকে প্রাপ্ত ফাইবার/আশ মাম্পন্ন সুতা তৈরী তা থেকে ফ্যাশনেবল পোশাক বা যেকোন ধরনের গার্মেন্টস প্রডাক্ট তৈরী করা যায় সেটা নিয়ে বিশদভাবে কাজ করা হয় ।
      *ফেব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং বা নিটিং : এটি মূলত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। প্রাপ্ত সূতা থেকে কাপড় তৈরীর কাজ করা হয় এবং কিছু অত্যাবশ্যকীয় সেই সাথে জটিল ধাপ অতিক্রম করে মানসম্মত কাপড় তৈরী করাই এ ধাপের প্রধাম উদ্দেশ্য।
      *ওয়েট প্রসেসিং বা ডাইং : ডাইং অর্থাৎ এই ধাপে পূর্বের ধাপ থেকে প্রাপ্ত কাপড় কে পছন্দনীয় এবং প্রয়োজনীয় রং দেয়া হয় এবং অত্যন্তু নিখুতভাবে কাজটি করা হয় যেন কাপড় এর সাথে রঙ এর যে মিশেল সেটা অত্যন্ত টেকসই এবং গুনসম্পন্ন হয়। এই ধাপপুরোটাই মূলত রাসায়নিক প্রযুক্তি নির্ভর বলে এই ধাপেকে অন্য ভাবে টেক্সটাইল কেমিস্ট্রিও বলা হয়।
      *গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং: উপরোক্ত তিনটি ধাপ অতিক্রম করে এই ধাপে যখন আসে কাপড় তখন এখানে মুলত SAMPLING , FABRIC SPREADING , CUTTING , SEWING, WASHING এবং প্রোয়জনে আরো কিছু কাজ করা হয়। আমাদের দৈনন্দিনের ব্যবহৃত পোশাক ,সেটার কাপড় থেকে পুরো ফিনিশিং প্রসেস পর্যন্ত ধাপগুলো সম্পন্ন করাই গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং এর অন্তর্ভূক্ত।
      এখন শুধু পোশাক বানিয়ে বসে থাকলে হবে না বরং এর জন্য দরকার ব্রান্ডিং এবং আমদের তৈরী পোশাককে বিদেশের মাটিতে উপস্থাপন করা। এই তৈরি পোশাককে ফ্যাশনেবল করা এবং একটি সুন্দর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যথাযথ সময়ের মধ্যে রপ্তানী করার জন্য টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর মধ্যে পড়ে।
      আসুন আরো কিছু দিক সম্পর্কে জানি এবার,
      *ফ্যাশন ডিজাইনিং: পরিধেয় পোশাককে ফ্যাসনেবল,যুগোপযোগী, ব্যবহারের সুবিধা সহ ডিজাইনিং করে দেশীয় বাজার,বিশ্ববাজার এবং মানুষের কাছে আকর্শনীয় করে তোলাই এই শাখার কাজ।
    • ম্যানেজমেন্ট: পুরো টেক্সটাইল প্রসেস সম্পন্ন করার পর সেটাকে সম্পূর্ন নিরাপদে ক্রেতার কাছে পৌছে দেবার মধ্যবর্তী সময়ে যে ধাপ গুলা অতিক্রম করতে হয় সেই ধাপ গুলোই এই বিভাগের উপজীব্য বিষয় সেই সাথে রপ্তানী বাজার নিয়ন্ত্রন করাও এই বিভাগের কাজ। উৎপাদন প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান, গুণমান নিয়ন্ত্রণ, জায় প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ, বিপণন প্রক্রিয়া সহজ তর,সহ আরও অন্যান্য বিষয়গুলো এই বিভাগের সাথে জড়িত।
      *টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ:
      এবার আমাদের জানা দরকার টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার দের কাজ টা কি। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে সম্পূর্ন ম্যানুফ্যাকচারি
      ং নির্ভর একটি প্রক্রিয়া যেখানে একজন ইঞ্জিনিয়ারকে মেশিন স্থাপনা থেকে শুরু করে প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রন, প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট , গিয়ার মেকানিজম এবং মেইন্টেনেন্স নিয়ে কাজ করতে হয়। স্পিনিং এর জন্য ইঞ্জিনিয়ারদের প্রোগ্রাম ইনপুট দেয়া জানতে হয়। ওয়েট প্রসেসিং ইঞ্জিনিয়ারদের ভালো কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হতে হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে নাসার বিজ্ঞানিরা যারা দীর্ঘদিন যাবত মহাকাশে মানুষ পাঠাতে কাজ করে যাচ্ছেন তারা অসংখ্য টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের গবেষনায় নিযুক্ত করে স্পেস স্যুট এবং ন্যানোফাইবার, কার্বন ফাইবারের শিল্ড তৈরীর জন্য। শুধু তাই নয়, কাপড়ের মান, রংয়ের ধরন, রংয়ের স্থায়িত্ব ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে নিশ্চিত করাও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ। দেশে যেমন অনেক পোশাক কারখানা বা গার্মেন্টস রয়েছে তেমনি রয়েছে অনেক স্পিনিং, উইভিং, নিটিং, নিট ডাইং, ডাইং ফিনিশিং, ইয়ার্ন ডাইং কারখানা এবং এসব কারখানায় সম্পুর্ণ কাজের মান নিয়ন্ত্রণের জন্যও প্রয়োজন একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার এর।
      অর্থনীতিতে টেক্সটাইল শিল্পের যেমন কোন বিকল্প নেই ঠিক তেমনি টেক্সটাইল শিল্প কে টিকিয়ে রাখতে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদেরও বিকল্প নেই। আমাদের সমসাময়িক সমাজে মানুষের কিছু বিরুপ ধারনা রয়েছে টেক্সটাইল সেক্টর নিয়ে। অনেকে আছে যারা শুধু জানে দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানী খাত টেক্সটাইল খাত কিন্তু তারা টেক্সটাইল সেক্টরের লোকদের সঠিক মর্যাদা দিতে নারাজ। জাতি হিসেবে আমরা একটা পেশাকে যত বেশি সম্মান করবো তত বেশি আমরা সেই পেশায় জড়িত সেক্টরে উন্নতি সাধন করতে পারবো তথা দেশের উন্নতি করতে পারবো। টেক্সটাইল সেক্টরের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভংগির যত পরিবর্তন হবে টেক্সটাইল সেক্টর তত বেশি উন্নত হবে। আমরা ঘুরে দাড়িয়েছি সেই সাথে উন্নয়ন করছি টেক্সটাইল সেক্টরের। আমাদের উত্তর উত্তর প্রচেষ্টাই পারে বিশ্ব বাজারে দেশের টেক্সটাইল সেক্টরকে সমৃদ্ধ করে তুলতে।
      তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া
      Batch : 201
      মুনতাসির রহমান
      Department Of Textile Engineering,
      BGMEA UNIVERSITY OF FASHION AND TECHNOLOGY

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    - Advertisment -

    Most Popular

    Recent Comments